মমতা উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরতেই ডুয়ার্সে বন্ধ তিনটি চা বাগান! পুজোর আগে কর্মহীন শ্রমিকরা

Published on:

Dooars

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: পুজোর মুখে ফের রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের (Dooars) তিনটি চা-বাগান ৷ শ্রম দফতরের ঘোষিত ২০ শতাংশ বোনাস না-দেওয়ার জন্যই সকলের চোখ এড়িয়ে বাগান ছেড়ে পালানোর অভিযোগ উঠল মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ৷ যার প্রতিবাদে ধূপগুড়িতে রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন বিক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকরা। অবরোধ তুলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় বিডিও ও পুলিশ।

বন্ধ তিনটি চা বাগান

রিপোর্ট অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে ডুয়ার্সের চামুর্চি চা বাগান বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই কিছুক্ষণের মধ্যে ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকের রেড ব্যাঙ্ক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগান বন্ধ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। পরপর তিনটি চা বাগানের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। এদিকে পুজোর আগে কাজ হারিয়ে রীতিমত দিশেহারা এবং বিপাকে পড়েছেন ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, বোনাস দেওয়ার ভয়ে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছে রাতারাতি।

জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শ্রমিকদের

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক ব্যানার্জি যখনই উত্তরবঙ্গ সফরে আসে তখনই চা বাগানের মালিকরা ব্যবসার উন্নতির পরিদর্শনে চা বাগানগুলি খোলে, কিন্তু তাঁরা আবার ফিরে গেলেই চা বাগানগুলো আবার বন্ধ হয়ে যায়। এবারেও তাই হল, পরপর তিনটি চা বাগান বন্ধ করে দেওয়া হল। বাগান বন্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকরা। গতকাল, শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ চা বাগানের গেটের সামনেও বিক্ষোভ শুরু হয়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্থানীয় প্রশাসন। অবরোধ তুলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় বিডিও ও পুলিশ।

কটাক্ষ বিজেপির

উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত মোট ৫টি চা-বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ যদিও, তার মধ্যে বামনডাঙা টুন্ডু চা-বাগান পুনরায় খুলে গিয়েছে। অন্যদিকে আমবাড়ি চা-বাগান আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খোলার কথা রয়েছে ৷ অন্যদিকে, তোতাপাড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষও তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়ে জলপাইগুড়ির লেবার কমিশনারকে লিখিত দিয়েছে ৷ তারা জানিয়েছে, ২০ শতাংশ বোনাস দিতে পারবে না ৷ আর এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করল আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের চেয়ারম্যান মনোজ টিগ্গা। তিনি বলেন, “প্রতিবার উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে ও চলে যাওয়ার পরে আমাদের এখানকার চা-বাগান বন্ধ হয়। আমরা তো চাই শ্রমিকরা ২০ শতাংশ বোনাস পাক। দেখা যাক না, সরকার কীভাবে শ্রমিকদের ২০ শতাংশ বোনাস পাইয়ে দেয়।”

আরও পড়ুন: পুজোর পরেই বাংলায় SIR? ডেপুটি ইলেকশন কমিশনারের রাজ্য সফর ঘিরে বাড়ছে জল্পনা

আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের চেয়ারম্যান মনোজ টিগ্গার বক্তব্যের কোনও জবাব দিলেন না, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি মহুয়া গোপ। তিনি বলেন, “সরকার শ্রমিকদের পাশে সবসময় আছে ৷ বাগানের কোনও সমস্যা হলে, বাগান কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুক ৷ কিন্তু, চা-বাগান বন্ধ করে চলে যাওয়া ঠিক নয় ৷ আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাই।” এই নিয়ে সিটুর জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ সেন বলেন, “সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগেই ২০ শতাংশ পুজো বোনাস দেওয়ার অ্যাডভাইজারি জারি করেছে ৷ এর আগে পুজোয় শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই বোনাসের গ্রেড ধার্য করা হত ৷ কিন্তু এবার সরকারকেই সেটার দায়িত্ব নিতে হবে ৷”

সঙ্গে থাকুন ➥