সৌভিক মুখার্জী, কলাকাতা: বাঙালির ক্যালেন্ডারে এমন কিছু সময় রয়েছে, যেগুলির জন্য অপেক্ষা করতে হয় গোটা বছর ধরে। তার মধ্যে অন্যতম হল দেবীপক্ষ (Devi Paksha)। দূর্গাপুজোর আনন্দ, মাতৃশক্তির আরাধনা আর ভক্তির আবহ এই সময়ের সঙ্গে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে আপনি কি জানেন, দেবীপক্ষ আসলে কী এবং কতদিন ধরে চলে? আর কেনই বা এর নাম হল দেবীপক্ষ? সবটা জানিয়ে দেব আজকের এই প্রতিবেদনে।
দেবীপক্ষের শুভ সূচনা
আমরা সকলেই জানি যে, বছরে মোট ২৪টি পক্ষ থাকে। তার মধ্যে ১২টি কৃষ্ণপক্ষ আর ১২টি শুক্লপক্ষ। প্রতিমাসে দুটি করে পক্ষ থাকে। সেই সূত্রে মহালয়ার পর দিন অর্থাৎ শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষ আর এটি চলে পূর্ণিমা পর্যন্ত। এই ১৫ দিন সময়কালকেই মূলত দেবীপক্ষ বলে মানা হয়।
অনেকে মনে করেন যে, মহালয়া থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষ। তবে আসলে তেমনটা নয়, মহালয়া পর্যন্ত থাকে পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের শেষ দিন অর্থাৎ অমাবস্যা তিথিকে বলা হয় মহালয়া। সেই অমাবস্যা শেষ হয়ে প্রতিপদ তিথি পড়লেই শুরু হয় দেবীপক্ষ।
দেবীপক্ষের মাহাত্ম্য
দেবিপক্ষ আসলে দেবীকে আরাধনা করার সময়। এই পক্ষের প্রথম দিন থেকেই দেবীর নবরূপে পুজো শুরু হয়। প্রতিপদ থেকেই হয় দেবীর বোধন, বহু বাড়িতে চন্ডীপাঠের আয়োজন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই পক্ষে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে ত্রিলোককে রক্ষা করেছিলেন। তাই এই সময়টিকেই মাতৃশক্তি জাগরণের মুহূর্ত হিসেবে ধরা হয়। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত চলে দুর্গাপুজো, আর শেষ হয় কোজাগরী পূর্ণিমাতে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ, দেবীপক্ষ মানে যে শুধুমাত্র দুর্গাপুজো এমনটা নয়, লক্ষ্মীপুজোও বটে।
মহালয়া আর দেবীপক্ষের যোগসূত্র
জানিয়ে রাখি, মহালয়া আসলে পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিন দেবী দুর্গা পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তাই ভোরবেলা চণ্ডীপাঠ, মহিষাসুরমর্দিনী, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ, সবই এই দিনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর মহালয়ার মাধ্যমেই শেষ হয় পিতৃপক্ষ এবং শুরু হয় দেবীপক্ষের আবাহন।
আরও পড়ুনঃ মহালয়ার দিন অনেকটাই চড়ল সোনার দাম, রুপোর গায়ে আগুন! আজকের রেট
আর যদি বলি কেন এর নাম দেবীপক্ষ, তাহলে কারণ একটাই— এই সময়তে মাতৃশক্তির পুজো হয়। দেবী দুর্গা থেকে দেবী লক্ষ্মী, সব দেবীর আরাধনা করা হয় এই পক্ষে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে দেবীপক্ষ।