এই ব্যাক্তির নামে রয়েছে ২,২৫৩টি শব্দ, বলতে লাগে ২০ মিনিট! কে এই গিনেস রেকর্ডধারী লরেন্স ওয়াটকিন্স?

Published:

Laurence Watkins
Follow

“নাম বাতাতে বাতাতে গোয়া পৌঁছ যায়েঙ্গে” — ধামাল সিনেমার এই বিখ্যাত ডায়লগটা আশা করছি কম-বেশি সবারই মনে আছে, আর সেই বিখ্যাত নাম – “…চিন্নাস্বামী মুত্থুস্বামী বেণুগোপাল আইয়ার”!

কিন্তু জানেন কি, সিনেমা নয়, বাস্তবেও এমন একজন আছেন যার নাম বলতেই লেগে যায় ২০ মিনিট, আর লিখতে লেগে যায় প্রায় ৬ পৃষ্ঠা! কি অবাক হচ্ছেন? তবে, তিনি যে শুধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় নামের অধিকারী তা কিন্তু নয়, বড় নামের জন্য তাঁকে যেতে হয়েছে আদালতেও! চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে, যার নাম শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যান প্রায় সবাই!

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাম: ২,২৫৩ শব্দের রেকর্ড

আজ আমরা কথা বলছি লরেন্স ওয়াটকিন্স-কে (Laurence Watkins) নিয়ে। যার নামে রয়েছে ২,২৫৩টি শব্দ। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ নামের অধিকারী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে প্রবেশ করেছেন এই ব্যাক্তি। আর এই তকমা পেয়ে তিনি জানিয়েছেন, “কিছু মানুষের কিছু অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক রেকর্ড দেখে মুগ্ধ হয়ে, আমিও এই রেকর্ডের অংশ হতে চেয়েছি। আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বইয়ের অনেক রেকর্ড সম্পর্কে পড়েছি, এবং খুঁজে দেখেছি যে এমন কোনও রেকর্ড আছে কিনা যেটা আমি ভাঙতে পারি।“ তিনি আরও বলেন, “আমি খুঁজে দেখলাম আমার কাছে একমাত্র সুযোগ ছিল বর্তমানে যার বেশি শব্দের নাম রয়েছে, তার চেয়েও আমার নামে বেশি শব্দ যোগ করা।”

সেই উদ্দেশ্যে নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী লরেন্স, ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম দাখিল করার জন্য আইনত নিজের নাম পরিবর্তন করেন, এবং নামে ২,৩০০-র বেশি খ্রিস্টীয় নাম এবং পরিবারের একটি নাম যুক্ত করেন। তবে, ২,৩১০টি নাম সহ প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত হলেও, পরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কিছূ নির্দেশিকা মেনে নামটি সংশোধন করা হয়, এবং রেকর্ডে আপডেট করা নামে শব্দের সংখ্যা হয় ২,২৫৩টি। নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে, ওয়াটকিন্স গর্বের সাথে লিখেছেন: “আমি, লরেন্স ওয়াটকিন্স, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নামের অধিকারী… গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত।”

কীভাবে রাখলেন এত বড় নাম?

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, লরেন্স নিউজিল্যান্ডের একটি শহরের একটি লাইব্রেরিতে কাজ করতেন। তিনি বিভিন্ন বই থেকে এবং সহকর্মীদের সুপারিশের ভিত্তিতে নাম নির্বাচন করতেন। তিনি বলেন, “আমার প্রিয় নাম AZ2000, অর্থাৎ আমার A-Z পর্যন্ত সব নাম আছে, এবং প্রায় ২০০০টি নাম আছে।” তিনি নিজের নামের ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রতিটি নামের একটি করে ব্যক্তিগত অর্থ রয়েছে, এবং একটি সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বহন করে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নামে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, পলিনেশিয়া, ইউরোপ এবং তার বাইরের থেকেও অনুপ্রাণিত একাধিক নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা এটিকে সত্যিকারের অর্থে একটি বিশ্বব্যাপী পরিচয়ে পরিণত করে।“

নিজের নাম রাখার জন্য খরচ করেছিলেন কয়েকশো ডলার, গিয়েছেন আদালতেও!

