বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: রাশিয়ার মতো বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির ওপর একের পর এক ড্রোন হামলা (Drone Warfare) চালিয়েছে ইউক্রেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে সংঘাতের পর্বে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পশ্চিমের দেশের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় ড্রোন! একইভাবে ড্রোনকে প্রধান হাতিয়ার বানিয়ে ভারতের ওপরও হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, যদিও সেই হামলা সহজেই ভেস্তে গিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দৌলতে।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষে ড্রোন ব্যবহার করছে, তাতে বোঝাই যায় আগামী দিনে বড়সড় যুদ্ধ বাঁধলে ড্রোন হয়ে উঠবে অন্যতম প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। তবে সেই দুঃসময়ের আগে আধুনিক ড্রোন যুদ্ধের জন্য কতটা তৈরি ভারত? রইল বিস্তারিত।
অপারেশন সিঁদুর থেকেই শিক্ষা নিয়েছে ভারত
পাকিস্তানের কুকর্মের শিক্ষা দিতে চালানো হয়েছিল সিঁদুর অভিযান। আর সেই যুদ্ধেই একেবারে হাত খুলে ড্রোন ব্যবহার করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের তরফে প্রয়োগ করা সেইসব ড্রোন পাক জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে পড়ে আসল খেল দেখিয়েছে। আর এরপর থেকেই ড্রোনের সাফল্যকে সামনে রেখে ড্রোন তৈরি ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্টার্টআপ সহ বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তা করার ক্ষেত্রে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে হাতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু প্রকল্প। যা আদতে ড্রোন ও কাউন্টার ড্রোন প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত।
দেশীয় ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা DRDO বর্তমানে D4 সিস্টেম ও ভার্গবস্ত্র সিস্টেমের মতো বেশ কিছু অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম তৈরি করছে। যা জানা যাচ্ছে, এই সিস্টেম মূলত রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ড্রোনের পাল ধ্বংস করতে সক্ষম। সাম্প্রতিক সংঘর্ষেও ভারতীয় প্রতিরক্ষা ও উন্নয়ন সংস্থার এই ব্যবস্থা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম ছাড়াও ঝাঁক ঝাঁক ড্রোন তৈরিতে জোর দিয়েছে DRDO। বলা বাহুল্য, ভারতীয় সেনারা DRDO-র বিভিন্ন দেশীয় অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম ব্যবহার করে দূরপাল্লার বিভিন্ন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। তাছাড়াও অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন হার্পি ড্রোন প্রয়োগ করে পাকিস্তানের HQ-9 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় ভারত।
ভারতের বিভিন্ন ড্রোন প্রকল্প
তালিকার প্রথমেই নাম রয়েছে রুস্তম সিরিজের। যার মধ্যে রয়েছে রুস্তম 1, রুস্তম 2/তাপস বিএইচ-201-এর। এগুলি মূলত মাঝারি উচ্চতার দীর্ঘ সহনশীল UAV ড্রোন। তালিকার দ্বিতীয় নম্বর রয়েছে সুইফট ড্রোন প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা অটোনোমাস স্টিলথ UAV ড্রোন সিস্টেম তৈরি করছে। এগুলি ছাড়াও ড্রোন সোয়ার্ফ প্রোগ্রাম ও অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম প্রকল্প হাতে নিয়েছে DRDO। যা থেকে বোঝা যায়, আগামীদিনে ড্রোন যুদ্ধের জন্য ভারতের প্রস্তুতি কতটা।
অবশ্যই পড়ুন: ATM-এ গেল বড় নির্দেশ! এবার ৫০০ টাকার নোটও বাতিল করছে RBI?
উল্লেখ্য, ভবিষ্যতের জন্য উন্নত মানের শক্তিশালী ড্রোন তৈরি করতে সব রকম চেষ্টা করছে ভারত। ইতিমধ্যেই ড্রোন ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য আমেরিকা, ইজরায়েল ও অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে ভারত। অতি সম্প্রতি ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি বড়সড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মাধ্যমে আমেরিকার হাত ধরে ড্রোন ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আরও উন্নত করবে দিল্লি।