সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: অসংগঠিত খাতে কাজ করা শ্রমিকদের ভবিষ্যতের চিন্তা, সন্তানের পড়াশোনার খরচ বা চিকিৎসার দায়, সবকিছু যেন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই সমস্যার সমাধান করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিনা মূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা (Bina Mulya Samajik Suraksha Yojana) চালু করেছে। এটি এমন একটি প্রকল্প, যেখানে শ্রমিকরা শুধুমাত্র নিজেদের নয়, বরং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে। পড়াশোনা, দুর্ঘটনা, চিকিৎসা কিংবা ক্ষতিপূরণ, সব কিছুর জন্য মিলবে আর্থিক সহায়তা। আজকের প্রতিবেদনে এই স্কিম সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হল।
সামাজিক সুরক্ষা যোজনা কী?
জানিয়ে রাখি, এই প্রকল্প মূলত পশ্চিমবঙ্গের অসংগঠিত খাতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য চালু করা হয়েছে। নির্মাণ কর্মী, পরিবহন কর্মী বা অন্য যে কোনও খাতের শ্রমিক, যারা প্রতিদিন পরিশ্রম করেই সংসার চালান, তারা এই প্রকল্পের আওতায় সরকারি সুবিধা পায়। শ্রমিকের সন্তানের শিক্ষা থেকে শুরু করে পরিবারের চিকিৎসা, ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা সবকিছু কভার করে এই স্কিম।
কারা আবেদন করতে পারবে?
এই স্কিমের সুবিধা পেতে গেলে অবশ্যই কিছু শর্ত মানতে হবে। সেগুলি হল—
- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
- অসংগঠিত শ্রমিকরা শুধুমাত্র এখানে আবেদন করতে পারবে।
- পরিবারের মাসিক আয় ৬৫ হাজার টাকার বেশি হলে চলবে না।
কী কী সুবিধা মিলবে?
এখানে শিক্ষা খাত থেকে শুরু করে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, সবকিছুর সুবিধা মিলবে। যেমন—
শিক্ষা খাতে সহায়তা
এই প্রকল্পের আওতায় সরকার সর্বাধিক দুটি সন্তানের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্য দেবে। প্রথমত, একাদশ শ্রেণীতে বছরে ৪০০০ টাকা, দ্বাদশ শ্রেণীতে বছরে ৫০০০ টাকা, আইটিআই বা স্নাতক স্তরে বছরে ৬০০০, টাকা স্নাতকোত্তর স্তরে বছরে ১০,০০০ টাকা, পলিটেকনিক স্তরে বছরে ১০,০০০ টাকা এবং ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং স্তরে বছরে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা করা হবে।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা
পরিবারের কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হলে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিমের আওতায় আর্থিক সহায়তা মেলে। সাধারণ চিকিৎসার খরচ হিসেবে বছরে সর্বাধিক ২০,০০০ টাকা, বড় অপারেশনের ক্ষেত্রে বছরে সর্বাধিক ৬০,০০০ টাকা এবং দুর্ঘটনায় আহত হলে বছরে সর্বাধিক ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
ভবিষ্যতের নিরাপত্তা
যদি উপভোক্তা মারা যায়, তাহলে পরিবার এই স্কিমের আওতায় ৬০,০০০ টাকা পাবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারানো বা দুটি হাত কিংবা পা অকেজো হয়ে গেলে, ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা মিলবে।
আরও পড়ুনঃ প্রেমিকের ফাঁদে পা দিয়ে বন্দি! বিহার থেকে উদ্ধার চন্দনগরের নিখোঁজ দশম শ্রেণির ছাত্রী
কীভাবে আবেদন করবেন?
এই স্কিমে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। এর জন্য সরাসরি https://wblabour.gov.in/ ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর রেজিস্ট্রেশন করে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদন করতে হবে। তবে এর পাশাপাশি এলাকার ব্লক অফিসে গিয়েও অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সেখানে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করে তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বলতে গেলে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কপি, ইনকাম সার্টিফিকেট এবং পরিবারের সদস্যদের নাম ও সচিত্র পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়।