India Hood Decode: ৯০ লক্ষ কোটির চুক্তি, ভারতের সরকার ফেলতে তৈরি ডিপ স্টেট থিয়োরি!

Published on:

Deep State Theory

যদি বলি বাংলাদেশ, নেপালের পর একইভাবে ধ্বসে পড়বে ভারতের সরকার! সারা ভারত জুড়ে জ্বলবে আগুন, চলবে তাণ্ডব। কী বিশ্বাস করবেন? হয়তো করবেন না? কিন্তু এই কথা আমরা বলছি না, বলছেন খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। নেপালের মতোই ভারতের সরকার ফেলার জন্য খালিস্থানি ও বিদেশি শক্তির সাথে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস! ডিল হয়েছে ৯০ লক্ষ কোটি টাকার। ডিপ স্টেট থিওরির (Deep State Theory) মাধ্যমে তৈরি হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র।

কিন্তু, কোন দেশ রয়েছে এই চক্রান্তের পেছনে? কারা কল-কাঠি নাড়ছে ভারতের সরকার ফেলার জন্য? কী এই ডিপ স্টেট থিওরি? আজ আমরা তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য যা আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেবে।

প্রথমেই আমরা আপনাদের জানাবো কী এই ডিপ স্টেট?

ডিপ স্টেট হল এক ধরনের সরকার। এটি এমন একটি সরকার যাকে আপনি দেখতে পাবেন না, যার সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন না, কিন্তু তারা আছে। এটি আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটি গুপ্ত নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে CIA এবং FBI-ও যুক্ত রয়েছে।

অর্থাৎ সহজভাবে এটা বলা যেতে পারে – যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কিছু লোক, বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে বিশ্বের বড় বড় সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন। যেমন ধরুন কোন দেশে কোন সরকার থাকবে? কোন বিষয় নিয়ে দেশের লোক মেতে থাকবে? কে বন্ধু? কে শত্রু? কে নায়ক? কে খলনায়ক? এই সবই নিয়ন্ত্রণ করে ডিপ স্টেট। দেশের নির্বাচনে যেই জিতুক, ডিপ স্টেটের শক্তি, ডিপ স্টেটের নেটওয়ার্ক কেউ শেষ করতে পারে না। কেউ কেউ মনে করেন ডিপ স্টেট নাকি আমেরিকার রাষ্ট্রপতির চেয়েও শক্তিশালী। এই সংগঠনের একাধিক ব্যক্তি দেশের অর্থনীতি, ইন্ডাস্ট্রি, স্পাই নেটওয়ার্ক, এমনকি মিডিয়াতেও আছে। তবে, এর উৎপত্তি কবে এবং এটি কে তৈরি করেছে, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য কিংবা কংক্রিট প্রমাণ আজ অবধি পাওয়া যায়নি।

দুই আমেরিকান সাংবাদিক ডেভিড ওয়াইস আর থমাস রস “The Invisible Government” নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যা ডিপ স্টেট শুরুর গোড়ার দিকের ইতিহাস সম্পর্কে বলে। সরকারের ছায়ায় থেকে কাজ করে বলে এই সংগঠনকে অনেকে শ্যাডো গভর্নমেন্টও বলে। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, ডিপ স্টেটের অস্তিত্ব সাধারণত আমেরিকায় রয়েছে বলে মনে করা হলেও, এটি বিভিন্ন আকারে, বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন দেশে রয়েছে, এমনকি বিভিন্ন দেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে।

এবার আপনাদের জানাবো ডিপ স্টেট কীভাবে কাজ করে? আর কীভাবেই বা প্ল্যান করে ইরান, নেপাল, বাংলাদেশের সরকার মুহূর্তের মধ্যে ফেলে দিল?

