প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত মাসে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন রানি বিড়লা গার্লস কলেজের (Rani Birla Girls College) প্রিন্সিপাল শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। অভিযোগ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি ঐ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিস জারি করেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর বিরুদ্ধেই শেক্সপিয়ার সরণি থানায় হল FIR দায়ের। জানা গিয়েছে কলেজেরই এক অধ্যাপক তাঁর বিরুদ্ধে এই হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে FIR!
রানি বিড়লা কলেজের হিন্দির প্রফেসর হলেন মন্টু দাস। ২০১৪ সাল থেকে ওই কলেজে অধ্যাপনা করে আসছেন তিনি। এরপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে আসেন শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন মন্টুবাবু। দ্য ওয়ালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মন্টু যে তফসিলি জাতিভুক্ত, তা মানতেই চান না প্রিন্সিপাল। এমনকি তাঁর জাতিগত শংসাপত্র ভুয়ো বলে সহকর্মীদের সামনে বার বার অপমান এবং নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়। এমনকি কলেজের এসসি-এসটি সেলে তাঁর নাম নথিভুক্ত হতে দেননি প্রিন্সিপাল। তাই অভিযোগ করেছেন যে, ‘‘সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন জায়গায় দাবি করেছেন, আমার শংসাপত্র ভুয়ো। সামাজিক ভাবে এতে আমার সম্মানহানি ঘটেছে। ছাত্রছাত্রীদের সামনে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।” তাই তফসিলি জাতি জনজাতি আইন অনুসারে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানাচ্ছেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যের
জানা গিয়েছে, রানি বিড়লা কলেজের প্রিন্সিপাল শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়েছে গত ১২ সেপ্টেম্বর শেক্সপিয়ার সরণি থানায়। তবে শুধু হিন্দির অধ্যাপক মন্টুবাবু নয়, শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কলেজের আরও এক অধ্যাপক কনককুমার জানা অনুরূপ অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি সেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রিন্সিপাল আমাকে কুকথা বলতেন, দুর্ব্যবহার করতেন। আমি কলেজের তৎকালীন প্রশাসককে জানিয়েছিলাম। ওঁর থেকে আমাকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তার পর আমি জাতীয় কমিশনে অভিযোগ জানাই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। কমিশন থেকে ওঁর জবাব চাওয়া হয়েছিল। উনি এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও জবাব দিতে পারেননি।’’ এ ব্যাপারে শ্রাবন্তী দেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট বলেন যে, এই অভিযোগ মিথ্যা। এর বাইরে আর কিছু বলব না।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক নিয়ে বড় আপডেট পর্ষদের! অনলাইনেই শুধরে নেওয়া যাবে রেজিস্ট্রেশনের ভুল
কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে রানি বিড়লা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রথম প্রিন্সিপাল শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিস জারি করেছিলেন। সেই শোকজ চ্যালেঞ্জ করে শ্রাবন্তী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। গত বুধবার আদালত ওই শোকজে আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিপদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। জানানো হয়েছে, “শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত” না হলে এই পদে থাকা যায় না। তাই এইমুহুর্তে কাজরী দেবীর যোগ্যতা নিয়ে তদন্তের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।