প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি রাজ্য রাজনীতিতে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন বিপুল সম্পত্তি, তদন্তে অসহযোগিতা এবং প্রভাবশালী হওয়ার একের পর এক অভিযোগ উঠে আসল রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার (Chandranath Sinha) বিরুদ্ধে। আর সেই নিয়ে আজ বিশেষ ইডি আদালতে শুরু হয় দু’পক্ষের সওয়াল যুদ্ধ। এমতাবস্থায় মন্ত্রীকে ৭ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন পাঠাল ইডি। আর সেই আবেদন শুনতেই ভরা আদালতে ইডিকে তোপ বিচারকের। স্থগিত রাখা হল রায়দান।
কারামন্ত্রীকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন
দ্য ওয়ালের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে ৭ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের মার্চে আমরা নগদ লক্ষ টাকা ও মোবাইল পেয়েছিলাম। যখন আমরা ৪১ লক্ষ টাকা পেলাম, তখন বুঝলাম তদন্ত আরও জোরালো করলে আরও কিছু তথ্যপ্রমাণ মিলতে পারে। তাই ওই টাকা উদ্ধারের পরই হেফাজতে নেওয়া হয়নি। তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।” তখনই বিচারক ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন যে, “সেই সময় আপনি কি মনে করেননি যে এই ৪১ লক্ষ টাকা তাঁকে কাস্টডিতে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট?” সেই সময় জবাবে ইডির আইনজাবী জানান, “৪১ লক্ষ টাকা তাঁর কৃষি বা অন্য ব্যবসা থেকেও আসতে পারে। আমরা সেই সময় আরও তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছিলাম।”
ইডিকে তোপ বিচারকের
এদিন ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী আদালতে আরও বলেন যে এখন তাদের কাছে অনেক অজানা লিংক পাওয়া গিয়েছে। সেগুলো যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রীকে হেফাজতে চান তারা। শুধু তাই নয় ইডি মনে করছে যে চন্দ্রনাথ রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারে এবং তদন্তে সমস্যা তৈরি করতে পারেন। সেই সময় বিচারক ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন “২৪ সালের মার্চ মাসে ওনার বাড়িতে গিয়ে সার্চ করেছিলেন। ওই সময় আপনাদের কাছে যাবতীয় স্টেটমেন্ট, নথি ছিল। তাহলে এই ১১ মাসে কেন চন্দ্রনাথ সিনহার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না?” এরপরই এতদিন তাঁকে গ্রেফতার না করার কারণ হিসেবে ইডির আইনজীবী বলেন, “আমরা এতদিন ঘুমিয়ে ছিলাম না যে আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হেফাজতে চাইব। মন্ত্রী বলেছিলেন, ওই টাকা কৃষিকাজের আয়। জমি বিক্রির আয়। তখন থেকেই আমাদের সন্দেহ বাড়ে। তারপরই আমরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করি।”
আরও পড়ুন: নেই ডাক্তার, দুই ঘণ্টা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রোগী! চূড়ান্ত অব্যবস্থা আরামবাগ হাসপাতালে
মামলার রায়দান কবে?
অন্যদিকে কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির হেফাজতে নেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন চন্দ্রনাথের আইনজীবী। এবং দেরিতে নথি জমা দেওয়ার অভিযোগও উড়িয়ে দেন তিনি। এরপর দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর মামলার রায়দান স্থগিত রাখেন বিশেষ ইডি আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা। আদালতের নির্দেশে মন্ত্রী চন্দ্রনাথের আইনজীবী সোমবার সাড়ে দশটায় আদালতে হলফনামা জমা দেবেন। এবং মঙ্গলবার দুপুর দু’টোয় হবে মামলার রায়দান। এবার দেখার পালা আদালতের রায়দান কার দল ভারী করে।