প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ২ মে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল (Madhyamik Exam Result 2025) ঘোষণা করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ বারে পাশের হারের নিরিখে তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা। এবং মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের আদৃত সরকার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৬, শতাংশের নিরিখে ৯৯.৪৬ শতাংশ। বরাবরই মাধ্যমিকে সেরার সেরা তালিকা নিয়েই হইচই হয়। কিন্তু লাস্ট বয়দের নিয়ে সে ভাবে আলোচনা হয় না। তবে সেই আলোচনায় উঠে এল মালবাজারের এক স্কুলের নাম। ৩২ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন কোনরকমে টেনেটুনে পাশ করল।
ঘটনাটি কী?
মালবাজার শহরের পানোয়ার বস্তি এলাকায় অবস্থিত আনন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুল। এই স্কুলে এ বার ৩২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। যার মধ্যে ৩০ জনই অকৃতকার্য বা ফেল করেছে। আর বাকি দু’জন পড়ুয়া কোনওরকমে পাসের গণ্ডি পার করেছে। তাঁদের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ২৮৫। জানা গিয়েছে এই স্কুলে নাকি কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু এদিকে তাঁর কথা অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকারাই শোন না। গুটিকয়েক শিক্ষক বাদ দিলে বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ঠিকভাবে পড়ান না বলে দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে স্কুলে আটজন স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চারজন পার্শ্বশিক্ষক–শিক্ষিকা রয়েছেন।
গোটা রাজ্যে এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমিকের ফলাফল যে এতটা খারাপ হয়েছে তা প্রশাসনিক স্তর থেকে মেনে নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল এই যে পৃথিবীর বিরলতম জনজাতি হিসেবে পরিচিত আলিপুরদুয়ার জেলার টোটোপাড়ায় একটি স্কুলের ফলাফলও খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু সেই খারাপকে ছাপিয়ে আরও খারাপ ফলাফল করেছে মালবাজার শহরের আনন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলের রেজাল্ট। যার যার দরুন বেশ ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তার উপর রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের মামলা নিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পড়াশোনার এমন বেহাল দশা নিয়ে তাই সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীদের একাংশ।
আরও পড়ুনঃ স্টেট ব্যাঙ্কে ১৮ হাজার চাকরি! কোথায়, কবে থেকে শুরু প্রক্রিয়া, কীভাবে আবেদন? জানুন
বিরোধীদের কটাক্ষ
এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে, ‘রাজ্যের শিক্ষার অবস্থা যে খুবই খারাপ সেটার জ্বলন্ত উদাহরণ হল মালবাজারের স্কুল। এর দায় সম্পূর্ণ রাজ্যের শাসকদলের।’ অন্যদিকে মাধ্যমিকে স্কুলের এই জঘন্য ফলাফল নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হীরালাল রবিদাস জানান, ‘গরমের ছুটির পর খারাপ ফলের বিশ্লেষণ করতে বৈঠক ডাকা হবে। আগামীতে যাতে এরকম খারাপ ফল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।’ এছাড়াও স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শরিফুল রহমান বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিবেক জাগ্রত না হলে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বাড়তি দায়বদ্ধতা জন্মাবে না। আমি চাই ওদের অন্তর থেকে বিবেক জেগে উঠুক, যাতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়।’