বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: জীবনদায়ী ওষুধ এখন মৃত্যুর কারণ। কাশির সিরাপ (Cough Syrup Row) খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্র। বিষাক্ত কাশির সিরাপ Coldrif খেয়ে পরপর শিশু মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্তা, এমনকি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সঙ্গে রবিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
এদিকে, যে বিষাক্ত কাশির সিরাপ খেয়ে বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে সেই কোল্ডরিফ সিরাপের উৎপাদন এবং বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। কার্যত, একই পথে হেঁটেছে রাজস্থান সহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য। শুধু তাই নয়, সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশ থেকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই খবর।
সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশ থেকেই! কেন Coldrif সিরাপ খেয়ে মৃত্যু?
কাশির সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনার সূত্রপাতটা আসলে হয়েছে মধ্যপ্রদেশ থেকেই। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, সে রাজ্যের ছিন্দোয়াড়া জেলায় পরপর শিশু মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়েই উঠে আসে কাশির সিরাপের বিষয়টি। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই বিষাক্ত কাশির সিরাপ খেয়ে 10 জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মহারাষ্ট্রে 2 জন এবং রাজস্থানে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সিংহভাগেরই সন্দেহ, হয়তো সিরাপে বিষাক্ত কোনও রাসায়নিক মিশে যাওয়ার কারণেই শিশুদের মৃত্যু ঘটছে। সেই মর্মে, তড়িঘড়ি সিরাপ গুলিকে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। হাতে আসে রিপোর্টও।
শুক্রবার ওই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, Coldrif সিরাপে 48.6 শতাংশ ডাই ইথাইল গ্লাইকল ছিল। যা আসলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ। এর কারণে পুরোপুরি বিকল হয়ে যেতে পারে কিডনি। হতে পারে মৃত্যুও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রদেশের শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই হিসেবটাই মিলে গিয়েছে। আর এর পরই তদন্তে নেমেছে সে রাজ্যের সরকার। শোনা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের সরকারও একে একে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে একাধিক রাজ্যের সরকার
সূত্রের যা খবর, Coldrif কাশির সিরাপের কারণে শিশু মৃত্যুর খবর পেতেই এই সিরাপগুলি যাতে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করা না হয়, সেগুলি যখন তখন প্রেসক্রাইব না করা হয় এবং দেশে ওষুধের গুণমান ও ওষুধপত্র নিরাপদ কিনা সেই সব বিষয়গুলি নিয়ে বৈঠকে বসেছে কেন্দ্র। যদিও শুক্রবারই কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, দু বছরের নিচে কোনও শিশুকে কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করা যাবে না। এদিকে কাশির সিরাপ উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে রাজস্থান সরকারও। এমতবস্থায় আপবার বাড়িতেও যদি Coldrif কাশির সিরাপ থাকে। তাহলে তা ফেলে দিন নির্দিষ্ট জায়গায়।
অবশ্যই পড়ুন: ‘খেলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের জীবন, যুক্তি দিয়ে ভাবুন!’ বিবৃতি দিল মোহনবাগান
জানা যাচ্ছে, কেসন ফার্মা নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কাশির সিরাপ সরবরাহ সহ 19টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সরবরাহ স্থগিত রেখেছে সে রাজ্যের সরকার। একই পথে হেঁটেছে কেরলও। বামপন্থীদের গড় হিসেবে পরিচিত রাজ্যটির সরকারও বিতর্কিত কাশির সিরাপ কোল্ডরিফ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরপরই তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকেও ওই সিরাপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, শিশু মৃত্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া কাশির সিরাপ কোল্ডরিফের নির্মাতা স্রেসন ফার্মা কিন্তু তামিলনাড়ুই। যদিও ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার কারখানা সিল করে দিয়েছে সরকার।