প্রথমেই আমরা আলোচনা করবো ইরান দেশে ডিপ স্টেটের কার্যকলাপ নিয়ে।

সালটা ১৯৫৩। ইরানের প্রধানমন্ত্রী মহাম্মেদ মসাদদেঘ দেশের তেল সংস্থাগুলির জাতীয়করণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি দেশের দারিদ্রতা দূর করার জন্য তেল সংস্থাগুলির সমস্ত হিসেবনিকেশ দেশের মধ্যেই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তখন ইরানের এই তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো ব্রিটেনের অ্যাঙ্গলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি।

কিন্তু, ডিপ স্টেট চাইছিল না যে, ইরানে তাদের আধিপত্য কমুক। তাই তারা চালু করল অপারেশন অ্যাজাক্স—একটি গোপন ক্যাম্পেইন, যার লক্ষ্য ছিল ইরানে প্রো-ওয়েস্টার্ন সরকার বসানো। তারপর, মসাদদেঘকে কমিউনিস্টপন্থী হিসেবে দেখানো হয়, ঘুষ দেওয়া হয় রাজনীতিবিদ, অফিসার আর সেনাদের। শুরু হয় বিদ্রোহ-বিক্ষোভ। শেষমেশ মিলিটারি দিয়ে গ্রেফতার করা হয় ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে। আর এটা কিন্তু কোনও কন্সপিরেসি থিওরি নয়, এটা CIA-র ডকুমেন্টেড ইতিহাস। যা ঘটনার ৬০ বছর পরে খোদ স্বীকার করে নিয়েছে আমেরিকা।

গুয়াতেমালার গণতন্ত্র ধ্বংস

সালটা ১৯৫৪। ইরানের মতো একইভাবে গুয়াতেমালার দারিদ্রতা দূর করতে চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জ্যাকোবো আরবেঞ্জ গুজম্যান। শুরু করেন নয়া ভূমি সংস্কার আইন। কিন্তু, এর ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে কলা উৎপাদনকারী আমেরিকান কোম্পানি ইউনাইটেড ফ্রুট। ফলত, ডিপ স্টেট শুরু করে নতুন অপারেশন, PBSuccess। সারা দেশে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ, হিংসা। ফলে পতন হয় সরকারের, আর ক্ষমতায় আসে মার্কিন পন্থী কার্লোস ক্যা কাস্টিলো আরমাস।

এরপর ১৯৭৩ সালে চিলি, ১৯৮১ সালে ইউকুয়েডর, এবং ২০১১ থেকে পরপর আরব, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইউক্রেন সহ একাধিক দেশে একইভাবে সরকার ফেলে দেয় ডিপ স্টেট। সব সরকার পতনের পেছনে ছিল মূলত দুটি কারণ, এক – হয় সেই দেশের সরকার আমেরিকার ব্যবসায় ক্ষতি করছিল, এবং দুই – আমেরিকার তাঁবেদারি করছিল না, অথবা আমেরিকাকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছিল।

বাংলাদেশ

এরপর সালটা ২০২৪। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বহুদিন ধরেই নৌঘাঁটি গড়তে চেয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু, শেখ হাসিনা বারবার প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। আর এরপর হঠাৎ কেবল একটা কারণ – “মুক্তিবাহিনীর সংরক্ষণ” নিয়ে সারা দেশ জুড়ে জ্বলে আগুন, তাণ্ডব। পতন হয় হাসিনা সরকারের। মনে করা হয়, শেখ হাসিনার পতনের পিছনেও ডিপ স্টেটের হাত রয়েছে। কারণ, হাসিনা সরতেই CIA-র সদর সংগঠন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের পছন্দের ব্যক্তি মহম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসে। কিন্তু, হাসিনার পরিবর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রবল দাবীদার ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে ইউনুসের আগমন একটি বড় প্রশ্ন উসকে দেয়। আমেরিকা কীভাবে বাংলাদেশের সরকার ফেলেছে, সেই বিষয়ে জানতে আই বাটনে ক্লিক করে দেখুন India Hood-এর এক্সক্লুসিভ ভিডিও।

