India Hood Decode: গান্ধীকে হত্যার পর কেন পালালো না গডসে

Published:

Nathuram Godse On KillingGandhi
Follow

স্বাধীনতা লাভের ঠিক ৫ মাস পর, দিনটা ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি। প্রতিদিনের মতোই বিকেল ৫টায় দিল্লির বিড়লা হাউসের প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে কয়েকশো মানুষ। আর এই ভিড়ের মধ্যেই উর্দি পরে অপেক্ষা করছিলেন নাথুরাম গডসে (Nathuram Godse)। হঠাৎই ভিড় থেকে বেরিয়ে গান্ধীজীর দিকে এগিয়ে যায় সে, নীচু হয় প্রণাম করার জন্য। গান্ধীজির এক সহযোগী আভা, গডসেকে আটকাতে গেলে, আভাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের পকেট থেকে বন্দুক বের করে, এক, দুই, তিন… পরপর তিনটি গুলি চালায় গান্ধীজির ওপর। রক্তাক্ত অবস্থায় ওখানেই লুটিয়ে পড়েন গান্ধীজী, “হে রাম” বলে ঢোলে পড়েন মৃত্যুর মুখে। কিন্তু, এত জনপ্রিয় একজন ব্যাক্তিকে মারার পরেও, সেখান থেকে পালিয়ে যাননি নাথুরাম গডসে, বরং অস্ত্র ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ভিড়ের মধ্যেই। মারমুখী জনতা যখন তাঁকে মারতে উদ্ধত, তখনই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

কিন্তু, কে এই নাথুরাম গডসে? কেন সেদিন পালাননি তিনি? এক বার নয়, দুবার নয়, কেন চার বার গান্ধীজীকে মারার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন নাথুরাম? ঠিক কী কী কারণে গান্ধীজীকে খুন করেছিলেন গডসে? ৩০,০০০ শব্দের স্বীকারোক্তিতে তিনি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আজ India Hood Decode-এ আপনাদের সামনে প্রমাণ সহ আমরা তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য, যা বদলে দেবে গান্ধীজী সম্পর্কে আপনার সম্পূর্ণ ধারণা।

কে এই নাথুরাম গডসে? (Who Was Nathuram Godse?)

দিনটা ১৯১০ সালের ১৯শে মে, মহারাষ্ট্রের পুনের বারামতি গ্রামে, জন্ম গ্রহণ করেন রামচন্দ্র বিনায়করাও গডসে ওরফে নাথুরাম। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান। তাঁর আগে পরিবারে ৩ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মেয়েটি সুস্থভাবে বেঁচে গেলেও, বাঁচেনি কোনও ছেলেই। তাই, গডসেকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁকে মেয়ে হিসাবে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর বাব-মা । শৈশবেই তাঁর নাক ফুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, পরানো হয় নথ, আর মেয়েদের মতো পোশাক। নাকে নথ পরার কারণে পরবর্তীতে তাঁর নাম হয় নাথুরাম। নাথুরামের পর পরিবারে আরও দুই পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান জন্মালেও তাদের মৃত্যু হয়নি। তাই নাথুরামের বাবা-মা মনে করতেন নাথুরাম তাঁদের পরিবারের সমস্ত অভিশাপ মুছে দিয়েছে।

ক্লাস ১০-এ ফেল করার পর, ১৯২৯ সালের দিকে পরিবারের সাথে রত্নাগিরি চলে যায় নাথুরাম।

ওই সময়ে মহাত্মা গান্ধী চম্পারণ সত্যাগ্রহ এবং অসহযোগী আন্দোলন করে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তিনি একদিকে বলতেন বিদেশি পোশাক এবং বিদেশি পণ্য ত্যাগ করার কথা, আর অন্যদিকে করতেন কংগ্রেসের প্রচার। গান্ধীর মতাদর্শ মেনে তখন অনেকেই বিদেশি পণ্যের বিরুদ্ধাচারণ করা শুরু করেন, যোগ দেন কংগ্রেসে।

