বিহার নির্বাচনে জিততে ভরসা তন্ত্র সাধনা! কে করছে, কীভাবে করছে ?

Published:

Updated:

Tantra Sadhana Before Bihar Election
Follow

কৃশানু ঘোষ, কলকাতাঃ মেরেকেটে সপ্তাহ দুয়েক বাকি রয়েছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের। জোর কদমে চলছে প্রচার, প্রস্তুতি। প্রতিটি দলের পদপ্রার্থী থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রী – প্রায় প্রত্যেকেই নেমে পড়েছেন প্রচারে। চলছে জনসভা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অভিনেতারা। প্রত্যেকেই নিজেদের দলের প্রার্থীদের জন্য চাইছেন ভোট। প্রত্যেকের লক্ষ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর গদি। কিন্তু, এবার ভোটে জেতার জন্য দেখা গেল এক নয়া প্রচেষ্টা। জনসভা থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্রচার, প্রকল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ভাতা – বিহারের নির্বাচনে এই সবই এখন অতীত। কারণ, বিহার নির্বাচনের আগে ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য এবার বেছে নেওয়া হয়েছে তন্ত্র সাধণার (Tantra Sadhana) পথ! কিন্তু, কারা করছে এসব? উদ্দেশ্যে কি সফল হবে রাজনৈতিক দলগুলির? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

প্রার্থীদের পাশাপাশি নিয়োগ করা হয়েছে তান্ত্রিকদের!

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একদিকে যেমন কঠোর পরিশ্রম করছেন দলের সমস্ত ধরনের কর্মী থেকে শুরু করে প্রার্থীরা, তেমনই অন্যদিকে নিয়োগ করা হচ্ছে তান্ত্রিকদের! যারা জেতা হারা নিশ্চিত করার জন্য একযোগে করছেন প্রচেষ্টা, চালাচ্ছেন তন্ত্র-সাধনা! হ্যাঁ, এমনটাই ঘটছে বিহারের রাজধানী পটনা থেকে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর এক শ্মশানে। জয় নিশ্চিত করার জন্য সেখানে চলছে তান্ত্রিক মন্ত্র এবং আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবহার। আমরা এর আগে দেশের নির্বাচনে জেতার জন্য নির্বাচন কৌশলীর ব্যবহার সম্পর্কে শুনেছিলাম, তবে তান্ত্রিকদের ব্যবহার এই প্রথমবার শুনলাম। তবে অবাক করার বিষয় হল, সেই সমস্ত তান্ত্রিকরা জানাচ্ছেন যে, উজ্জয়িনীর শ্মশানে এই ধরণের আচার-অনুষ্ঠান এই প্রথমবারের মতো করা হচ্ছে না। অর্থাৎ, আগেও নির্বাচনে জেতার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে?

কোথায় চলছে এই তন্ত্র সাধনা?

মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী জেলার চক্রতীর্থ শ্মশানে বিহার নির্বাচনের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে যে, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা তান্ত্রিকদের সাথে যোগাযোগ করেন। একজন তান্ত্রিক সাধক জানিয়েছেন যে তিনি মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর জন্য আগেও এই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান করেছেন।

শ্মশানে তান্ত্রিক আচার-অনুষ্ঠান করার জন্য নিয়োজিত ভৈয়ু মহারাজ, প্রার্থীর নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন যে, উজ্জয়িনীর নলখেড়ার বাগলামুখী পীঠে তান্ত্রিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের জন্য অনেকেই তার সাথে যোগাযোগ করছেন। নির্বাচনে জেতার জন্য ভৈরব সাধনা এবং বাগলামুখী সাধনার পাশাপাশি ভৈরবী, ভৈরব এবং পুতলি সাধনার একাধিক আচার-অনুষ্ঠান এবং রীতি-নীতি পালন করা হয়েছিল। নির্বাচনের জন্য অনুষ্ঠিত এই বিশেষ আচার এবং অনুষ্ঠানগুলি ধনতেরাসের রাতে শুরু হয়েছিল। এমনকি দীপাবলির রাতেও একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। অমাবস্যার রাতে শ্মশানে করা যে কোনও তান্ত্রিক রীতিনীতি প্রায় সাত ঘন্টা ধরে করা হয়। তবে, এর আগে ২০১৮ এবং ২০২৩ সালেও বিহার নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করার জন্য তান্ত্রিক রীতি পালন করেছিলেন, আর এই বছরেও এই রীতি-নীতি, অনুষ্ঠান, বিহারের নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করার জন্য করা হচ্ছে।

কত টাকা খরচ করা হয় এই সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানের জন্য?

বিজয় অনুষ্ঠানের জন্য ভৈরব সাধনা করা হয়। এবং এই সাধনার জন্য খরচ পড়ে ২৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে। এই অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত সরিষার বীজ, লাল মরিচ, হলুদ সরিষার বীজ, অ্যালকোহল, সরিষার তেল, ঘি, ছবিলা, সবুজ এলাচ, লবঙ্গ, কালো মরিচ, জটামানসি, যজ্ঞের উপকরণ, লেবু, নারকেল এবং ফুলের মালা এই আচারে ব্যবহার করা হয়। শেষে, অ্যালকোহল এবং রজন ঢেলে দেওয়া হয় এবং কর্পূর দিয়ে চূড়ান্ত নৈবেদ্য তৈরি করা হয়।

আমরা অনেকেই জানি, আমাদের দেশে যে কোনও নির্বাচনের আগে এখন নির্বাচন কৌশলীর নিয়োগ খুবই সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। এমনকি এই গুরু দায়িত্ব এবং কঠিন কাজের জন্য এক একজন নির্বাচন কৌশলী চেয়ে বসেন কয়েক কোটি থেক প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা। সেখানে নির্বাচনে জেতার জন্য জলের দরে এই ধরনের পন্থা যে কেউই বেছে নেবেন সে কথা বলাই বাহুল্য!

মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও দেশের এই জায়গায় হয় নির্বাচনে জেতার জন্য তন্ত্র সাধানা!

শুধু যে মধ্যপ্রদেশেই নির্বাচনে জেতার জন্য তন্ত্র সাধণা হয় তা কিন্তু নয়। ভৈয়ু মহারাজ ব্যাখ্যা করেছেন যে দেশের সর্বোচ্চ তন্ত্র সাধনা অনুষ্ঠিত হয় অসমের কামাখ্যা পীঠে। সেখানের ভূতনাথ শ্মশানে তান্ত্রিকদের একটি মেলা বসে। যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তন্ত্র সাধনা করতে আসেন। বলা হয় যে নির্বাচনে জয়ের জন্য এখানেও আচার-অনুষ্ঠানও করা হয়।

বিশ্বাস করা হয় যে উজ্জয়িনীর চক্রতীর্থ একটি জীবন্ত শ্মশান। এখানে করা তপস্যা এবং আচার-অনুষ্ঠান ১০০% সাফল্য নিয়ে আসে। বিশ্বাস করা হয় যে পাণ্ডবরাও বগলামুখী পীঠে যজ্ঞ করে যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। ওই মহারাজ আরও জানিয়েছেন যে টিকিট চূড়ান্ত হওয়ার পরে, প্রার্থীরা তন্ত্র সাধনা এবং বিজয় অনুষ্ঠানের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করেন। একাধিক রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করার জন্য তন্ত্র সাধনার আশ্রয় নেয় এবং বর্তমানে, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) অনেকেই আসছেন। উপরন্তু, কিছু এনডিএ প্রার্থীও তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তবে, বেশ কিছু এনডিএ প্রার্থীও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join