বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: গত 8 সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের DA মামলার (Bengal DA Case) শুনানি শেষ হয়। যদিও রায়দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিদের তরফে জানানো হয়েছিল, কোনও পক্ষ যদি অতিরিক্ত কিছু বলতে চান, সেক্ষেত্রে লিখিত বয়ানে তা জমা দেওয়া যেতে পারে। সেই মতোই সোমবার সুপ্রিম কোর্টে লিখিত বক্তব্য জমা দিল রাজ্য সরকার। ওই লিখিত বয়ানে ঠিক কী জানিয়েছে রাজ্যে?
লিখত বয়ানে সুপ্রিম কোর্টে বক্তব্য জানাল রাজ্য
রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেছেন, আদালতের আগ্রহ ছিল কোন কোন রাজ্য DA দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI মানে না? আদালতের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই সুপ্রিম কোর্টকে লিখিতভাবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ভারতে এমন অন্তত 10টি রাজ্য রয়েছে যারা DA প্রদানের ক্ষেত্রে ভোক্তা মূল্য সূচকের তোয়াক্কা করে না।
এদিন, রাজ্যের পক্ষে প্রবীন আইনজীবীর তরফে লিখিত বয়ানের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাকারি সরকারি কর্মীদের আইনজীবী করুণা নন্দী আদালতের কাছে নিজের বক্তব্য পেশ করার অনুমতি চেয়েছেন। এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিল, নিজস্ব বক্তব্য জানানোর জন্য সব পক্ষ এক সপ্তাহ সময় পাবে। সেই সময়ের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক বলেই জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA মামলার শুনানি শেষ হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বকেয়া DA এর অন্তত 25 শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এজন্য অবশ্য টানা ছয় সপ্তাহ সময় পেয়েছিল রাজ্য সরকার। যদিও সেই সময়সীমার মধ্যে কর্মীদের সিকিভাগ বকেয়াও মেটায়নি রাজ্য। উল্টে কর্মীদের বকেয়া মেটাতে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানায় সরকার।
বলা বাহুল্য, রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মামলার মূল বিষয় ছিল, কেন্দ্রীয় হারে DA দিতে হবে! এ নিয়ে অবশ্য 2022 সালে কলকাতা হাইকোর্ট সরকারি কর্মীদের পক্ষে রায় দেয়। যদিও তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছিল রাজ্য সরকারের। এরপর হাইকোর্টের সেই রাইকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।
অবশ্যই পড়ুন: ‘আমাদের ২০০ করতে দেওয়া হয়নি!’ হারের পর আজব যুক্তি পাক অধিনায়ক সলমানের
বাংলার সরকারের বক্তব্য ছিল, কর্মীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়। এটা কর্মীদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না। তার উপর কর্মীরা যা আবদার করছেন সেই কেন্দ্রীয় হারে DA দেওয়াটা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। তাই কেন্দ্রের সাথে তুলনা চলে না। এদিকে কর্মীদের কথায়, নির্দিষ্ট সময়ে কর্মচারীদের DA দেওয়াটা সরকারের নীতিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে DA দিতে হবে। প্রয়োজনে বকেয়া কিস্তিতে দিলেও মেনে নেওয়া যাবে।
না বললেই নয়, এতদিন রাজ্য বনাম সরকারি কর্মচারীদের আইনি লড়াই চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। তবে DA মামলার শুনানি শীর্ষ আদালতের শেষ হলেও বিচারপতিরা রায়দান স্থগিত রেখেছেন। কাজেই, রাজ্যের কর্মীদের DA মামলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা এখনও অপেক্ষার ঘরেই সীমাবদ্ধ। ফলত, সুপ্রিম কোর্ট শেষ পর্যন্ত এই মামলায় কী রায় দেয়, সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও বিকল্প পাচ্ছেন না রাজ্যের কর্মীরা। এদিকে, নানান প্রকল্প মিলিয়ে কোষাগারের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় সময় প্রয়োজন রাজ্যেরও!