অথৈ জলে সল্টলেক দুর্ঘটনায় মৃত ডেলিভারি বয়ের পরিবার! রোজ জুটছে না খাবার, বাড়ছে ঋণ

Published:

Saltlake Accident
Follow

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি মাসে সল্টলেকে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় (Saltlake Accident) প্রাণ হারিয়েছিল ডেলিভারী বয় সৌমেন মণ্ডল। দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও মেলেনি কোনো ক্ষতিপূরণ। এদিকে এই মৃত সৌমেনই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বর্তমানে পরিবারের রোজগার একবারেই শূন্য, তার ওপর চড়চড় করে বাড়ছে ঋণের বোঝা। এমতাবস্থায় ঘোর বিপাকে পড়ল গোটা মণ্ডল পরিবার।

ঘটনাটি কী?

উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট, বুধবার সল্টলেকে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ডেলিভারি বয় সৌমেন মণ্ডল। সল্টলেক এবং কেষ্টপুরকে সংযোগকারী ৮ নম্বর ব্রিজের উপর একটি দ্রুতগামী চার চাকার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক তাঁকে সরাসরি ধাক্কা মারে। অভিঘাতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে ওই যুবক বাইক থেকে ছিটকে গিয়ে রাস্তার পাশের রেলিংয়ের উপর পড়েন এবং দুর্ভাগ্যবশত রেলিংয়ের একটি অংশ তাঁর পায়ে গেঁথে যায়। এরপর ফের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ওই রেলিংয়ের দিকেই ফিরে যায় এবং রেলিংয়ে আটকে থাকা যুবককে দ্বিতীয়বার ধাক্কা মারে। মুহূর্তেই গাড়িটির সামনের অংশে আগুন লেগে যায়। বিধ্বংসী রূপ নেয় গাড়িটি এবং পাশেই আটকে থাকা ওই ডেলিভারি বয়ের শরীরকে গ্রাস করে। ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। বাসন্তীর মণ্ডল পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

রোজগার নেই পরিবারে

সল্টলেকের সেই ভয়াবহ ঘটনার দেখতে দেখতে প্রায় দুসপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও সল্টলেকের সেই রাস্তায় দুর্ঘটনার চিহ্ন রয়ে গিয়েছে। গাড়ির চালক গ্রেফতার হলেও ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থাই করা হচ্ছে না। এদিকে বেঁচে থাকাকালীন সৌমেন প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। তাতে খুব সাহায্য না হলেও একেবারে না-খেয়ে থাকতে হত না কাউকে। কিন্তু এ বার কী ভাবে চলবে তাঁদের তাই নিয়ে চিন্তায় দাদা সুপ্রিয় মন্ডল। সে নিজে দৈনিক ৫০০ টাকার বিনিময়ে ঢালাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু এখন কাজ না থাকায় ঘরে বসে রয়েছেন। এখনও বেকার ছোট ভাইটিও। তার উপর মেজো ভাইয়ের ধার করে কেনা বাইকটিও EMI এর বোঝা চেপেছে এখন পরিবারের ঘাড়ে।

মেলেনি সরকারি সাহায্য

আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী ডেলিভারি বয় সৌমেন মন্ডলের দুর্ঘটনার পর অনটন যেন গ্রাস করেছে গোটা পরিবারকে। এই প্রসঙ্গে সৌমেনের দাদা সুপ্রিয় মণ্ডল বললেন, ‘‘আমার এমন পরিস্থিতি, বাড়িঘর না-দেখলে বুঝতে পারবেন না। কোনও জায়গা থেকে যদি কোনও সাহায্য পেতাম, উপকৃত হতাম। কেউ যদি আমাকে এখন এক টাকাও দেন, তা আমার কাছে এই মুহূর্তে লাখ টাকার সমান।’’ তাঁর দাবি সরকারি সাহায্য এবং কোনও রাজনৈতিক নেতাও কোনো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। বিমার টাকাও আদায় করা যায়নি। যে এমনকি সমস্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখানে হিন্দি ভাষায় কথা বলায় তারা নিজেদের বক্তব্য ভালো করে বুঝিয়ে উঠতে পারেনি। এই অবস্থায় বাবা, মা, ভাই, স্ত্রীর মুখে কী ভাবে খাবার তুলে দেবেন, তা ভাবতে গিয়ে রাতের ঘুম উড়েছে সুপ্রিয়ের।

আরও পড়ুন: কোচিং সেন্টারে মহাতাণ্ডব! ছুঁড়ে ফেলা হল বইপত্র, তুমুল শোরগোল নদীয়ায়

প্রসঙ্গত, ডেলিভারি বয় সৌমেন মণ্ডল সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীনই নাকি কলকাতায় কাজের সন্ধানে চলে এসেছিলেন। তবে পড়া ছাড়েননি, কেবল পরীক্ষার সময় বাড়ি ফিরতেন সে এবং আবার চলে যেতেন। শেষ যে সংস্থায় কাজ করতেন, সেখানে যোগ দিয়েছিলেন বছরখানেক আগে। কিন্তু সব শেষ আজ। দাদা সুপ্রিয় জানান, “যে গাড়ির জন্য আজ আমাদের এই দূরাবস্থা, এই দুর্ঘটনা, সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য মেলেনি, খুব হতাশায় রয়েছি সকলে। এবার হয়ত উকিলের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।”

আরওBasanti
গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join