সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বাংলাদেশ (Bangladesh) এখন ভয়াবহ মুদ্রা সংকটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। হ্যাঁ, ব্যাঙ্কে গিয়ে নতুন টাকার খোঁজে মানুষ শুধু খালি হাতে ফিরছে। বাজারে ঘুরছে পুরনো, ছেঁড়া নোট। কিন্তু কেন হঠাৎ এরকম পরিস্থিতি? আর এর পিছনে কি কোন রাজনৈতিক কারণ রয়েছে? নাকি শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষয়? জানুন আজকের প্রতিবেদনে।
টাকায় নেই বঙ্গবন্ধুর ছাপ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবথেকে বিতর্কমূলক সিদ্ধান্তগুলির একটি হল – নতুন ছাপানো নোটে শেখ মুজিবুর রহমান ওরফে বঙ্গবন্ধুর কোনও ছবি নেই। হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়াই ব্যাঙ্কে নোট ছাপানো শুধুমাত্র মুদ্রা পরিবর্তন নয়, বরং অবচেতনারও ইঙ্গিত।
গত ডিসেম্বর মাসে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার ঘোষণা করে যে, নতুন টাকায় থাকবে শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থাপত্য, বাঙালি সংস্কৃতির চিত্র এবং জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিক্স। শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনীতির আগুনে যেন আরও ঘি পড়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কেও টানাপোড়েন
এদিকে বছরে প্রায় 150 কোটি নতুন নোট ছাপানোর প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ সরকারের। আর সেই সূত্র ধরে সরকারিভাবে মুদ্রা ছাপানোর কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র 100 কোটি টাকা মতো। এদিকে 2023-24 অর্থবছরে মাত্র 105 কোটি নতুন নোট ছাপানো হয়েছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সুত্রের খবর, আগে যেখানে কোটি কোটি ছাপানো নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে, তা ব্যাঙ্কের লকারে পচছে এখন। প্রাক্তন বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সব নোট একসঙ্গে বাতিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যে নোটগুলি ইতিমধ্যেই ছাপা হয়েছে, সেগুলি বাজারে ছাড়তে হবে।
ছাপানোর কাজ এখনও শুরুই হয়নি
তবে দিনের পর দিন সংকট বাড়ছে। কারণ নতুন নোট ছাপার কাজ নাকি এখনও শুরুই হয়নি। সূত্র বলছে, জুন মাস থেকে ধাপে ধাপে কাজ শুরু হবে। প্রথম ধাপে ছাপা হবে 20 টাকা, 50 টাকা এবং 1000 টাকার নোট। তবে তিনটি নোট একসঙ্গে ছাপাতে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দিতে পারে। তাই এই কাজ ধীরে ধীরে সম্পন্ন হবে।
সাধারণ মানুষ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত
বাংলাদেশের এই মুদ্রা সংকটের মধ্যে বাজারে মুদ্রাস্ফীতি দিনের পর দিন বাড়ছে। চাল-ডালের দাম তো একদম আকাশছোঁয়া। আর টাকার মূল্য দিন দিন কমছে। এর মধ্যে পরিষ্কার এবং উন্নত মানের টাকার অভাব জনসাধারণের উপর আরও বাড়তি চাপ ফেলছে।
সবথেকে বেশি বিপদে পড়ছে যারা নগদ অর্থের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করা হকার, চায়ের দোকানি কিংবা বাসের কন্ডাক্টররা, খুচরা বিক্রেতারা সবথেকে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। অনেকেই তো বাধ্য হয়ে পুরনো বা ছেঁড়া নোট ব্যবহার করছেন। আর এতে নানান রকম বাঁধারও সম্মুখীন হচ্ছেন।