গান্ধীর অনুসারী হিসাবে তাঁর ভাষণ শুনতে বিভিন্ন সভায় যোগ দিতেন নাথুরামই। ওই একই বছরে গডসের পরিচয় হয় বিনায়ক দামোদর সাভারকারের সাথে। তিনি একদিকে যেমন শুনতেন মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শ, আর অন্যদিকে পড়তেন সাভারকারের লেখা।

এরই মাঝে দেশে মুসলিম লীগের উত্থান হয়, যারা শুধু মুসলিমদের হয়ে কথা বলতো। আর অন্যদিকে কংগ্রেস বলতো সেক্যুলার দেশের কথা। আর RSS প্রচার করতো হিন্দুত্বের। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর –

১৯৩২ সালের দিকে RSS-এ যোগ দেন নাথুরাম। এরপর অংশ নিতে থাকেন RSS-এর দৈনিক কার্যক্রমেও। এরপর ১৯৩৭ সালের দিকে সাভারকরের সভাপতিত্বে হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন নাথুরাম। একই সাথে দুই জায়গায় কাজ করে তিনি হিন্দু জাতিয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হতে থাকেন। পাশপাশি তিনি বিরোধিতা করতে শুরু করেন গান্ধীর ভাবধারার।

১৯৪২ সালে নাথুরামের পরিচয় হয় নারায়ণ আপ্তে নামে একজনের সাথে। নারায়নের সাথে মিলে হিন্দু রাষ্ট্র দল নামে একটি সংগঠন খোলেন নাথুরাম, চালু করেন অগ্রণী নামের একটি সংবাদ পত্র। এই সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন নাথুরাম নিজেই। এই সংবাদপত্রে মূলত গান্ধীর সেক্যুলার চিন্তাভাবনার এবং কংগ্রেসের বিভিন্নভাবে বিরোধিতা করা হত। যার ফলে এটিকে পরবর্তীকালে সাসপেন্ডও করে দেওয়া হয়।

একসময়ে এই বিরোধিতা এতটাই রাগে পরিণত হল যে এবার গান্ধীজিকে মারার চিন্তাভাবনা শুরু করেন নাথুরাম।

এরপর সময়টা ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসগান্ধীজিকে প্রথমবারের জন্য মারার ছক করেন গডসে। ওই সময়ে দৈনিক বিভিন্ন সভায় যোগ দিতেন গান্ধীজী। একদিন একটি সভায় হঠাৎ করেই ১৮-২০ জনকে নিয়ে বিরোধ দেখাতে থাকেন নাথুরাম। গান্ধী তাঁকে বসে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করতে বলে, কিন্তু নাথুরাম তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর সন্ধ্যা প্রার্থনার সময়ে সুযোগ বুঝে একটি ছুরি নিয়ে গান্ধিজির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন গডসে। কিন্তু, আশেপাশের লোকেরা নাথুরামকে কোনওভাবে আঁটকে নিলেও ধরতে পারে না, যার ফলে নিজের সমস্ত সাথীদের নিয়ে ওখান থেকে পালাতে সচেষ্ট হয় গডসে।

এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। মুম্বাইয়ে মহম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে দেখা করতে যান গান্ধীজি। উদ্দেশ্য ছিল – জিন্নাহকে আলাদা দেশের দাবি থেকে সরিয়ে আনা। কিন্তু, জিন্নাহ-র সাথে গান্ধীজি দেখা করতে যাবেন শুনেই দ্বিতীয়বার গান্ধীজীকে মারার প্ল্যান করেন গডসে। ছুরি নিয়ে করেন ফের হামলা, কিন্তু এবারেও নাথুরামকে ব্যর্থ করেন গান্ধীর সহযোগী এবং সমর্থকরা।

এরপর ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে নারায়ন আর নাথুরাম একসাথে শুরু করে হিন্দুরাষ্ট্র নামের একটি সংবাদপত্র। দু-দুবার নিজের কাজে ব্যর্থ হয়ে ফের সংবাদপত্রের মাধ্যমে গান্ধীজি ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করা শুরু করেন গডসে। ওই বছরের ১৪ই আগস্ট, পাকিস্তান স্বাধীন দেশ হওয়ার পর থেকে এই দেশভাগের জন্য গান্ধীজিকে দায় করতে থাকেন গডসে। কিন্তু, গান্ধী কোনওদিনই দেশভাগ চাননি, উল্টে তিনি অবিভক্ত ভারত থাকার জন্য জিন্নাহকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, গডসে মনে করতেন, দেশভাগের পর গান্ধীজী হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের ঐক্যের কথা বললেও, পাকিস্তানের হিন্দুদের মৃত্যুর জন্য তিনি কিছুই করেননি।

