বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) তার রঙচঙে মেজাজ বহু আগেই হারিয়েছে। প্রতিবেশীর সাফল্য যেখানে গগনচুম্বী, সেই পর্বে দাঁড়িয়ে লাল হলুদ ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। ময়দান প্রধান হিসেবে এক সময়ে বাঙালির হৃদয়ে বাস করা ইস্টবেঙ্গল থেকে সময়ের সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সমর্থকেরাও। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগানের ম্যাচ হলে যেখানে কমপক্ষে 30 হাজার মানুষের ভিড় হয়, সেখানে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখতে যান মেরেকেটে 10 হাজার মাত্র।
কিন্তু আজকের ধরাশায়ী দল এক সময়ে বলে বলে গোল খাওয়াতো বাগান ফুটবলারদের। সবুজ মেরুনের ঘাড়ে ছুরি রেখে ময়দানে দাপিয়ে বেড়ানো ইস্টবেঙ্গল আজ কোথায়? কোথায় সেই চেনা জৌলুস? লাল হলুদ সমর্থকরা বলছেন, ব্যর্থ হলেও, মোহনবাগানের মতো বিকিয়ে যাইনি। ও দল তো গোয়েঙ্কা কোম্পানির। নীতু দা এখনও আছে বলেই ইন্ডিয়ান সুপার লিগে জায়গা করতে পারে আমাদের দল।
নীতু দা অর্থাৎ লাল হলুদ কর্তা দেবব্রত সরকারকে নিয়ে যখন প্রশংসায় ভাসছেন একদল, ইস্টবেঙ্গলের বাকি অংশের সমর্থকরা দাবি করছেন, এই দেবব্রত সরকারের জন্যই আজ ডুবতে বসেছে ইস্টবেঙ্গল। লাল হলুদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার নেপথ্যে দিনের পর দিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্ক কষে দলকে ব্যাক ফুটে নিয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী একমাত্র নীতু সরকার! এমন দাবিতেই অটল রয়েছেন লাল হলুদের বহু সমর্থক। কিন্তু সত্যিই কি ইস্টবেঙ্গল কর্তার কারণে এক প্রকার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ইলিশ প্রেমীদের ক্লাব?
মুখ খুলেছেন লাল হলুদ কর্তা
ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতার নেপথ্যে কি দেবব্রত সরকার দায়ী? এবার কি তিনি সরে দাঁড়াবেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে, সম্প্রতি লাল হলুদ কর্তা জানিয়েছিলেন, আমি তো কোনও পদেই নেই। আমি কেবল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা মাত্র। আমার থাকা বা সরে যাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। বাকিদের থেকে আমার পরিচিত একটু বেশি বলেই হয়তো বারবার সামনে আসতে হচ্ছে। কিন্তু আমিও যে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সাথে সাথেই সমব্যথী। আমারও যে খারাপ লাগে।
লাল হলুদ কর্তা আরও বলেন, ভেবেই খারাপ লাগছে এক সময়ে যখন দল গড়তাম তখন টাকা ছিল না। কিন্তু এখন টাকা থেকেও ভাল দল গড়তে পারছি না। সেই ক্ষমতাই হয়তো নেই! ইস্টবেঙ্গল কর্তার দাবি, যাঁরা দলের ব্যর্থতা নিয়ে আমাকে দোষারোপ করছেন তারা আসলে নিজেদের ব্যর্থতাকেও আড়াল করতে চাইছেন। তাঁরা আসলে দীর্ঘদিনের ব্যর্থতাকে সাম্প্রতিক ব্যর্থতা বলে চালাতে চাইছেন। কার্যত এমন সুরেই লাল হলুদের সাথে যুক্ত থাকা বহু বিরোধীদের এক যোগে বিঁধেছেন দেবব্রত সরকার। তাঁর বক্তব্য, ইস্টবেঙ্গল অনেক আগেই নিজের সেরা ফর্ম হারিয়েছে! আর এই ঘটনার নেপথ্যে কোনও একজন দায়ী নয়!
অবশ্যই পড়ুন: এবার বাংলাদেশকে শায়েস্তা করার প্রস্তুতি, বড় সিদ্ধান্তের পথে ভারত
প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান সুপার লিগের গত 3 মরসুমে নয় নম্বরে থেকে যাত্রা শেষ করার বিষয়টি ইস্টবেঙ্গলের প্রধান সমস্যা। তবে সেই সমস্যা কাটিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, অস্কারকে সাথে নিয়েও সেই পথ প্রশস্ত করতে পারেনি লাল হলুদ। শেষবারের মতো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ধরাশায়ী হয়ে AFC চ্যালেঞ্জ লিগে পা বাড়িয়েছিল লাল হলুদ। তবে সেই যাত্রা ভঙ্গ হওয়ায় পর সুপার কাপের প্রথম আসরেই শক্তিশালী কেরালার সামনে গুঁড়িয়ে যায় মশাল ব্রিগেড।
বর্তমানে, দলের ছেলেদের সাথে অশান্তি ও বিদেশিদের দলত্যাগ নিয়ে একপ্রকার নাজেহাল অবস্থা ইস্টবেঙ্গলের। এরই মাঝে শোনা যাচ্ছে, দলে থাকা বাকি বিদেশি ফুটবলারদেরও খুব শীঘ্রই বাদ দিতে চলেছে কলকাতা ময়দানের এই প্রধান। সব মিলিয়ে, চেয়েও আর পুরনো রঙিন দিন খুঁজে পাচ্ছে না ইমামি ইস্টবেঙ্গল।