বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: জাপানের ইতিহাসে নতুন কিছু ঘটতে চলেছে। শনিবার, দেশটির শাসক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্বের নির্বাচনে নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত হলেন প্রাক্তন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, সানায়ে যদি সংসদীয় ভোটে জিততে পারেন, তবে তিনি হয়ে উঠবেন জাপানের ইতিহাসের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী (Japan First Female PM)। তবে তার আগে জেনে নেওয়া দরকার তাকাইচির পরিচয়।
জাপানে পুরুষ প্রধান রাজনীতিতে নতুন মোড়!
রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ অর্থাৎ শনিবার জাপানের শাসকদলের নেতৃত্বের ভোটে সানায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজমি। জানা গিয়েছে, প্রধান নেতা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে 183টি ভোট পেয়েছিলেন তাকাইচি। অন্যদিকে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরোর ছেলে কোইজমি পেয়েছিলেন 146টি ভোট। প্রথম দফায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না আসায় দ্বিতীয় দফার রান অফ ভোটে 295 জন সংসদ সদস্য এবং প্রায় 10 লক্ষ এলডিপি সদস্য ভোট দিয়েছিলেন। তাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হন সানায়ে। জানা যাচ্ছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট আয়োজিত হবে। সেখানে জিততে পারলেই, জাপানের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি।
বিশ্লেষক মহলের অনেকেই মনে করছেন, তাকাইচি যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানের সিংহাসনে বসেন তবে জাপানি সমাজ এবং রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী বদল ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়াটা জাপানবাসীদের জন্য নতুন স্বাদ চেখে দেখার মতোই হবে। কূটনীতিকদের মতে, ‘জাপানের ইতিহাসে একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসলে তা বিশ্বের কাছে বড় উদাহরণ হয়েই থাকবে।, তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কাও রয়েছে জাপানি সমাজে। কেউ কেউ বলছেন, ‘তাকাইচির কঠোর রক্ষণশীল মনোভাব প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিতর্ক বাড়িয়ে দিতে পারে।’
কে এই সানায়ে তাকাইচি?
বছর 64-র সানায়ে জাপানের বর্তমান শাসক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে দীর্ঘদিন জুড়ে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি একজন কঠোর রক্ষণশীল রাজনীতিকও বটে। এছাড়াও তাঁর একাধিক পরিচয় রয়েছে। জানা যায়, তিনি ছিলেন জাপানের প্রাক্তন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাকাইচি প্রবল ভগবান বিশ্বাসী। তাঁকে নিয়মিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে যেতে দেখা যায়। বলা বাহুল্য, জাপানের নারা প্রিফেকচারের সাকুরাই শহরে জন্ম হয়েছিল সানায়ের। সেখানেই বেড়ে ওঠা। জাপানের হবু প্রধানমন্ত্রী জন্ম নিয়েছিলেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। ছেলেবেলা থেকে পরিশ্রমী ছিলেন তাকাইচি। সঙ্গে ছিলেন শৃঙ্খলা পরায়ণ।
পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে জানা গেল, জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তাকাইচি। পরবর্তীতে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতেও লেখাপড়া করেন তিনি। যদিও কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাকাইচি। তবে রাজনীতিতে পা রাখার আগে সংগীত চর্চা ও শিল্পের মধ্যে দিয়ে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
অবশ্যই পড়ুন: ফিরলেন রোহিত, বিরাট! অধিনায়ক শুভমন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দল ঘোষণা BCCI-র
না বললেই নয়, 1993 সালে প্রথমবারের মতো জাপানের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সানায়ে। এরপর থেকে সরকারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী, অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়াও এলডিপির রক্ষণশীল ডানপন্থী শাখার প্রধান প্রতিনিধি হিসেবেও পরিচিতি অর্জন করেছিলেন তাকাইচি। এবার অর্জন করলেন ভোটারদের সমর্থন। আশা করা যাচ্ছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সংসদীয় ভোটে তাকাইচিই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। তবে তার আগে একেবারে স্পষ্ট ভাষায় জাপানের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে হবু প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ‘মানুষ বলছে তারা জানে না এলডিপি কীসের পক্ষে! আমি চেয়েছিলাম, মানুষ যে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা চিন্তা! সেটাকেই আশায় পরিণত করতে।’