এরপর দিনটা ১৯৪৮ সালের ২০শে জানুয়ারি, তৃতীয়বার গান্ধীজিকে মারার উদ্দেশ্যে দিল্লির বিড়লা হাউসে আসেন নাথুরাম গডসে সহ আরও ৬ জন। প্ল্যান ছিল –  মদনলাল পাহোয়া বিড়লা হাউসে বিস্ফোরণ করবে, লোক পালিয়ে বাঁচতে গেলে দিগম্বর বাড়গে গান্ধীকে গুলি করবে। কিন্তু ফের প্ল্যান ভেস্তে যায়।

আর এর ঠিক ১০ দিন পর ৩০শে জানুয়ারি নিজের উদ্দেশ্যে সফল হয় গডসে, হত্যা করেন গান্ধীজীকে।

সেদিন গান্ধীজিকে হত্যার করার পরেই, পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই শুরু হয় নাথুরাম গডসের ট্রায়াল। ট্রায়ালের সন্ধ্যায়, উপস্থিত সবাইকে গডসে পড়ে শোনায় ৩০,০০০ শব্দের প্রায় ৯৩ পাতার একটি স্বীকারোক্তি। যেখানে তিনি এক এক করে ব্যাখ্যা করেন গান্ধীজিকে হত্যা করার কারণ, দেন যুক্তি! জানলে অবাক হবেন, সেদিন ৫ ঘণ্টার সেই স্বীকারোক্তির শুনে চোখ ভিজেছিল ট্রায়ালে উপস্থিত একাধিক মানুষের! কিন্তু, সেদিনের সেই স্বীকারোক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ৪৫ বছর পর সুপ্রিম কোর্টে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠলে, নাথুরামের ভাই গোপাল গডসে নিজের দাদার এই স্বীকারোক্তিগুলিকে একটি বই আকারে প্রকাশ করে, যার নাম Why I Assassianted Gandhi?

এবার আমরা জানাবো সেই বইয়ের মধ্যে থাকা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি। মূলত যে কারণগুলির জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

গান্ধীজীর অহিংসা নীতি –

নিজের প্রথম জীবনে নাথুরাম ছিলেন গান্ধী ভক্ত। তবে তিনি গান্ধীজীর অহিংসা নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন, আর তার পিছনে ছিল বেশ কিছু কারণ। যেগুলি তিনি জানিয়েছেন নিজের স্বীকারোক্তিতে –

প্রথমত, ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডে সারা দেশ যখন আক্রোশে ফুঁসছে, ঠিক তখনই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক জেনারেল ডায়ারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য গান্ধীজিকে অনুরোধ করা হলে, তিনি পরিস্কার মানা করে দেন! মামলা দায়ের করা একটি অহিংস পদক্ষেপ ছিল।

দ্বিতীয়ত, ১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ, ভগৎ সিংকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সারা দেশের মানুষ এই ফাঁসি আটাকানোর জন্য গান্ধীজিকে অনুরোধ করেন। কিন্তু, গান্ধীজি ভগৎ সিংয়ের হিংসাত্মক কার্যকলাপকে অনুচিত মনে করে এই অনুরোধ রাখেন নি!

তৃতীয়ত, নাথুরাম নিজের স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করার অস্ত্র অহিংসা হতে পারে না। এমনকি রাম, অর্জুন এবং কৃষ্ণ নিজের ভালোবাসা এবং অধিকারের জন্য হিংসার পথে লড়েছিলেন।

চতুর্থত, গান্ধীজি বেশ কয়েকবার ছত্রপতি শিবাজী, মহারাণা প্রতাপ, গুরু গোবিন্দ সিংহকে পথভ্রষ্ট দেশভক্ত বলেছেন! যা নাথুরামের মোটেও ভালো লাগেনি। কারণ এরা প্রত্যেকেই দেশের জন্য কখনও ব্রিটিশ আবার কখনও মুসলিম স্বৈরাচারী রাজাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

