সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: উপরে রাশিয়া, নীচে চিন, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গোবি মরুভূমি আর পশ্চিমে আলতাই পর্বতমালা নিয়েই ভৌগলিকভাবে অবস্থান বন্দি মঙ্গোলিয়ার। একসময় চেঙ্গিস খানের আতঙ্কে গোটা পৃথিবী কাঁপাত এই দেশ। আর এবার তাদের সীমান্তরক্ষীদেরই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার পথে ভারত (India Mongolia Defence)। বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী খবর, চিনের বাড়বাড়ন্ত রুখতেই এবার নয়াদিল্লি কূটনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক খেলতে চলেছে।
মঙ্গোলিয়ার পাশে ভারত!
জানিয়ে রাখি, চলতি বছরের 14 অক্টোবর মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খুরেলসুখ উখনা ভারত সফরে এসেছিলেন। সফর চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় তাঁর। দুই দেশ মিলে মোটামুটি দশটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর মধ্যে সবথেকে অন্যতম হল মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত রক্ষাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গোলিয়ার একটি তেল শোধনাগার তৈরিতে ভারত বিনিয়োগ করবে। আর সীমান্ত নিরাপত্তায় শক্তিশালী করার জন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে।
এদিকে ভারতের হাতে মূলত প্রধান চারটি সীমান্তরক্ষী বাহিনী রয়েছে। আর সেগুলি হল- বিএসএফ যারা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েন, আইটিবিপি যারা চিন সীমান্তে মোতায়েন, এসএসবি যারা নেপাল ও ভুটান সীমান্তে মোতায়েন এবং অসম রাইফেলস যারা মায়ানমার সীমান্তে মোতায়েন। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছে, এই প্রশিক্ষণের গুরুদায়িত্ব বিএসএফ বা আইটিবিপি’র হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। কারণ, বিএসএফের যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাশাপাশি ড্রোন বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও তারা দক্ষ। পাশাপাশি আইটিবিপি’র হাতে রয়েছে সীমান্তে কঠিন পরিবেশ টহলদারি ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা।
দিনের পর দিন বাড়ছে দিনের সঙ্গে উত্তেজনা
উল্লেখ্য জানিয়ে রাখি, মঙ্গোলিয়ার 4630 কিলোমিটার সীমান্তের সবথেকে বড় অংশই চিনের সঙ্গে যুক্ত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠছে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি গোবি মরুভূমির দিক থেকে মঙ্গোলিয়াতে আক্রমণ করছে এবং সেখানকার জমি দখল করার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় ভারতের সামরিক সহায়তা মঙ্গোলিয়ার কাছে হতে পারে বিরাট আশীর্বাদ। বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, নয়াদিল্লি যদি এখন মঙ্গোলিয়ার পাশে দাঁড়াতে পারে, তাহলে বেজিং এর উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, উলানবাটোরের জ্বালানি নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করার জন্য ভারত 17 কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। আর এই অর্থ দিয়ে তৈরি করা হবে তেল শোধনাগার প্রকল্প। এমনকি এটি ভারতের সবথেকে বড় বিদেশি অংশীদারি প্রকল্প হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ই-ভিসার সুবিধা, লাদাখ ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বৌদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকল্পও শুরু করা হচ্ছে বলে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী খবর।
Breaking: India will train Mongolia’s border security forces, announces PM Modi
These forces guard Mongolia’s borders with China and Russia pic.twitter.com/T928zfv2zc
— Shashank Mattoo (@MattooShashank) October 14, 2025
আরও পড়ুনঃ ভাইফোঁটার দিন অনেকটাই পতন সোনা, রুপোর দাম! আজকের রেট
এদিকে জেনে রাখা ভালো, ভারত ও মঙ্গোলিয়ার দ্বীপাক্ষিক বাণিজ্য গত এক বছরে 6 কোটি মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে 11 কোটি মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। আর এই বাণিজ্যের পরিসংখ্যান শুধুমাত্র অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য যে বদলে দিতে পারে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছে, ভবিষ্যতে নয়াদিল্লি যদি মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়, তাহলে বেজিং এর জন্য তা হতে পারে বিরাট চিন্তার কারণ।