প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সামনেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে রীতিমত সরগরম পরিস্থিতি রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু এই আবহে দীর্ঘদিন ধরে আলাদা রাজ্য হিসেবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলছে একাংশ। তাই এবার সেই নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র। গতকাল কেন্দ্রের তরফে দেশের প্রাক্তন উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মোটেই পছন্দ হয়নি মমতার (Mamata Banerjee), তাই এবার এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি লিখলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মমতার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্রের তরফে এই পঙ্কজ কুমার সিংকে নিয়োগ করার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “গোর্খা সম্প্রদায় এবং গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-র বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে কেন্দ্র সরকারের তরফে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে গতকাল— অথচ এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম পরামর্শই করা হয়নি। এদিকে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে। তাই কেন্দ্রের এই একতরফা পদক্ষেপ সহায়ক নয়, বরং সংবিধানের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।”
Here goes my letter to the Hon’ble Prime Minister of India, communicating my surprise and shock at the unilateral appointment by the Government of India of an interlocutor for the issues relating to Gorkhas in Darjeeling Hills, Tarai and Dooars regions of West Bengal. pic.twitter.com/nNN1OtqAeY
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) October 18, 2025
কী জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
এছাড়াও চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিংয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেন্দ্র, রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এই তিন পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছিল জিটিএ। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়ন এবং জাতিগত পরিচয় রক্ষা করা।এবং ২০১১ সালের পরেই পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে রাজ্য সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, অবিলম্বে কেন্দ্রের নিয়োগ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে তা প্রত্যাহার করা হোক। মমতার মতে, “ফেডারেল কাঠামো ও কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক সম্মানের প্রকৃত চেতনার সঙ্গেই এটাই সঙ্গত। আর যদি না হয় তাহলে এটি শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।”
আরও পড়ুন: খাঁচা ভেঙে পালাল চিতাবাঘ! মাথায় হাত বনকর্মীদের, আতঙ্ক ছড়াল ফালাকাটার গ্রামে
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবি পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স কিংবা উত্তরবঙ্গের আরও কিছুটা অংশ নিয়ে আলাদা গোর্খাল্যান্ড তৈরীর কিন্তু ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কার্যত সেই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ শিডিউলের আওতায় গোর্খাদের দাবি ছিল, আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন। বিজেপিও গোর্খাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আশ্বাস দিয়ে এসেছে প্রতি নির্বাচনের আগে। আর সেই আশ্বাসে ভর করে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনে বিজেপি সাংসদকে জিতিয়ে এনেছেন পাহাড়বাসীও। কিন্তু প্রত্যাশামতো ফল মেলেনি। তাই এবার গোর্খাদের কথা ভেবে নেওয়া হল কড়া পদক্ষেপ।