গান্ধীজীর ওপর কংগ্রেসের অতি নির্ভরতা –

নাথুর মতে, ১৯২০ সালের পর, অর্থাৎ বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুর পর থেকে কংগ্রেস অতিরিক্ত গান্ধী নির্ভর হয়ে পড়ে। সেই নিয়ে একাধিক বিষয়ে তিনি নিজের স্বিকারোক্তিতে জানিয়েছেন।

প্রথমত, গান্ধীজি করতেন নিজের ইচ্ছামতো কাজ। যেমন, তিনি যখন খুশি নিজের ইচ্ছে মতো আন্দোলন শুরু করতেন এবং বন্ধ করতেন। অসহযোগী আন্দোলন হোক কিংবা লবণ সত্যাগ্রহ – সব আন্দোলনের ক্ষেত্রে যখনই তিনি সফলতার খুব কাছাকাছি পৌঁছাতেন – তখনই তিনি হঠাৎ করেই কোনও একটি কিংবা দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য সেই আন্দোলন বন্ধ করে দিতেন। এমনকি ধর্না, অনশন, রাগ, বাক্যালাপ বন্ধ করার মাধ্যমে তিনি যখন তখন যা খুশি করেছেন।

দ্বিতীয়ত, লাহোর কংগ্রেসে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটৈলের জয় হলেও, গান্ধীজি জেদ করে এই পদ নেহেরুকে দেন।

তৃতীয়ত, কংগ্রেসের ত্রিপুরা অধিবেশনে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিপুল সমর্থনে জয়লাভ করেন। কিন্তু গান্ধীর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন সীতা রামাইয়া! সুভাষ চন্দ্র বোসকে পরে বাধ্য করা হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য।

চতুর্থত, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের উদ্যোগে সোমনাথ মন্দিরের পুননির্মাণের প্রস্তাব সংসদে রাখা হয়, কিন্তু গান্ধীজি মন্ত্রীমন্ডলে না থেকেও শুরু করেন বিরোধীতা! এই কারণে ১৯৪৮ সালের ১৩ই জানুয়ারি শুরু করেন আমরণ অনশনও।

মুসলিমদের প্রতি গান্ধীজীর একতরফা সহানুভূতি –

গান্ধীজীর বিরুদ্ধে ধর্ম নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে “মুসলিম তোষণ”-এর জন্ম দেওয়ার অভিযোগ তোলেন নাথুরাম গডসে। তিনি নিজের স্বীকারোক্তিতে এই বিষয়ে বলেন –

প্রথমত, কাশ্মীর মুসলিম বহুল রাজ্য হওয়ায় গান্ধীজি কাশ্মীরের রাজা হরি সিংকে পদত্যাগ করতে বলেন, এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে বলেন! অথচ হায়দ্রাবাদ হিন্দু গরিষ্ঠ রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও নিজামের ক্ষেত্রে গান্ধীজী চুপ ছিলেন, বলেননি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথাও।

দ্বিতীয়ত, নাথুরামের মতে, গান্ধীজির অহিংসার ফলে মুসলিম তোষণ নীতি হিন্দুদের কাপুরুষে রূপান্তরিত করে দিচ্ছে। ফলত, কানপুরে গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থীকে মুসলিমরা নির্মম ভাবে হত্যা করলেও, তাঁর হত্যাকান্ডে চুপ ছিলেন গান্ধীজি! অথচ গণেশজি ছিলেন গান্ধীজীর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ।

তৃতীয়ত, খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বোনেন গান্ধীজি! নিজেকে মুসলিমদের হিতৈষী হিসাবে দেখাতেন। কিন্তু, কেরালায় মোপলা মুসলিমরা ১৫০০ হিন্দুকে হত্যা করলে এবং ২০০০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করলেও চুপ থাকেন গান্ধীজি, করেননি বিরোধীতাও! অন্যদিকে, কিছু মুসলিমের বিরোধীতার কাছে মাথা নত করে, “বন্দে মাতরম”-কে জাতীয় সংগীত না করার সিদ্ধান্তেও সায় দেন তিনি!

