India Hood: ভারত-চিনকে কাবু করতে আমেরিকার ‘ভয়ঙ্কর’ প্ল্যান!

Published:

America

যদি বলি এক ঢিলে দুই নয় একসাথে পাঁচ পাখি মারা যায় – বিশ্বাস করবেন? এবার এমনই এক মারাত্মক প্ল্যান করেছে আমেরিকা (America), যা কেউ কোনওদিন কল্পনাও করতে পারেনি। এই পাখি কিন্তু কোনও সাধারণ পাখি নয়, এক একটি দেশ – যার মধ্যে রয়েছে ভারত আর চিনও!

আর, আমেরিকার এই নতুন ঢিল হল আফগানিস্থানের ৩৩০০ একর এলাকায় ছড়িয়ে থাকা বাগরাম এয়ারবেস।

১৮ই সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের এক প্রেস কনফারেন্সে হঠাৎ করেই আফগানিস্থানের বিশাল বাগরাম এয়ারবেস চেয়ে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “বাগরাম এয়ারবেস আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি না দেয়, আমি দেখিয়ে দেবো আমি কী করতে পারি।“

এর পরেই তিনি টুইট করে হুমকি দেন, “বাগরাম আমাদের দিতেই হবে, না দিলে খুবই খারাপ কিছু হতে পারে।“

https://x.com/Hoffman8Jon/status/1969799463230398839

পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয় তালিবান প্রধানও। ২১শে সেপ্টেম্বর, জাবিনুল্লাহ মুজাহিদ জানান, “কাউকে এক ইঞ্চিও আফগানিস্থানের জমি ছাড়বো না।“ অন্যদিকে আর এক তালিবান নেতা জানান, “প্রয়োজনে ফের শুরু হবে সুইসাইড অ্যাটাক।”

বর্তমানে, এই একটি এয়ারবেসকে কেন্দ্র করেই সরগরম বিশ্ব রাজনীতি। চিন্তায় আফগানিস্থান, ভারত সহ চিনও।

আজ আমরা বলবো কেন এই বেস আফগানিস্থানের শুধুমাত্র এক টুকরো জমি নয়, বরং পাঁচ দেশকে কাবু করার কৌশল।

কিন্তু, কী এই বাগরাম এয়ারবেস? কেন যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প?

দিনটা ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১। যে আমেরিকার মদতে তৈরি হয়েছিল আল কায়েদা, বেড়ে উঠছিল ওসামা বিন লাদেন। সেই লাদেনই এবার নাড়িয়ে দেয় আমেরিকার ভীত। সুইসাইড প্লেন অ্যাটাক করে গুঁড়িয়ে দেয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১১০ তলার দু-দুটি বিল্ডিং। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। যেটি আমেরিকার ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত অধ্যায়।

এবার সেই অ্যাটাকের বদলা নিতে এবং আল কায়েদাকে সম্পূর্ণরূপে খতম করতে ওই বছরেই আফগানিস্থানে প্রবেশ করে আমেরিকা। কারণ সেই সময়ে আফগানিস্থানে আল কায়দাকে আশ্রয় দিয়েছিল তালিবানরা। আর এই আল কায়দাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ‍করতে, ২০০১ সাল চলতে থাকে টানা অপারেশন। নিজেদের প্রভাব বাড়াতে তৈরি করা হয় একাধিক বেস। এর মধ্যেই একটি ছিল বাগরাম এয়ারবেস। যেটি ছিল আফগানিস্থানের রাজধানী কাবুলের ৬০ কিমি উত্তরে, যা সেই সময়ে আমেরিকার সব থেকে বড় এয়ারবেস হিসাবে পরিচিত ছিল। পাশাপাশি এই বেস একটি লজিস্টিক হাব, ৭ কিমি লম্বা রানওয়ে, স্টোরেজ সহ আরও নানান কাজে ব্যবহৃত হত। একটা সময় ওই বেসে এক লক্ষেরও বেশি মার্কিন সৈন্য বসবাস করতো। কিন্তু কয়েকশো কোটি টাকা ঢেলে আমেরিকা এই বেস সাজালেও, প্রকৃতপক্ষে, ১৯৫০ সালে এই বেস তৈরি করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়িন।

এরপর ২০১১ সালে, অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার চালিয়ে লাদেনকে খতম করে আমেরিকা। কিন্তু, তখনও সম্পূর্ণরূপে খতম হয়নি আল কায়দা। তাই চলতে থাকে অপারেশন।

