প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কিছুদিন আগেই জনসমক্ষে রাহুল গান্ধী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হাইড্রোজেন বোমা ফাটাবেন। তার কিছুদিন পরেই এবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘ভোট চুরির প্রমাণ’ তুলে ধরলেন রাহুল। অভিযোগ করলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আর সেই অভিযোগ উঠতেই নতুন ব্যবস্থা করছে কমিশন (Election Commission Of India)। ভোটার তালিকা থেকে যত্রতত্র নাম বাদ দেওয়ার জন্য নেওয়া হল বড় পদক্ষেপ।
রাহুলের অভিযোগেই বড় পদক্ষেপ ইলেকশন কমিশনের
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ‘ভোটচুরি’র একের পর এক অভিযোগ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। ‘প্রমাণ’ হিসেবে পেশ করেছিলেন কর্ণাটকের আলন্দ বিধানসভা আসনে ‘নিয়ম বহির্ভূত ভাবে’ ৬০০০-এরও বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার উদাহরণ। দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজুর কেন্দ্রের উদাহরণও। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই নড়েচড়ে বসে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ভোট চুরি বিতর্কের মধ্যে নিজেদের পোর্টালে নতুন ‘ই-স্বাক্ষর’ ব্যবস্থা চালু করল নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে কমিশন জানিয়েছে, এই ব্যবস্থায় একমাত্র আধার কার্ডের মাধ্যমেই কাজ করা যাবে।
প্রয়োজন আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর সংযোজন
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, এত দিন ভোটার তালিকায় গ্রাহকের নাম তোলার, নাম বাদ দেওয়া বা তথ্য সংশোধনের জন্য ফর্ম ফিল-আপের সময় ভোটারের এপিক নম্বর দিতে হত। আলাদাভাবে আর কোনও তথ্য যাচাই হত না। তবে এবার ফর্ম ফিলআপের সময় আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা মোবাইল নম্বর দিয়ে ভেরিফিকেশন বা যাচাই করতে হবে। গত মঙ্গলবার থেকে চালু হওয়া নয়া ব্যবস্থায় তিনটি ফর্ম অর্থাৎ নাম তোলার জন্য ফর্ম ৬, নাম বাদ দেওয়ার জন্য ফর্ম ৭ বা তথ্য সংশোধনের জন্য ফর্ম ৮ ফিল-আপের সময়েই আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাই করা হবে। দেখা হবে, যাঁর নাম বাদ যাবে, তিনি নিজেই আবেদন করছেন, না কি অন্য কেউ।
কীভাবে আবেদন করতে হবে?
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবেদনকারীকে প্রথমে ফর্ম ফিল আপ করতে হবে। এর পর ফর্ম জমা দিতে গেলে একটি ‘ই-স্বাক্ষর’ পোর্টাল খুলতে হবে। সেখানে আবেদনকারীকে নিজের আধার নম্বর দিতে হবে। তাতে ওই আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড যাবে। সেই ওটিপি দিলে তবেই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে এবং আবেদনকারীর আবেদন সঠিক ভাবে জমা পড়বে। আসলে প্রায় এক মাস আগে থেকেই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা মোবাইল নম্বর দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এতদিন কাজ করছিল। অবশেষে সেটি প্রকাশ্যে আসল।
আরও পড়ুন: ‘আলিপুরদুয়ারে দুর্গা মন্দিরের মাইকে আজান শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী’ বিস্ফোরক BJP বিধায়ক! ভিডিও
প্রসঙ্গত, ভুয়ো আবেদন জমা পড়ার অভিযোগ নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করেছে। কমিশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে মহারাষ্ট্রের রাজুরা কেন্দ্রে নতুন ভোটার হিসাবে নাম তোলার জন্য ৭,৭৯২টি আবেদন জমা পড়েছিল। যাচাইয়ের পর দেখা যায় ৬,৮৬১টি আবেদন অবৈধ, তাই সেগুলি বাতিল করা হয়। অন্যদিকে আলান্দে ৬,০১৮টি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মাত্র ২৪টিই আসল বলে প্রমাণিত হয়েছিল বলে কমিশন জানিয়েছে। কমিশনের মতে, কোনও সাধারণ মানুষ অনলাইনে বসে কারও ভোট কেটে দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে নাম মুছে দেওয়ার জন্য শুধু আবেদন করলেও নাম বাদ যায় না।