নেপাল

এরপর সালটা ২০২৫। গত কয়েক বছর ধরেই চিনের সাথে সম্পর্ক বাড়ছিল নেপালের। যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে আমেরিকার। অন্যদিকে, নেপালে রেজিস্ট্রেশন না করার জন্য যে সমস্ত আমেরিকান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছিল, তারা কিন্তু ইচ্ছা করেই কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ, আপনি ভালোভাবে দেখলে বুঝতে পারবেন ওই সমস্ত অ্যাপ ভারত কিংবা অন্যান্য দেশের নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করেছিল, তবে নেপালে করলো না কেন? কারণ, আমেরিকা জানতো নেপালবাসী ফেসবুক নির্ভর, সেটা ব্যবসাকেন্দ্রিক হোক, বা প্রতিবাদের জন্য। তাই, প্রতিবাদে উস্কানি দিতেই তারা জোর করে এই রেজিস্ট্রেশন করেনি। আর এরপর একইভাবে নেপালের সরকার ফেলে দেয় ডিপ স্টেট। ঠিক কীভাবে নেপালের পতন হয়েছিল তা বিস্তারিত জানতে আই বাটনে ক্লিক করে দেখতে পারেন আমাদের ভিডিও। নেপালের সরকার ফেলার পিছনে ডিপ স্টেট রয়েছে তার কট্টর কোনও প্রমাণ না থাকলেও, হয়তো দেখবেন আজ থেকে ৫০-৬০ বছর পর CIA নিজেদের ভুমিকার ডকুমেন্ট প্রকাশ করবে।

ডিপ স্টেট নিয়ে আমেরিকা কী বলছে –

১৯৮৩ সালে CIA একটি প্লেবুক প্রকাশ করে, নাম সাইকোলজিক্যাল অপারেশন ইন গরিলা ওয়ারফেয়ার। যা CIA-র তরফ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দাঙ্গা করার একটি মডিউল। এই মডিউল পড়লে একটা প্যাটার্ন চোখে পড়ে। যেমন –

CIA একটি দেশ বেছে নেয়, যারা আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী নয়। তারপর কাউকে একজনকে ভিলেন বা হিরো বানায়। তারপর হয় ওই ভিলেনের কাজকে একনায়কের রূপ দেওয়া হয়, কিংবা নানা ধরনের জনগণ বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়, আর নাহলে কাউকে হিরো বানিয়ে তাঁকে মেরে দেওয়া হয়। আর প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয় যে সরকার তাঁকে মেরেছে। নাহলে দাঙ্গায় তাঁকে মারা হয়েছে। যার ফলে শুরু হয় প্রতিবাদ। আর এই প্রতিবাদ চলার আগে সরকার একটি ভুল করে। ব্যাস, হিংসাত্মক রূপ নেয় ওই প্রতিবাদ। পাশাপাশি টাকা বিনিয়োগ করা হয় বিরোধী দল এবং দেশের মিলিটারি খাতে। ফলে আর্মির সাহায্যে পতন হয় সরকারের।

অর্থনৈতিক হিটম্যান হিসাবে পরিচিত জন পারকিন্স, আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির সাথে কাজ করতো। তিনি নিজের বই কনফেশন অফ অ্যান আমেরিকান হিটম্যান-এ উল্লেখ করেছেন, তাঁর কাজ ছিল অর্থনীতিকভাবে দুর্বল দেশগুলিকে বা পিছিয়ে পড়া দেশগুলিকে এটা বোঝানো যে আমেরিকা তাদের উন্নয়নের জন্য ঋণ দেবে। অন্যদিকে, চিনও একইভাবে গরীব দেশকে ঋণ দিয়ে তাদের ওপর নিজেদের প্রভাব খাটায়।

এবার আমরা এমন একটি প্যাটার্ন আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যা ডিপ স্টেট সম্পর্কে সমস্ত ধারণা পরিষ্কার করে দেবে।

গুয়াতেমালা থেকে চিলি, ইকুয়েডর থেকে ইউক্রেন – সমস্ত দেশে একই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও দেখবেন আর্মিরা প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়েছে। নেপালেও একই রকম হয়েছে। পাকিস্তানে ইমরান সরকারের পতন হোক, কিংবা ইরাকে বা আফগানিস্থানে – কোথাওই CIA-র মধ্যস্ততার পর সমস্যা কমেনি উল্টে বেড়েছে। এমনকি আরব স্প্রিংয়ের সময় যে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে নেপালেও একই জিনিস দেখা গেল।

কেন এরকম করছে আমেরিকা?

আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ, এবং নিজেকে বিশ্বগুরু। নিজেদের ছাড়া আর কারও উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। তাই বরাবরই ছোট ছোট দেশকে নিয়ন্ত্রণ করে আধিপত্য কায়েম রেখেছে।

এখন যেসব দেশ আমেরিকাকে টেক্কা দিতে পারে, তাদের মধ্যে প্রধান হলো চীন আর রাশিয়া। এই দুই দেশ ডিডলারাইজেশন করে আমেরিকার গুরুত্ব কমাতে চাইছে। কিন্তু, দুজনকে একসাথে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাই চীনকে ঘেঁটে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।

কারণ চিন, নেপাল সহ আরও অন্যান্য দেশকে আমেরিকার ধাঁচে নিজেদের প্রভাবে এনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে।  সুতরাং চীনের প্রভাব ভাঙা, চীনকে অশান্ত করাই এখন আমেরিকার মূল লক্ষ্য। এর সর্বশেষ অধ্যায় ছিল নেপাল, যেটি ছিল চীনপন্থী। আর নেপালের এই অস্থিরতা ভারতের জন্যও এক ধরনের পরোক্ষ হুমকি।

এই প্রক্রিয়ায় আমেরিকাকে সাহায্য করছে নামকরা নেটওয়ার্ক—জর্জ সরোস এবং Carnegie Endowment for International Peace

ভারতে কীভাবে ডিপ স্টেট লাগু করছে আমেরিকা?

দিনটা ২০২৫ সালের ২৫শে আগস্ট। দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু হঠাৎ করেই এক বড়সড় তথ্য ফাঁস করেন। তিনি প্রকাশ্যে আনে ৯০ লক্ষ কোটি টাকার এক ডিলের কথা। এবং জানান রাহুল গান্ধী কীভাবে আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে ভারতকে ভাঙতে চাইছেন। তিনি ঠিক কী বলেছিলেন শুনুন, –

https://www.instagram.com/p/DNuUje_0OvV/?hl=en

আপনাদের জানিয়ে রাখি, ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু হয়েছিল ২০২৩ সাল থেকে। আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জো বাইডেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হলে, আমেরিকার তরফ থেকে ভারতকে বলা হয় ইউক্রেনের সাইড নিতে, এবং রাশিয়ার বিরোধিতা করতে এবং বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপাতে। ভারত জানায়, এটা দুই দেশের ব্যাক্তিগত ব্যাপার, আমরা এতে নাক গলাবো না, ওরা শান্তিপূর্ণভাবে মিটিয়ে নিক। আর তখন থেকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বদনাম করতে শুরু করে আমেরিকা।

বাংলাদেশ, নেপাল কিংবা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি ছোটো, তাই সেখানে ক্ষমতা কিংবা টাকা দিয়ে সরকার ফেলা সহজ। কিন্তু, ভারতের মতো বড় দেশে সেটা করা সহজ নয় বলেই বিভিন্ন উপায়ে, ন্যারেটিভ সাজিয়ে চলছে সরকারকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা। আমেরিকা কীভাবে ভারতকে অশান্ত করতে চাইছে, এবার সেই তথ্য আমরা তুলে ধরবো আপনাদের কাছে।

১। নেপালের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ বাইরের দেশে গিয়ে কাজ করে। নেপালের অর্থনীতি অনেকটাই সেই সমস্ত নাগরিকদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইমিগ্রেশন নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ফলে নেপালের বহু লোক কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। যা নেপালে জনরোষের একটি কারণ।

এবার আপনি সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে থাকা ভারতীয় অভিবাসীদের অবস্থার কথা ভাবুন। যদি না জেনে থাকেন আপনাদের জানিয়ে দিই, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সহ আমেরিকার বহু জায়গায় ভারতীয়দের গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বর্ণবৈষম্যের জেরে মেরেও দেওয়া হচ্ছে একাধিক ভারতীয়দের। ভারতের প্রায় সাড়ে তিন কোটি নাগরিক বিদেশে রয়েছেন, তাই এই সকল মানুষরা প্রভাবিত হচ্ছেন। অর্থাৎ নেপাল আর ভারতে এক ধরনের একটি প্যাটার্ন লক্ষ করা যাচ্ছে।

