‘কুৎসিত’ বলে অপমান করত স্বামী! দেশের হয়ে সোনা জিতে জবাব দিলেন ধূপগুড়ির গীতাঞ্জলি

Published:

Gitanjali Shah Wins Gold For India in Asian Powerlifting Championships 2025
Follow

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: গ্রাজুয়েশন পাস করতে না করতেই বিয়ে। তারপর শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর অত্যাচার, লাঞ্ছনা এমনকি নানান কুরুচিকর মন্তব্যও সহ্য করতে হয়েছে জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ির বাসিন্দা, গীতাঞ্জলি সাহাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছিলেন সব। স্বামীর কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল, ‘তুমি কুৎসিত, তুমি আমার যোগ্য নও।’ একটা সময় প্রতিদিন চোখের জলে বালিশ ভেজানো সেই মেয়েটাই আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে সোনা পাইয়ে দিল। হ্যাঁ, কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে একটি সোনা এবং একটি সিলভার মেডেল জিতলেন উত্তরবঙ্গের লড়াকু নারী গীতাঞ্জলি (Gitanjali Shah Wins Gold)।

গীতাঞ্জলির অতীত জানলে চোখের কোণে জল গড়াবে

দ্য কব আনটোল্ড’স এর ফেসবুক হ্যান্ডেল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ধুপগুড়ির বাসিন্দা গীতাঞ্জলি। বাবা রুহিদাস সাহা। ছোট থেকেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। জানা যায়, গ্রাজুয়েশনের ফাইনাল পরীক্ষার পরই পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল গীতাঞ্জলিকে। সে বছর বাবার গচ্ছিত অর্থ দিয়েই ধুমধাম করে বিয়ে হয় মেয়ের। তবে সাংসারিক জীবন সুখের হল কই?

গীতাঞ্জলির অভিযোগ, ‘শ্বশুরবাড়িতে স্বামী এবং তাঁর পরিবারের কাছ থেকে শুধুই অপমান, মানসিক অত্যাচার এবং ক্ষুধার যন্ত্রণায় সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। মাঝেমধ্যেই স্বামীর কাছে শুনতে হতো, আমি কুৎসিত.. আমাকে নাকি পাতেও দেওয়া যায় না!’ ধুপগুড়ির লড়াকু নারী আরও জানান, ‘আমার স্বামী প্রায়শই আমাকে বলতো বাবার থেকে 20 লাখ টাকা এবং বাড়ি লিখে না আনতে পারলে তাঁর ভালবাসা পাওয়া যাবে না’

শ্বশুরবাড়ি থেকে সবরকম অত্যাচার সহ্য করেও মুখ বুজে নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন গীতাঞ্জলি। তবে একটা সময়ে পৌঁছে মানসিক অত্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছল, সেটা আর সহ্য করা যায়নি। অগত্যা স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয় গীতাঞ্জলির। তবে কোর্টে আইনি লড়াই এখনও চলছে। নিজের সাংসারিক জীবন ভাঙার পর শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন গীতাঞ্জলি। নতুন করে যে কিছু করবেন সেই মনোবল টুকুও ছিল না তাঁর। তবে সব শেষ হতে হতেও যেন ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে গীতার!

অবশ্যই পড়ুন: ‘NDRF-কে আমরাও টাকা দিই’, উত্তরবঙ্গ থেকে বড় বার্তা মমতার

মায়ের সহযোগিতায় জিমে ভর্তি হওয়ার পর ভুল ব্যায়াম করার কারণে বাঁ হাতে গুরুতর চোট পান গীতাঞ্জলি। হাতের দুই হাড়ের মাঝে তৈরি হয় বড় গ্যাপ। শেষ পর্যন্ত ধুপগুড়ির চিকিৎসকরা হাত তুলে নিলে শিলিগুড়ির ডাক্তারদের কাছে বাঁচার নতুন আলো দেখেন গীতাঞ্জলি। আর সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় গুরু সোনু শর্মার সাথে। তাঁর হাত ধরেই একজন পাওয়ার লিফটার হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন ধুপগুড়ির লড়াকু নারী।

এরপর থেকেই শুরু হয় আসল যুদ্ধ। পাওয়ার লিফটার হিসেবে প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট এবং পরে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতার পর ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপেও সিলভার, ব্রোঞ্জ এবং সেনা জেতেন গীতাঞ্জলি। সেই থেকেই জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ওঠার খিদে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে জায়গা করতে হলে তো প্রচুর অর্থের প্রয়োজন! সেসবের কী হবে? কোনও দিক থেকে আর্থিক সাহায্য না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত মেয়ের জন্য নিজের সোনার গয়না বিক্রি করে দেন মা। বলেন, ‘সোনার বলা তো পরেও কেনা যাবে, আগে দেশের জন্য কিছু করো।’ সেখান থেকেই শুরু। এরপর স্বপ্ন নিয়ে আর পিছনে ফিরতে হয়নি তাঁকে। সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ 2025 এ অংশ নিয়েই নিজের ক্যারিসমা দেখান গীতাঞ্জলি। জিতে নিলেন সোনা ও সিলভারের মেডেল। সেই সাথেই, মুছে দিলেন অতীতের সমস্ত যন্ত্রণা, অপ্রাপ্তি এবং শারীরিক ব্যথা!

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join