কিন্তু, ২০২০ সালের দিকে ফের আফগানিস্থান দখল করতে প্রস্তুত হয় তালিবানরা। তখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন ট্রাম্প। তিনি তালিবানদের সাথে একটি আলোচনা করে, এবং আফগানিস্থান ছেড়ে যাওয়ার একটি শর্ত দেয়। সেটি হল – আমেরিকাকে সসম্মানে যেতে দিতে হবে, যাতে সারা বিশ্বের কাছে এটা দেখায় যে আমেরিকাকে তালিবানরা ছুতেও পারেনি, বা আমেরিকাকে তালিবানরা ভয় পায়। এই আলোচনা হয় কাতারের রাজধানী দোহায়।

এরপর সালটা ২০২১। ট্রাম্পের পর দেশের ৪৬ তম রাষ্ট্রপতি হন জো বাইডেন। তিনি ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের অর্ডার এবং আলোচনা পরিবর্তন না করলেও, নিজে নতুন কিছু অর্ডার দেন। যার মধ্যে একটি ছিল, সমস্ত আমেরিকান সৈন্য এবং আধিকারিকরা তখনই যেন আমেরিকায় ফেরে। সমস্ত জিনিসপত্র, অস্ত্র-শস্ত্র রেখেই তাঁরা যেন আফগানিস্থান ত্যাগ করে। এরপর আমেরিকা শূন্য হয় আফগানিস্থান। আর সমস্ত জিনিস এসে পড়ে তালিবানদের হাতে।

আর এর পরেই, পাকিস্তানের সহায়তায় আফগানিস্থানে ঢুকতে শুরু করে চিন। আর অন্যদিকে, আমেরিকার ছেড়ে যাওয়া হাতিয়ার ঘুরপথে আফগানিস্থান থেকে পাকিস্তানে এনে ভারতের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সন্ত্রাসমূলক কাজে ব্যবহার করে পাকিস্তান।

পাশাপশি এই এয়ারবেসটি চিনের বর্ডারের খুবই কাছে অবস্থিত। যেখানে চিনের শিনপিঙ্গয়ের কাশঘর নামক ওই স্থানে চিনের নিউক্লিয়ার কার্যকলাপ চলে।

কিন্তু, হঠাৎ করে কী এমন হল, যার জন্য এই এয়ারবেস দখল করতে ফের মাঠে নেমে পড়ল আমেরিকা?

চিন, ভারত ও রাশিয়ার হুমকি!

২০২৫-এ ফের রাষ্ট্রপতি হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু করে ট্যারিফ যুদ্ধ। যার মূল উদ্দেশ্য আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী নয় এমন দেশগুলিকে বাগে আনা। কিন্তু, আমেরিকার এই ট্যারিফ যুদ্ধে এক মহা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ভারত, চিন, ব্রাজিল ও রাশিয়ার মতো বেশ কিছু দেশ। কারণ এই দেশগুলি এক জোট বাঁধে, এবং BRICS-এর মাধ্যমে ডলারের গুরুত্ব কমিয়ে নতুন অর্থ ব্যবস্থা চালু করে। ফলত কিছুটা ব্যাকফুটে হটে আমেরিকা।

গোদের ওপর বিষফোঁড়া সৌদি-পাকিস্তান!

অন্যদিকে, আমেরিকার সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক কখনও ভালো তো কখনও খারাপ। কিন্তু, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখেছি। এরপর হঠাৎ করেই, ২০শে সেপ্টেম্বর এক অবাক করা ঘটনা দেখল সারা বিশ্ব। পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়ে সৌদি আরব জানিয়েছে – এবার থেকে পাকিস্তানকে আক্রমণ মানে সৌদিকে আক্রমণ, পাকিস্তানের শত্রু মানে সৌদির শত্রু। এই ঘটনা ভারতের জন্য আশঙ্কাজনক মনে হলেও, এটি আমেরিকার জন্যও একটি হুমকি! কারণ, সৌদি আরবের কাছে নিজস্ব কোনও নিউক্লিয়ার পাওয়ার নেই। তাই পাকিস্তানের সাথে সৌদির হাত মেলানোর অন্যতম কারণ নিউক্লিয়ার পাওয়ার। অর্থাৎ, যে পাকিস্তানকে এতদিন আমেরিকা সমর্থন করে এল, এবার সেই পাকিস্তান নিজেকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার দেখিয়ে অন্য কাউকে সহায়তা দিচ্ছে, আবার আমেরিকাকে না জানিয়েই! এটা আমেরিকার অহংবোধের ঘোর বিরোধী। আর সৌদি আরব একটি উন্নত দেশ, পাশাপাশি তাদের অর্থের অভাব নেই। এই পরিস্থিতিতে সৌদি যে কোনও সময়ে আমেরিকার শত্রু হয়ে উঠতে পারে! যা আমেরিকার জন্য অন্যতম চিন্তার কারণ।

এবার আপনাদের জানাবো, কীভাবে এক ঢিলে পাঁচ পাখি মারার প্ল্যান করছে আমেরিকা!

