বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: গত 20 অক্টোবর, কালীপুজোর দিন 117 বছরের যাত্রা শেষ করেছে শতাব্দি পুরনো ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ (Calcutta Stock Exchange), এমনটাই দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। 21 অক্টোবর প্রকাশিত OPIndia এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি আইনি যুদ্ধের পর অবশেষে নিজে থেকেই শেয়ার বাজার হিসেবে নিজের যাবতীয় কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শহর কলকাতার এই বহু পুরনো প্রতিষ্ঠানটি।
কেন বন্ধ হয়ে গেল 117 বছরের পুরনো স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান?
প্রতিবেদন অনুযায়ী, 2023 সালের এপ্রিলে একাধিক অনিয়মের কারণে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ করে দেয় নিয়ামক সংস্থা SEBI। সেই থেকেই পরিচালন ব্যবস্থা ঠিক করা থেকে শুরু করে সেবির নির্দেশিকা নিয়ে একাধিক আইনি লড়াইয়ের সাথে ঝুঁঝতে হয়েছিল ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জকে। শেষ পর্যন্ত না পেরে ব্যবসা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ লাইসেন্স ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় CSE।
জানা গিয়ে, চলতি বছরের 25 এপ্রিল একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা ছাড়া নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়া হয়। সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই সংস্থাটির চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বসু জানিয়েছেন, ‘গত 25 এপ্রিল এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং এর মাধ্যমে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া নিয়ে শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। সেজন্য শেয়ার মার্কেটের নিয়ামক সংস্থা সেবির কাছে ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়। যদিও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেবি আবার ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যায়নের জন্য একটি ভ্যালিয়েশন এজেন্সি নিয়োগ করেছে। তাদের দায়িত্ব CSE এর মূল্যায়ন করা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই নাকি ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের 3 একর সম্পত্তি সৃজন গোষ্ঠীর কাছে কমপক্ষে 253 কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাবেও সবুজ সংকেত দিয়েছে সেবি। শোনা যাচ্ছে, নিয়ামক সংস্থার তরফে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে গেলেই ওই জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে।
বলা বাহুল্য, সালটা ছিল 2013। সে বছর, শেয়ার ব্রোকার কেতন পারেখের 120 কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল। আর সে কারণেই পেমেন্ট সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে অন্যান্য দাবিদারদের টাকা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জকে। শেষ পর্যন্ত পাওনাদারদের টাকা দিতে না পারায় ধীরে ধীরে কলকাতার এই বড় শেয়ারবাজারে ধস নামে। এই ঘটনার পর ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের উপরে থাকা দীর্ঘদিনের আস্থায় ধাক্কা লাগে বিনিয়োগকারীদের। বিশ্বাস হারায় নিয়ামক সংস্থাও। ফলত, বাধ্য হয়েই যাত্রা শেষ করতে হল কলকাতার ঐতিহ্যকে।
অবশ্যই পড়ুন: দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলবেন না রোহিত? ম্যাচের আগে অখুশি হিটম্যান!
উল্লেখ্য, 1908 সালে স্থাপিত হয় কলকাতার অর্থনৈতিক ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকা ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটি। অনেকেই হয়তো জানেন না, একটা সময় ছিল যখন শেয়ার কেনাবেচার নিরিখে এই স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানি বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকেও টেক্কা দিত।