সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ ‘লোকে কী বলবে’, এই কথাকে মাথায় রেখে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা কিনা অনেক সময়ে পিছিয়ে আসেন। তবে ব্যতিক্রমী সুপ্রিয়া পাল। তাঁর রয়েছে মাস্টার্স, বিএড (B.Ed)-এর ডিগ্রি। অথচ সংসারের হাল ধরতে ট্রেনে হকারি করছেন তিনি। স্ট্রাগল কাকে বলে তা খুব অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছেন সুপ্রিয়া পাল (Supriya Pal Hawker)। তাই সমাজের কোনও বাধাকে বাধা না মনে করে উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি থাকলেও আজ ট্রেনে হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সুপ্রিয়া।
ট্রেনে হকারি করছেন B.Ed, মাস্টার্স ডিগ্রিধারী মহিলা
তাঁর জীবন সংগ্রামের গল্প হার মানাবে ভালো চিত্রনাট্যকেও। আজকের এই প্রতিবেদনে সুপ্রিয়া পালের জীবনের কথাই তুলে ধরা হবে। তিনি অবশ্য সকলের কাছে মিষ্টি নামেই পরিচিত। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এত পেশা থাকতে ট্রেনে হকারি কেন করছেন মিষ্টি? কিংবা এত ভালো ভালো ডিগ্রি থাকতে তাঁকে ট্রেনে হকারির পেশা কেন বেছে নিতে হল? সুপ্রিয়া পাল হলেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা। আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চাদের মতোই তাঁরও শৈশব ছিল সাধারণ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন।
গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সুপ্রিয়া বাঁকুড়া কলেজেও ভর্তি হয়। এরপর সেখান থেকে ভালো মার্ক্স নিয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয় সুপ্রিয়া। সেখানেও ভালো ফল করেন তিনি। তাঁর ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা করার। নিজের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে বিএড কোর্সেও ভর্তি হন মিষ্টি। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে যে অন্যকিছুই লেখা ছিল সেটা তিনি পরে বুঝতে পারেন। তাঁর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায় যখন তিনি জানতে পারেন নগদ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি হচ্ছে। তিনি ঠিক করেন, নিজের মেরিটের মাধ্যমে নিজের প্রমাণ করবেন, কোনও টাকা দিয়ে নয়। তবে যেমন ভাবা হয় সবসময় তেমন হয় না। চাকরির স্বপ্ন ভেঙে যায় তাঁর। এরপর তাঁর পরিবারের থেকে বিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর স্বামীর চাকরি চলে যায়। ছোট কন্যা সন্তান এবং স্বামী স্ত্রী দুজনে যেন অকুল পাথারে পড়েন। এরপরেই ট্রেনে হকারির কথা মাথায় আসে সুপ্রিয়ার। বিভিন্ন হোলসেল পোশাকের সম্ভার নিয়ে তিনি ট্রেনে হকারি করছেন আজ প্রায় ১০ বছর ধরে। আজ তাঁর আর্থিক অবস্থায় অনেকটাই স্বচ্ছল। তবে তাতে কী, ট্রেনে হকারির কাজ ছাড়েননি তিনি। তবে এই কাজের জন্য পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় পরিজনদের কাছ থেকে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি তাঁকে। তবে সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছেন সুপ্রিয়া দেবী।