দিনটা ১৮ই সেপ্টেম্বর। সন্ত্রাস রুখতে হবে, এমনই এক কারণ দেখিয়ে হঠাৎ আফগানিস্থানের বাগরাম এয়ারপোর্ট ফেরত চান আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু, এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু রহস্য। এবার সেই রহস্যগুলি তুলে ধরবো এক এক করে।

প্রথমত – আগফানিস্থানে পাওয়া যাচ্ছে রেয়ার আর্থ। বিশ্বের এখন এক অতি মুল্যবান উপাদান, যা AI, সেমি কন্ডাক্টার ইন্ডাস্ট্রি, স্পেস ইন্ডাস্ট্রি, ডিফেন্সে ব্যবহৃত হয়। বাগরাম এয়ারপোর্ট কবজায় এলে, সেই রেয়ার আর্থের অধিকার পাবে আমেরিকাও।

দ্বিতীয়ত – আফগানিস্থানের বাগরাম এয়ার বেস থেকে ৭০০ কিমি দূরেই রয়েছে চিনের পরমাণুঘাঁটি। অর্থাৎ বাগরাম এয়ারবেসের পুনরায় নিয়ন্ত্রণ পেলে চিনের ওপর সহজেই নজর রাখতে পারবে আমেরিকা। অন্যদিকে, আফগানিস্থানের ওপর চিনের প্রভাব খুব সহজেই কমিয়ে ফেলতে পারবে আমেরিকা।

তৃতীয়ত – একবার ম্যাপে আফগানিস্থানের অবস্থানটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। চিনের ওপর তো নজরদারি হলোই, পাশাপাশি আফগানিস্থানে বেস করে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমেও সফলভাবে চোখ রাখতে পারবে আমেরিকা। উল্টে, পকিস্তান থেকে যদি সৌদি আরবে কোনও ধরনের নিউক্লিয়ার কার্যক্রম করে তাও চাইলে বন্ধ করতে পারবে আমেরিকা। আবার সরাসরি নজর রাখতে পারবে সৌদি আরব সহ ভারত, ইরাকের মতো দেশগুলিতে। প্রয়োজনে এত বড় বেস থেকে যখন তখন করতে পারবে সামরিক প্রত্যাঘাতও। অর্থাৎ, এক ঢিলে দুই নয় ৫ দেশের ওপর নজর রাখবে আমেরিকা।

চতুর্থত – বর্তমানে আফগানিস্থানের সরকার চালাচ্ছে তালিবানরা। কিন্তু, যদি বাগরাম এয়ারবেস পুনরায় আমেরিকা অধিকার করতে পারে তবে আফগানিস্থানে তালিবানদের ওপর কড়া নজর রাখতে পারবে আমেরিকা। অন্যদিকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিলেও তাও কড়া হাতে দমন করতে পারবে।

পঞ্চমত – বহুদিন ধরেই, সেন্ট্রাল এশিয়ার ওপর নিজেদের প্রভাব ও বাণিজ্য বিস্তার করতে চাইছে আমেরিকা। তাই আফগানিস্থানের এই এয়ারবেস দখল করলে, আমেরিকা খুব সহজেই নিজেদের প্রভাব যেমন বাড়াতে পারবে, তেমনই বাড়াতে পারবে বাণিজ্য। আর এটাকে সফল করার জন্য আমেরিকা ইতিমধ্যেই একটি পদক্ষেপও নিয়েছে। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইরানের চবাহার পোর্টের ওপর। কারণ, ইরানের ওই পোর্টের মাধ্যমে খুব কম সময় এবং অল্প খরচে বাণিজ্য করতে পারে ভারত, আফগানিস্থান সহ আরও দেশ।

আপনার কী মনে হয়, আমেরিকা কি আদেও দখল করতে পারবে বাগরাম এয়ারবেস? দমাতে পারবে তালিবানদের? সফল হবে এক ঢিলে পাঁচ দেশকে প্যাঁচে ফেলার প্ল্যান?

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