চতুর্থত, পাকিস্তানে হিন্দু নিধন থেকে প্রাণে বাঁচাতে বেশ কিছু হিন্দু ভারতে আসেন। অসহায় ভাবে আশ্রয় নেয় দিল্লীর মসজিদে। মুসলিমরা এর বিরোধিতা শুরু করলে, ভয়ঙ্কর শীতের রাতে মা-বোন-বালক-বৃদ্ধ সকলকে জোর করে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। নীরব থাকেন গান্ধীজি! বরং হিন্দুদের ওই মসজিদ ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সায় দেন তিনি।

পঞ্চমত, গান্ধীজি মন্দিরে কোরান পাঠ ও বাইবেল পড়ার ব্যবস্থা করেন! কিন্তু, কোনও মসজিদে গীতা পাঠের ব্যবস্থা করতে পারেন নি! অসংখ্য হিন্দু, ব্রাহ্মণ মন্দিরে কোরান ও বাইবেল পাঠের প্রতিবাদ করলেও গান্ধী আমলই দেননি!

ষষ্ঠত, প্রথম প্রথম গান্ধীজি জাতীয় ভাষা হিসাবে হিন্দি ভাষার প্রচার শুরু করেন। যার প্রশংসা নাথুরাম করেছিলেন। কিন্তু, যখনই হিন্দী ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার বিরোধীতা করল মুসলিমরা, তা স্বীকার করে নেন গান্ধী! এবং দেন এক অদ্ভুত সমাধান, অর্থাৎ “হিন্দুস্তানী” ভাষার। যে ভাষা ছিল এক হাইব্রিড ভাষা, যা ছিল হিন্দি আর উর্দুকে মিশিয়ে এক নতুন ভাষা। গডসের মতে হিন্দুস্তানী ভাষার কোনও আলাদা স্ক্রিপ্ট ছিল না। এর কোনও শব্দকোষ নেই। এটা লেখা যাবে না, শুধু বলা যাবে। আর অনেকেই যেহেতু উর্দু জানেন না, এটা তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।

সপ্তমত, দেশ ভাগের সময় এই দেশ আর দেশের মানুষ শুধু ভাগ হয়নি। ভাগ হয়েছিল অর্থ। আর গান্ধীজির মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, স্বাধীনতার পর ভারত পাকিস্তানকে ৭৫ কোটি টাকা দেবে। ২০ কোটি টাকা শুরুতেই দেওয়া হয়। বাকি ছিল ৫৫ কোটি। কিন্তু, ১৯৪৭ সালের ২২শে অক্টোবর পাকিস্তান কাশ্মীর আক্রমণ করে! পাকিস্তানের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমন্ডল সিদ্ধান্ত নেয় বাকি অর্থ আর পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না। কিন্তু, অনশনের মাধ্যমে পাকিস্তানকে বাকী ৫৫ কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন গান্ধীজী। এরপর ভারত সরকার গান্ধিজির আবেদন মেনে নেয় আর ১৮ই জানুয়ারি অনশন ভাঙেন গান্ধীজী।

অষ্টমত, ১৯৪৬ সালে কলকাতায় দাঙ্গার পর নিজের হরিজন সভায় গান্ধীজি লেখেন, “যদি কলকাতার সমস্ত হিন্দু নিজেদের বিবেক ব্যবহার করে সাহসিকতার সাথে মৃত্যুবরণ করতেন, তাহলে তাঁরা কেবল হিন্দু ধর্ম নয় হিন্দুস্থানকেও বাঁচিয়ে নিতেন। আর এই ভাবে দেশে ইসলামও শুদ্ধ হয়ে যেত। যা গান্ধীর বিরুদ্ধে গডসের রাগ আরও বাড়িয়ে দেয়।

নাথুরামের কিছু স্বীকারোক্তির বাইরেও বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা গান্ধীজী সম্পর্কে আপনার ধারণা সম্পূর্ণরূপে বদলে দেবে।

