সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: যোগ-মানবসেবার জীবন্ত প্রতীক স্বামী শিবানন্দ (Swami Sivananda) আর আমাদের মধ্যে নেই। 129 বছর বয়সে শনিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সূত্রের খবর, বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ কয়েকদিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টের রোগেই ভুগছিলেন স্বামী শিবানন্দ। অবশেষে আজ 4 মে, রাত 9টা নাগাদ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়।
তার শিষ্য সঞ্জয় সর্বজ্ঞ জানিয়েছেন, গুরুজির পার্থিব দেহ বর্তমানে দুর্গাকুন্ডের আশ্রমে রাখা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ এবং তার অনুগামীরা শেষ দর্শন করতে পারেন। আজ সোমবার তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথাই রয়েছে।
কে স্বামী শিবানন্দ? | Swami Sivananda |
স্বামী শিবানন্দ একজন যোগগুরু, যার দেশের বাইরেও বেশ সহ পরিচিতি রয়েছে। 1896 সালের 8 আগস্ট তিনি ভারতের সিলেটের এক ভিক্ষুক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবা-মা ভিক্ষা করেই সংসার চালাতেন। সূত্র বলছে, মাত্র 6 বছর বয়সে একই সাথে তিনি মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে ফেলেন। এরপর আত্মীয়দের কাছেই বড় হন। সূত্রের খবর, মরনকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 129 বছর। প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা যোগ ব্যায়াম করে কাটাতেন তিনি।
এও শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে তিনি বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন। এমনকি বৃন্দাবনেও বেশ কিছুদিন ছিলেন। তারপর 1979 সালে তিনি বারানসিতে চলে আসেন। সেখানে তিনি গুরু ওমকারনন্দের কাছ থেকে যোগ শিক্ষা লাভ করেন। আর সেখানকার দুর্গাকুন্ডেই তার আশ্রম রয়েছে। গত 100 বছর ধরে তিনি প্রয়াগরাজ, নাসিক, উজ্জয়ন এবং হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় নিয়মিত অংশ নিতেন।
পেয়েছেন সেরার সেরা পুরস্কার
সব থেকে বড় ব্যাপার, 2022 সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হন। হ্যাঁ, তাকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এই পুরস্কার প্রদান করেন। এমনকি যোগরত্ন পুরস্কার, বসুন্ধরা রত্ন পুরস্কারও তার ঝুলিতে রয়েছে।
সাধারণ মানুষেরা পাশে দারিয়েছেন তিনি!
সব থেকে বড় ব্যাপার, সেক্টর 16-তে সঙ্গম লোয়ার রোডে স্বামী শিবানন্দের যে আশ্রম রয়েছে, সেখানে এক বিরাট ব্যানার লাগানো। আর তাতে তার আধার কার্ডের ছবিও রয়েছে। তিনি নাকি কুষ্ঠরোগীদের সেবাতেও নিজেকে উৎসর্গ করতেন। হ্যাঁ, তিনি পুরীর প্রায় 400 থেকে 500 কুষ্ঠরোগীর সেবা করেছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ এক ট্রেনেই হাওড়া থেকে মিজোরাম, জুলাইতেই হতে চলেছে বিরাট কাজ, সুখবর দিল রেল
বর্তমান প্রজন্মে দাঁড়িয়ে যখন মানুষ বাঁচার জন্য ছুটছে, তখন স্বামী শিবানন্দ দেখিয়ে গিয়েছেন, কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। হ্যাঁ, শান্ত, সাদামাটা ভাবেই তিনি জীবনের 129 বছর কাটিয়ে দিলেন। তার প্রয়াণে যেন এক স্বর্ণযুগের অবসান ঘটে গেল। তবে তার আদর্শ এবং সাধনা চিরকালই সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকবে।