প্রীতি পোদ্দার, আসানসোল: ফের আর্থিক দুর্নীতি! প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোটি টাকার চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ল আসানসোলের (Asansol) তৃণমূল নেতার ছেলে তহসিন আহমেদ। বহু দিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি, অবশেষে পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গতকাল অর্থাৎ শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হলেন ওই যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ঝাড়খণ্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁকে পাকড়াও করা হয়। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারও হয়েছে প্রায় আড়াইশো গ্রাম সোনা, বর্তমানে যার মূল্য ৪০ লাখ টাকারও বেশি।
হাতেনাতে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত!
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোটি টাকার চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদ। আর সেই কারণে তিনি প্রতিবার পালানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু অবশেষে পুলিশের নজরদারিতে এবং চেষ্টায় গ্রেফতার হলেন তহসিন। পুলিশ সূত্রে খবর, তহসিন যখন ঝাড়খণ্ডের দিকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন সেই সময় ফাঁদ পেতে তাঁকে পাকড়াও করা হয়। এরপর ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর চন্দ্রচূড় মোড়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। শেষ আপডেট অনুযায়ী জানা গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় আড়াইশো গ্রাম সোনা, বর্তমানে যার মূল্য ৪০ লক্ষ টাকারও বেশি।
বিক্ষোভ বিনিয়োগকারীদের
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত তহসিন আহমেদ মেগা লটারির নাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। বলা হয়েছিল ১ লক্ষ টাকার টিকিটের সদস্যতা নিলে বিনিয়োগকারীর লাভ হবে দেড় থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত। কম সময় রাখলে কম লাভ। বেশি সময় টাকা রাখলে বেশি লাভ। টাকার বিনিয়োগ যত বেশি, লাভের অঙ্ক তত বাড়বে। আর এই অতি লোভে অনেকেই বাড়ির গয়না বন্ধক রেখে, জমি বিক্রি করে নানা সময়ে টাকা জমা দিয়েছেন তহসিনের ওই সংস্থায়। প্রথমে দিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলেও, পরে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। আগস্ট মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেল চড়া হারের মাসিক রিটার্ন। তারপর থেকে গন্ডগোল শুরু। এর পর টাকা ফেরতের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার তহসিনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ।
গা ঢাকা দেয় নেতার ছেলে
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখনই সামনে আসে এক বিস্ফোরক তথ্য। চিটফান্ডের কায়দায় প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে এলাকায়। আর সেই কারণে প্রতারিত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার আমানতকারী। অবসরপ্রাপ্ত এক বিএসএফ অফিসার বলেন, ‘‘প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। ভাল রিটার্ন পেয়ে আরও টাকা বিনিয়োগ করি। সব মিলিয়ে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আর কোনও টাকা পাচ্ছি না। অনেকেই আমার কথা শুনে এই প্রকল্পে টাকা দিয়েছিলেন। এখন সকলেরই টাকা আটকে গিয়েছে।” এদিকে বিক্ষোভকারীদের ভয়ে উত্তর আসানসোলের জাহাঙ্গির মহল্লার বাড়ি ও অফিস তালা দিয়ে গা ঢাকা দেয় তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের জেলার নেতা শাকিল আহমেদ, ছেলে তহসিন আহমেদ ও পুরো পরিবার।
আরও পড়ুন: গলায় শাবলের কোপ! খোদ মেয়রের ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন, চেতলায় আতঙ্ক
প্রসঙ্গত, বাম আমলে ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন শাকিল আহমেদ। সেই সময় ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যে সরকার বদলের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদেও ছিলেন। কিন্তু ছেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ। এদিকে তৃণমূল নেতৃত্বের অন্দরে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। যদিও শাকিল এবং তহসিনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে দলের সংখ্যালঘু সেল। জেলা সভাপতি মেহফুজুল হাসান বলেছেন, ‘‘অভিযুক্ত তহসিন আহমেদের বাবা শাকিল আহমেদের সঙ্গে এখন দলের কোনও যোগাযোগ নেই। আগে উনি সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে উনি দলের কেউ নন।’’












