প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে গত বছর তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য। দিকে দিকে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। আর সেই তিলোত্তমাকাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অনিকেত মাহাতো। এবার তাঁর বদলির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। অনিকেত মাহাতোকে আরজি কর মেডিকেল হাসাপাতালেই পোস্টিং দিতে হবে। বুধবার এমনই নির্দেশ দিল হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ।
পোস্টিং মামলায় বড় ধাক্কা রাজ্যের!
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ ৩ ডাক্তারের পোস্টিং মামলায় শুরুতেই কলকাতা হাইকোর্টে প্রথমে ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে স্যাটে নয়, অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লা নাইয়াদের আবেদনের শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টেই। মামলাকারী ডাক্তারদের অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ের সময় দেবাশিস হালদারকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু মেধাতালিকা বেরোলে দেখা যায়, পোস্টিং অর্ডারে তাঁর নাম রয়েছে মালদার গাজোলে সাব ডিভিশনাল হাসপাতালে। আসফাকুল্লা নাইয়ার ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিংয়ের সময় ছিল আরামবাগ মেডিকেল কলেজের নাম। পোস্টিং অর্ডারে তা বদলে হয়েছে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতাল।
আরজি কর মেডিকেল হাসাপাতালেই পোস্টিং
শুধু তাই নয় আরও অভিযোগ উঠেছে যে কাউন্সেলিংয়ের সময় ফার্স্ট ইয়ার সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে অনিকেত মাহাতোর নাম ছিল আরজি কর মেডিকেল কলেজে। পোস্টিং অর্ডারে সেই জায়গা বদলে হয়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ। তাই সেই নিয়ে রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এই ৩ ডাক্তার। সেই সময় স্টেস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে এই মামলা পাঠানোর আর্জি জানানো হলে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু তা খারিজ করে দেয়। আর এবার জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর মামলাতেও ধাক্কা খেল রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আরজি কর মেডিক্যাল হাসাপাতালেই অনিকেত মাহাতোকে পোস্টিং দিতে হবে।
কী বলছেন বিচারপতি বসু?
আজ অর্থাৎ বুধবার অনিকেত মাহাতোর পোস্টিং মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে উঠলে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু স্পষ্ট জানিয়েছেন, অবিলম্বে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের পরিবর্তে অনিকেত মাহাতোকে আরজি করে পোস্টিং দিতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ে নিয়োগপত্রও দিতে হবে রাজ্যকে। এখানেই শেষ নয়, রাজ্যকে তিরস্কার করে এও বলা হয়েছে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে সকলকে পোস্টিং করা হয়ে থাকে সেটি বেশিরভাগ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে মানা হলেও অনিকেত সহ আরও এক চিকিৎসকের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এমনকি তার কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা রাজ্য সরকার আদালতে দিতে পারেনি। তাই রাজ্যের ‘সিরিয়াস’ ভুল হিসেবে নোটিফিকেশন খারিজ করে অনিকেতের রায়গঞ্জে যাওয়ার নোটিস বাতিল করে দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: টাকা চাওয়ার অভিযোগ! বুদবুদে সিভিক ভলান্টিয়ারকে জুতোপেটা ড্রাইভারের
প্রসঙ্গত, আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার পর জাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অনিকেত। কিন্তু তাঁকে নিয়ে রায় দিলেও কলকাতা হাইকোর্ট এখনও পর্যন্ত আসফাকুল্লা নাইয়া এবং দেবাশিস হালদার এই দুজন চিকিৎসকের বদলি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তাই তাঁদের বদলির ইস্যুটি এখনও ধোঁয়াশায় থাকছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁদের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের বদলি খারিজ হবে। কারণ তাঁদেরও অভিযোগ, এমডি, এমএস প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই তাঁদের রাজ্য সরকারের তরফে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এদিকে তখন তাঁরা চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। এখন দেখার বিষয় হাইকোর্ট কী রায় দেয়।