২। নেপালের এই জেন জি প্রতিবাদের একটি অন্যতম দিক ছিল দুর্নীতি। তাদের দাবি নেতা মন্ত্রীদের সন্তানরা দিনের পর দিন আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করছে, তাদের সন্তানরা দেশের বিভিন্ন সংস্থানে চাকরি করছেন। আর মার খাচ্ছেন আম জনতা।

এবার দেখুন, ভারতেও গত কয়েক বছরে রাজ্য সহ কেন্দ্র সর্বত্র চাকরি নিয়ে স্ক্যাম কতটা তীব্র হয়েছে। চাকরি নিয়ে স্ক্যাম কিংবা মন্ত্রীর পরিবারের ছেলে-মেয়েদের চাকরি পাওয়া দীর্ঘদিন ধরেই হচ্ছে, কিন্তু মানুষের রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সাম্প্রতিক সময়ে কতটা বেড়েছে সেটা সবাই জানেন।

৩। চিলি থেকে শুরু করে বাংলাদেশ, কিংবা পাকিস্তান, যেখানে যেখানে ডিপ স্টেট সরকার ফেলেছে, সেখানে সেখানে প্রতিবাদের আগে উঠেছে ভোট চুরির প্রসঙ্গ। ২০২৫ সালেও ভারতে এই প্রসঙ্গ উঠেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর স্বপক্ষে কোনও কংক্রিট প্রমাণ দিতে পারেনি বিরোধীরা। উল্টে প্রশ্ন আসে, সারা দেশে ভোট চুরির যে সমস্ত উদাহরণ এসেছে তা বিজেপি জেতা রাজ্য থেকে, কংগ্রেসের জেতা কোনও রাজ্যের উদাহরণ নেই কেন? পাশপাশি সম্প্রতি

এছাড়াও, চিন ভারতের জমি দখল করেছে এমন ন্যারেটিভ বিরোধীরা তুললেও,  এখনও পর্যন্ত এর কোনও কংক্রিট প্রমাণ দিতে পারেনি কেউই।

৪। সালটা ১৯৫২। ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় Ford Foundation। উদ্দেশ্য দারিদ্র্যতা হ্রাস, শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন, কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন সহ আরও অনেক কিছু। এই উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন NGO, যেমন – Sabrang Trust, Navsarjan Trust-এ আসতে থাকে বড় অঙ্কের অনুদান। কিন্তু, এই অর্থ সরাসরি দেশের রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনে “জাতীয় স্বার্থবিরোধী”ভাবে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিল BJP। ফলত, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, ভারত সরকার Ford Foundation-কে “ওয়াচ লিস্ট”-এ রাখে। এবং, তাদের কিছু অনুদান FCRA আইন না মেনে দেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত শুরু করে। যার ফলে বর্তমানে ওই সংস্থা থেকে আর বড় কোনও ফান্ড আসেনি গত ১০ বছরে। আন্তর্জাতিক কিছু মিডিয়াও এই সংবাদ প্রকাশ করেছিল। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য খুবই সাধারণ এবং পরিকল্পিত।

৫। যেমনটা আমরা আগেও জানিয়েছি ডিপস্টেটের ব্যাক্তিরা রয়েছে মিডিয়াতেও। কোনও কংক্রিট প্রমাণ না থাকলেও, ভারতের কিছু মিডিয়া হাউসেও দেখা গিয়েছে কিছু অনিয়ম। দেশের মধ্যে Communalism Combat, Newsclick সহ বহু সংস্থার বিরুদ্ধে FCRA আইন ভেঙে ফোর্ড ফাউণ্ডেশন সহ চিন থেকে থেকে অতিরিক্তি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি BBC-র দিল্লি ও মুম্বাইয়ের অফিসের সাথেও লিঙ্ক খুঁজে পায় ED। তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি আয়ের তথ্য লোকানোর অভিযোগ ওঠে, এবং এই মামলাগুলি এখনও ভারতের আদালতে চলছে।

