প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়েছে ক্রিকেটের। সেই সঙ্গে চাহিদা বেড়ে চলেছে ব্যাটেরও। কারণ এই ব্যাটের মাধ্যমেই ধুমধাড়াক্কা ছক্কা চার পিটিয়ে দেশকে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিয়ে আসে খেলোয়াড়েরা। তাইতো খুব সৌখিনভাবে এই ব্যাট নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে আবার ক্রিকেটাররা ব্যাট তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকজনকেই তালিকার শীর্ষে রাখে। তাঁদের হাতে বানানো ব্যাট দিয়েই ময়দানে নামেন। আর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে কলকাতার ছেলে অজিত কুমার শর্মা। চলতি আইপিএলেও (IPL 2025) সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন তিনি।
ব্যাটের চিকিৎসক বাংলার এই ছেলে!
আগে খেলার ময়দানে নামলে ব্যাটাররা নিজেদের ইচ্ছে মত ব্যাট নিয়ে নামতেন। আর নেমেই বোলারদের সপাটে জবাব দিতে চার ছক্কা পেটাতেন। তবে এ বার ভারতীয় বোর্ড ব্যাটের মাপ নিয়ে কড়াকড়ি হয়েছে। এখন আর আগের মত যেমন খুশি ব্যাট নিয়ে মাঠে নামা যাবে না। তাইতো সেক্ষেত্রে সিনিয়র থেকে জুনিয়র সকল ব্যাটারারদের একমাত্র ভরসা বাংলার অজিতের উপর। KKR এর প্রত্যেক প্লেয়ারের কাছে তিনি আক্ষরিক অর্থে ‘গো-টু ম্যান’। আন্দ্রে রাসেল থেকে শুরু করে সুনীল নারাইন, বেঙ্কটেশ আয়ার, রিঙ্কু সিংহ সকলের ব্যাটের চিকিৎসক এই অজিত।
রাসেলের ব্যাটের দাম দেড় লক্ষ টাকা!
জানা গিয়েছে, বাগুইআটির হাতিয়াড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁ দিকের এক ছোট গলিতেই অজিত কুমার শর্মার দোকান। নিতান্তই একটি সাধারণ দোকান। দোকানের সাইনবোর্ডে তাঁর বেশ কিছু ছবির মাঝে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘ডক্টর অফ ব্যাট্স’। কোনো অসুবিধা হলেই অজিতের ঘাড়েই সব দায়িত্ব পড়ে। শুধু KKR নয়, হায়দরাবাদের অভিষেক শর্মা, ঈশান কিষাণ সবার কাছেই জনপ্রিয় অজিত। আর খেলোয়াড়দের ব্যাটের কাজ করতে করতেই তিনি অনুমান করতে পারেন যে নারাইন, রাসেল সবচেয়ে দামী ব্যাট ব্যবহার করেন। হয়ত, ওই ব্যাটের দাম দেড় লক্ষ টাকা। এমনকি রমনদীপের ব্যাটের দামও তিনি আন্দাজ করেছেন প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।
স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার
তবে এর জন্য অজিত ব্যাট সারাই করার জন্য কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেননি। আসলে কোনোদিন যে, ব্যাটের চিকিৎসক হতে হবে সেটাই ভাবেননি। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রেম ছিল তাঁর। স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ারও। কিন্তু সল্টলেকে এক বার প্র্যাকটিস করার সময় রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট নেটে আটকে যায় আর তখনই কাঁধে বড় চোট পান তিনি। কোনোদিনও আর খেলতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় চিকিৎসকও। কিন্তু হল ছাড়েনি অজিত এর বন্ধু সচিন। ব্যাট সারাই করার প্রস্তাব দেন তিনি। যদিও প্রথমে অজিত রাজি হননি। পরে সেই কাজে মনোনিবেশ করেন।
দোকানের নাম “ব্যাটের চিকিৎসক” রাখা নিয়েও অজিত এক মজাদার ঘটনা বলেন। তিনি বললেন, “আগে আমার দোকানের নাম ছিল কলকাতা ব্যাট রিপেয়ারিং সেন্টার। সেখানে এক চিকিৎসক রোজই দেখতেন আমি একটা ব্যাট নিয়ে কারিকুরি করছি। তিনি এক দিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কী করছি আমি। তখন জানাই ব্যাট সারাই করছি। উনি আমাকে উৎসাহ দেন আর বলেন, ‘আমি মানুষের ডাক্তার, তুই ব্যাটের ডাক্তার’। কথাটা তখনই অজিত এর মনে ধরে যায়। তখনই দোকানের নাম পাল্টে ‘ডক্টর অফ ব্যাট্স’ দেন। এখন ওই নামেই সবার কাছে পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ রাজস্থানের বিরুদ্ধে মাত্র ১ রানে সম্মান রক্ষা! প্লে অফের অঙ্ক কতটা সহজ হল KKR-র?
রাজনীতির প্রতিও বিশেষ আগ্রহ অজিতের
বর্তমানে কাজের সূত্রে প্রচুর মানুষের কাছে এখন অজিত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু কলকাতা নয়, ব্যাট সারাই করার প্রস্তাব এসেছে বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকেও। ‘পিক অ্যান্ড ড্রপ’ পরিষেবাও রয়েছে তাঁর দোকানে। কেকেআরের প্রায় সব ক্রিকেটারের সঙ্গে অজিতের ভাল বন্ধুত্ব। তবে নিজের কাজটুকু নিয়েই থাকতে চান। কেউ ভালবেসে যদি নিজে থেকে টিকিট দেয় খেলা দেখার জন্য তবেই তিনি যান। তা ছাড়া, অজিতের রাজনীতির প্রতিও বিশেষ আগ্রহও রয়েছে। তাঁর ইচ্ছা ৪০-৫০ বছর বয়সে রাজনীতিতে মনোযোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |