সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার সন্ত্রাসের দেশের (Pakistan) প্রতি যে কড়া বার্তা দিয়েছিল, তার প্রভাব হাতেনাতে মিলছে এবার দেশের বন্দরগুলিতে। তবে না, সরাসরি নয়, এবার তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আসা পাকিস্তানি পণ্যের পথও বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি। এমনকি রাজ্যের গোয়েন্দা অধিদপ্তর শুরু করেছে কড়া নজরদারি। ইউনাইটেড আরব আমিরাতের মত দেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে চাওয়া পাকিস্তানের পণ্যের রাস্তাতেও এবার তালা পড়ে গিয়েছে।
এক শীর্ষ সরকারি আধিকারিকের বক্তব্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, 2 মে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের এক নোটিফিকেশন পাওয়ার পর পাকিস্তান থেকে আসা এবং রপ্তানি হওয়া কোনোরকম পণ্য আর ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। সে পণ্য সমুদ্রে থাকুক বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে প্রবেশ করার চেষ্টা, সবেতেই রাস্তা বন্ধ।
মিলবে না আর কোনও ছাড়
সাধারণভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞার আগে সমুদ্রে রওনা দেওয়া পণ্যের জন্য কিছুটা ছাড় দেয় কেন্দ্র সরকার। তবে এবার পুরোই ব্যতিক্রম। সংশ্লিষ্ট আধিকারিক জানিয়েছেন, সন্দেহ হলে কাস্টমস বিভাগ এবার ব্যবস্থা নেবে। আর একাধিক বন্দরের ডিআরআই ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক সুত্র মারফত খবর, পাকিস্তানি পতাকাবাহী একটি জাহাজকে তো ডকই করতে দেওয়া হয়নি।
অনেক সময় তৃতীয় দেশ থেকে পাকিস্তানি পণ্য আসছে কিনা তা কাগজপত্রেও খতিয়ে ধরা যায় না। তবে প্যাকেটের লেবেল প্রিন্টিং, স্টাইল কিংবা উৎপাদন স্থান যাচাই করে তা ধরা পড়ে। সম্প্রতি আরব আমিরাতের মাধ্যমে খেজুর ও শুকনো ফল ভারতীয় বাজারে ঢুকছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আর এ বিষয়ে ভারত সরকার আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়েছে। তবে আরব আমিরাত দাবি করছে যে, তারা নিজেরাও খেজুর ও শুকনো ফল উৎপাদন করে এবং সেগুলিই ভারতে পাঠায়।
পরিসংখ্যান কী বলছে? | India Pakistan Trade |
পহেলগাঁও হামলার পর 24 এপ্রিল পাঞ্জাবের আঁটারি সীমান্তের ইন্টিগ্রেটেড চেক পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভারত সরকারের তরফ থেকে। আর এই এক সিদ্ধান্তের জেরেই 3886 কোটি টাকার সীমান্ত বাণিজ্য একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে। হিসাব বলছে, 2018-19 অর্থবর্ষে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল 4370 কোটি টাকার।
তবে পুলওয়ামা হামলার পর তা কমে দাঁড়ায় 2257 কোটি টাকায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের গতি আবারও কিছুটা ফিরেছিল। হিসাব বলছে, 2023-24 সালে এই পরিমাণ বেড়ে দ্বারায় 3886.53 কোটি টাকায়, যা গত 5 বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এবার চিত্রটা সম্পূর্ণই বদলে গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মেট্রো যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! ফের বাড়ল ভাড়া, দেখে নিন নতুন টিকিট প্রাইস
জানিয়ে রাখি, বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা প্রায় 37 বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বাস্তবে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র 2 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যেখানে ভারতের মোট বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় 430 বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে পাকিস্তানের বার্ষিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে মাত্র 100 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এককথায় ভারত এবার শুধু কথায় নয়, সুদে আসলে সব ফেরত দিচ্ছে।