সেই সময় নাম রাখার প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত দীর্ঘ। এমনকি কম্পিউটারের ব্যবহার সীমিত থাকায় এই কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবুও, লরেন্স দমেননি, নিজের নামের সম্পূর্ণ তালিকা টাইপ করার জন্য তিনি খরচ করেন কয়েক-শো ডলার।

শুধুমাত্র টাকা খরচ করেই শেষ হয়নি লরেন্সের নাম রাখার পালা। নিজের নামকে আইনত স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জন্য তিনি প্রথমে আবেদন করেন জেলা আদালতে। সেটি অনুমোদনও হয়। কিন্তু, এটি প্রত্যাখ্যাত হয় রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক। নিরুৎসাহিত হয়ে লরেন্স এরপর নিউজিল্যান্ডের হাইকোর্টে আবেদন করেন, যা তার পক্ষে রায় দেয়।

তবে, কিছুদিন পর ভবিষ্যতে যাতে অনুরূপ মামলা না আসে, তা রোধ করার জন্য নিউজিল্যান্ড সরকার দুটি আইন পরিবর্তন করে। সুতরাং, ওয়াটকিন্সের নাম বর্তমানে রেকর্ড বইয়ে থাকলেও, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিউজিল্যান্ডের যে কেউ যদি রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম তুলতে চান, তবে তিনি আইনি বাধার সম্মুখীন হবে।

বিয়েতে সমস্যার সম্মুখীন হন নামের জন্য!

এত বড় নাম নিয়ে গিনেস রেকর্ড তৈরি করলেও, জীবনে একাধিক বাধাও পেয়েছেন ওয়াটকিন্স। তিনি স্বীকার করেছেন যে বিয়ের সময়, রেজিস্ট্রার পুরো নামটি পড়তে প্রায় ২০ মিনিট সময় নিয়েছিলেন! এছাড়াও সরকারি ফর্ম, পাসপোর্ট এবং আইডি কার্ডে তিনি নিজের পুরো নামটি পূরণ করতে পারেন না, যার ফলে প্রায়ই বিভ্রান্তি, এবং তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে, এত অসুবিধা সত্ত্বেও, ওয়াটকিন্স জানিয়েছেন যে তাঁর জীবনে কোনও অনুশোচনা নেই, তাঁর এই অনন্য পরিচয় তাঁর কাছে একটি গর্ব।

তবে এটি প্রথম নয়, এর আগেও অনেকে বড় নামের জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। এমনকি অনেক সংস্কৃতিতে লম্বা নাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ঐতিহ্য এবং সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন ঘটায়। দক্ষিণ ভারতের একাধিক নামে প্রায়শই গ্রামের নাম, বাবার নাম এবং দেওয়া নাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। আরবের একাধিক নামের ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নাম রাখা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি, পিতা, দাদা, এমনকি কখনও কখনও পারিবারিক বা উপজাতির নাম, যা বংশ এবং ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেয়। পশ্চিমা দেশগুলিতেও একই রকম ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়। যেমন বিখ্যাত গায়িকা বিলি আইলিশ, যার পুরো নাম বিলি আইলিশ পাইরেট বেয়ার্ড ও’কনেল, এবং চিত্রকর পাবলো পিকাসো, যার পুরো নাম পাবলো ডিয়েগো জোসে ফ্রান্সিসকো ডি পাউলা জুয়ান নেপোমুসেনো মারিয়া দে লস রেমেডিওস সিপ্রিয়ানো দে লা সান্তিসিমা ত্রিনিদাদ রুইজ ওয়াই পিকাসো। যদিও এই নামগুলি চিত্তাকর্ষকভাবে অনেকটাই লম্বা, তবে লরেন্স ওয়াটকিন্সের তুলনায় এগুলি কিছুই নয়।

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join