প্রথমত, গান্ধীজির দুই সহযোগী ছিলেন। একজন ১৭ বছর বয়সী এক ভাইঝি, মনু বেন। আর অন্যজন, ১৮ বছর বয়সী নিজের ভাইপো কানু গান্ধীর স্ত্রী আভা ব্যাণার্জি। কিন্তু, বিখ্যাত লেখক রামচন্দ্র গুহ নিজের গান্ধী বিফোর ইন্ডিয়া বইতে লেখেন, গান্ধী এই দুইজনের সাথে নগ্ন হয়ে ঘুমাতেন। এই কথা লিখেছেন মনু গান্ধী নিজেও। এমনকি নিজের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুশীলা নায়ারের সাথেও নগ্ন হয়ে ঘুমাতেন গান্ধীজি। আর এর কারণ ছিল নিজের আত্ম নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো। এবার প্রশ্ন, নিজের আত্ম নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে নিজের নাতনির বয়সী মেয়েদের সাথে এ কী ধরনের পরীক্ষায় মেতে উঠতেন গান্ধীজী? আপনারা এই উত্তরটা জানলে অবশ্যই জানাবেন।

দ্বিতীয়ত, ১৯৩১ সালে ডঃ বি আর আম্বেদকর দলিতদের উন্নতির জন্য একটি আলাদা দলিত কেন্দ্রের প্রস্তাব দেন, যেখানে দলিত লোকেরা দলিত নেতা বেছে নেওয়ার জন্য ভোট দেবেন। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই নীতির অনুমোদন দিলেও, গান্ধীজি এর ঘোর বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন, এই আলাদা সুযোগের ফলে বিভেদ সৃষ্টি হবে। এটি আটকানোর জন্য তিনি ফের শুরু করেন অনশন। অবশেষে ১৯৩২ সালে, পুনা চুক্তির মাধ্যমে, ভারতীয় আইনসভায় দলিতদের জন্য ১৮ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়। আম্বেদকর বলতেন, “গান্ধী শুধুমাত্র দলিতদের ভোট পাওয়ার জন্য দলিতদের সমর্থন করতেন। তিনি বর্ণ প্রথারও সমর্থন করতেন।“

এমনকি ইন্টারকাস্ট বিয়েরও ঘোর বিরোধী ছিলেন গান্ধীজি। নিজের ছেলে মনি লাল একজন মুসলিম মেয়েক ভালোবাসলেও তাঁদের বিয়েতে বাঁধা দেন গান্ধীজী। এবং পরে একটি হিন্দু মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে দেন। নিজের আর এক ছেলে দেবদাসকেও একটি নিচু জাতির মেয়েকে বিয়ে করা থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন গান্ধীজী। যদিও পরে তিনি তা মেনে নেন। আফ্রিকান কালো চামড়ার মানুষ এবং সমাজের ভাঙ্গি সম্প্রদায়কে নিয়েও তাঁর একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

তৃতীয়ত, সম্প্রতি দ্যা বেঙ্গল ফাইলস ছবিতে দেখানো হয়েছে, ক্যালকাঁটা কিলিংসের সময়ে ধর্ষিত মেয়েদের আত্মহত্যা করার উপদেশ দিচ্ছেন গান্ধীজী। এর বিশেষ কোনও প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, লিখিত একটি প্রমাণ পাওয়া যায় যেখানে গান্ধীজী বলেন, “যদি কোনও মুসলিম কোনও হিন্দু বা শিখ মহিলাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাহলে মেয়েটির উচিত কখনোই তাকে প্রত্যাখ্যান করা নয় বরং সহযোগিতা করা… তার উচিত দাঁতের ফাঁকে জিহ্বা রেখে মৃতের মতো শুয়ে থাকা।”

কোনও সমস্যার সমাধান কখনোই হত্যা হতে পারে না, কিন্তু, এত কিছু বিষয় যে ব্যাক্তি সামনে থেকে দেখেছে, তাঁর পক্ষে কি চুপ করে থাকা সম্ভব? গান্ধীকে হত্যা করে নাথুরাম কি আদৌ সঠিক কাজ করেছিলেন? অনেকেই আজ নাথুরামকে হিরো হিসাবে পুজো করেন, কিন্তু আপনার চোখে নাথুরাম কে? হিরো না ভিলেন? গান্ধীর এই সমস্ত কাজের পর, গান্ধীকে নিয়ে আপনার মতামত কী?

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join