বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ (Flood In North Bengal)। তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকার মতো নদীগুলির জল বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিপর্যয় আছড়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। বিশেষত দার্জিলিংয়ের বহু রাস্তায় নেমেছে ধস। তিস্তার জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক। এ নিয়ে রবিবার নবান্নের তরফে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
যদিও, ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ রূপ দেখে গোটা ঘটনাকে ম্যান মেড বন্যা আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঠিক সেই আবহে দীর্ঘ 57 বছর আগেকার আরও একটা 4 অক্টোবরের কথা স্মরণ করালো সোশ্যাল মিডিয়া। সে বছর, তিস্তার ভয়াবহ রূপ কীভাবে উত্তরবঙ্গকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছিল তা অনেকেরই জানা। তবে তাতে শিলিগুড়ির মানুষের মানবিক রূপ কতটা উজ্জ্বল হয়েছিল সেটাই একবার ফিরে দেখা যাক।
1968 সালের বন্যার কথা মনে আছে তো?
সালটা 1968। সে বছরের 4 অক্টোবর, তিস্তার ভয়ানক রূপ দেখেছিল কার্যত গোটা উত্তরবঙ্গ। লক্ষ্মী পূজার আগের রাতে সে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আজও মনে রয়েছে অনেকেরই। সেটাই আরও একবার স্মরণ করালো, শিলিগুড়ি ক্যানভাস। গত 4 অক্টোবর নিজেদের ফেসবুক হ্যান্ডেলে শিলিগুড়ি ক্যানভাসের তরফে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। তাতে লেখা হয়েছে 1968 সালে তিস্তার প্রলয়ে শিলিগুড়ির মানুষের মানবিকতার কথা।
বলাই বাহুল্য, সে বছর, একটানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বন্যার সাক্ষী থেকে ছিল উত্তরবঙ্গ। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় তিস্তার বাঁধ। সে বছর তিস্তা নদীর তাণ্ডবে জলপাইগুড়ি থেকে শুরু করে বার্নিশ, ময়নাগুড়ি, দোমোহনি সহ আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কয়েক মুহূর্তেই ডুবে গিয়েছিল। সে রাতে, বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল সে কথা বোধয় বলে বোঝানো যাবে না।
পুরনো ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, লক্ষ্মী পুজোর আগের রাতে উত্তাল তিস্তার জলে ভেসে গিয়েছিল একের পর এক গ্রাম। ভাসতে থাকে উত্তরবঙ্গবাসীর ঘরবাড়ি, কৃষিজমি সহ গবাদিপশু সবই। পরের দিন সকালে সূর্যের আলো ফোটার পরও চিত্রটা বদলায়নি। প্রবল জল রাশির তাণ্ডব তখনও ছিল বিদ্যমান। সে বছরের ভয়াবহ বন্যায় সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে রাস্তায় উঠে এসেছিলেন বহু মানুষ। উঠেছিল স্বজন হারানোর আর্ত চিৎকার। আজ 57 বছর পেরিয়েও সেই স্মৃতি উত্তরবঙ্গের প্রবীণ নাগরিকদের হৃদয়ে দগদগে।
অবশ্যই পড়ুন: না ফেরার দেশে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার, রেখে গেলেন অনবদ্য সব রেকর্ড
না বললেই নয়, 1968 সালের বিপর্যয়ে উত্তরের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছিল শিলিগুড়ি। দুর্যোগের খবর পেতেই বাড়িতে বসে না থেকে শিলিগুড়ির বাসিন্দারা একেবারে ত্রাণসমগ্রী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচাতে। কেউ নৌকা নিয়ে কেউ আবার ট্রাকে করে ওষুধ সহ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন দুর্গতদের কাছে। কার্যত নিজেদের জীবন উপেক্ষা করে তিস্তার ভয়ঙ্কর জলরাশির মধ্যেও শিলিগুড়ি থেকে এগিয়ে এসেছিল সহানুভূতির হাত। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে যখন বাংলার অন্যান্যরা দূর থেকে প্রার্থনা করছেন, ঠিক সেই পরিস্থিতিতে একেবারে ময়দানে নেমে ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচিয়েছিলেন শিলিগুড়িবাসী। সে কথাই 2025 সালে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ দিনেই মনে করিয়ে দিল শিলিগুড়ি