বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: দীর্ঘ দ্বীপাক্ষিক সংঘাতের (Pakistan-Afghanistan War) পর তুরস্কের ইস্তানবুলে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এক শান্তি বৈঠক। মূলত তুরস্ক এবং কাতারের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এই আলোচনা থেকে সমাধান সূত্র খুঁজে বের হবে এমনটাই আশা ছিল দুপক্ষের। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হল না। সমঝোতায় আসতে পারল না দুই প্রতিবেশী। তাতে এবার সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান। তাদের অভিযোগ, ইসলামাবাদ কখনই চায়নি শান্তি বজায় থাকুক! তারা মন থেকে এই আলোচনায় অংশ নেয়নি। একথা বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালিবানরা। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েও হুঙ্কার ছেড়েছে তারা। তাতে ক্রমশ ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ। এখন প্রশ্ন আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের যুদ্ধ হলে মহারণ জিতবে কে?
যুদ্ধ হলে জিতবে কে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগান পাকিস্তান সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমাদুল্লাহ আর্চিওয়াল জানিয়েছেন, “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তালিবানের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এমতাবস্তায় আপাতদৃষ্টিতে, যুদ্ধ শুরু হলে লাভবান হবে পাকিস্তান। তবে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চললে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ইসলামের দেশ। আফগান পাকিস্তান সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমাদুল্লাহ বলছেন, “বৈধ উপায়ে আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধ করাটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে পাকিস্তানের পক্ষে। এর আগে পাকিস্তান আফগানিস্তান এবং কাশ্মীরে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়েছিল ধর্মকে আশ্রয় করে। তবে এবার সেই কাজটা সম্ভব হবে না। কেননা, পাকিস্তানের ধর্মীয় পণ্ডিতদের কাছে তালিবানদের সাথে ধর্মের ভিত্তিতে যুদ্ধ ন্যায়সঙ্গত নয়। ”
এছাড়াও একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের বহু রাজনীতিবিদ তালিবানের সাথে যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতাও রয়েছেন। তাছাড়াও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পিটিআই, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি এবং পাখতুনখোয়া মিলি আওয়ামী পার্টি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। তাতে যথেষ্ট ভীত পাক সরকার। অভিজ্ঞ মহলের দাবি, তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে পাকিস্তানকে ধর্মীয় বৈধতা এবং রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে চলতে হবে। এই মুহূর্তে দুটোর কোনটাই নেই পাকিস্তানের কাছে। উল্টোদিকে একেবারে অন্যায় ভাবে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর কারণে নিজের দেশেই সমালোচিত হচ্ছে পাক সেনা। সমালোচনা করছেন আফগানিস্তানের বাসিন্দারাও।
অবশ্যই পড়ুন: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী হচ্ছেন আসিম মুনির?
তবে কূটনীতিকের মতে, শেষ পর্যন্ত যদি সমস্ত সীমা অতিক্রম করে আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে পাকিস্তান, সেক্ষেত্রে তালিবানরাও পিছু হটবে না। আর সেটা হলে দুই প্রতিবেশীর দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আকার নেবে। কাজেই যুদ্ধ হলে যে দুপক্ষেরই ক্ষতি সে কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়বে না। রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে আফগানিস্তানের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও তালিবানদের সাথে একটানা সংঘর্ষের পর বেহাল অবস্থা হবে পাকিস্তানের। তাছাড়াও পশ্চিমের দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থার ভাল নয়। বেহাল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতা, বিনিয়োগ হ্রাসের মতো অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের জনতা। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি একেবারে মাত্রা ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ভেঙে পড়া অর্থনীতি নিয়ে আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়ালে পাকিস্তানের নামের পাশে জুড়তে পারে কাঙাল তকমা। এক কথায়, ক্ষমতার দিক থেকে তালিবানদের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের পক্ষে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় সম্ভব হবে না।