৬। এছাড়াও রয়েছে একাধিক কর্মকাণ্ড, যেমন ২০১৫ সালের অ্যাওয়ার্ড বাপসি, ইনটলারেন্স ক্যাম্পেন, দলিত ক্যাম্পেন, রাফায়েল ডিল, কাবেরি ইঞ্জিন প্রকল্প, অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষদের মারছে, ভোট চুরি – এগুলি এক একটি ন্যারেটিভ যা বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে ভারতের রেজিমি দুর্বল করার চেষ্টা করেছে বলে মনে করে জিওপলিটিক্যাল বিশেষজ্ঞ পভনিত সিং।

৭। জিওপলিটিক্যাল বিশেষজ্ঞ পভনিত সিং আরও জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সরকারকে দুর্বল করার সমস্ত ন্যারেটিভ রয়েছে ডিপ স্টেটের কাছে, যার মধ্যে সব থেকে বড় দুটি বিষয় – ডিলিমিটেশন এবং কাস্ট সেনসাস।

  • ডিলিমিটেশন হল— নির্বাচন করার জন্য দেশ বা রাজ্যের ভৌগোলিক সীমানা ভাগ করে দেওয়া বা নতুন করে নির্ধারণ করা। সহজ ভাষায়, লোকসভা বা বিধানসভার প্রত্যেকটি আসনে যাতে প্রায় সমান সমান ভোটার থাকে, সেজন্য ডিলিমিটেশন করা হয়।
  • কাস্ট সেনসাস হল – জাতিগতভাবে জনগণনা। ফলত চাকরি বা অধিকারের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ এবং সুবিধা দেওয়ার সময়ে সরকার আরও দক্ষ নিয়ম চালু করতে পারে। এমনকি কারা পিছিয়ে আছে, তাদের মুল্যায়ন করে সহায়তা করা যাবে। অসমতা কমানো যাবে।

৮। এবার জানাবো রাহুল গান্ধীর সাথে আমেরিকান বিনিয়োগকারী জর্জ সরোসের কানেকশনের কথা। জর্জ সরোস এমন একজন ব্যাক্তি যাকে তাঁর নিজের দেশ হাঙ্গেরিতেই আটকানোর জন্য স্টপ সরোস আইন লাগু করা হয়েছে। তাঁকে গ্লোবাল ভিলেন বলা হয়। এখন এই ব্যাক্তির ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন নামক একটি আন্তর্জাতিক NGO-র ভাইস প্রেসিডেন্ট সালিল শেট্টির সাথে দেখা যায় রাহুল গান্ধীকে। যা নিয়ে শুরু হয়ে চাপানউতোর। হঠাৎ সরোস ঘনিষ্ঠ ভারতে কেন?

৯। বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া মোদীর বিভিন্ন বিদেশ সফর নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছে। কিন্তু, আপনি জানলে অবাক হবেন ২০২৫ সালের শেষ ৯ মাসে ৬ বার বিদেশ সফর করেছেন রাহুল গান্ধী। যার মধ্যে ১১ দিনের ইতালি সফর, ৬ দিনের ভিয়েতনাম সফর, ৭ দিনের দুবাই সফর, ৮ দিনের কাতার সফর, ১২ দিনের লন্ডন সফর, এবং ৫ দিন মালয়েশিয়াতেও থাকেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের ব্যাক্তিগত সফরের সময়েও কেন্দ্র সরকারের কাছে জানিয়ে যাওয়া উচিত অন্তত ১৫ দিন আগে। কিন্তু, রাহুল গান্ধী বলেছেন এগুলি তাঁর নিজস্ব খরচে, নিজস্ব ব্যাক্তিগত সফর। কিন্তু প্রশ্ন এখানে অনেক। দেশের কোনও ফোরামে রাহুল গান্ধীকে দেখা যায় না কিন্তু বিদেশি ফোরামে রাহুল গান্ধীকে এতবার দেখা যায় কেন? ব্যাক্তিগত সফরে গিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করেন কেন? ভারত বিরোধী নেতা ইলহান ওমারদের সাথে এত বৈঠকে কেন রাহুল গান্ধী? উত্তর অধরা।

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