বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: আমেরিকা ও চিনের মধ্যে পারস্পরিক শুল্কযুদ্ধের আবহে লাভের গুড় খাচ্ছে ভারত। সূত্রের খবর, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নীতির প্যাঁচে পড়ে একেবারে নাকাল অবস্থা জিনপিং সরকারের, এমতবস্থায়, আইফোন নির্মাতা সংস্থা অ্যাপেল (Apple) চিন থেকে ক্রমশ সরে এসে ভারতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
সূত্র যা বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত, 12 মাসের হিসেবে ভারতে কমপক্ষে 2200 কোটি ডলার অর্থাৎ ভারতীয় রুপিতে প্রায় 1.90 লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের আইফোন তৈরি করেছে অ্যাপেল। যেই হিসেবটা গত বছরের তুলনায় অন্তত 60 শতাংশ বেশি। বলা চলে, আমেরিকার সাথে চিনের বাণিজ্য যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে একেবারে মোক্ষম চাল দিয়েছে অ্যাপেল। যার জেরে আইফোন নির্মাণ জগতের রাশ ধীরে ধীরে হারাচ্ছে ড্রাগনের দেশ।
আইফোন তৈরিতে বড় সাফল্য ভারতের!
চিনের সাথে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হওয়ায় আইফোন তৈরির অন্যতম প্রধান গন্তব্য হিসেবে ভারতকে বেছে নিয়েছে আমেরিকার বহু জাতিক সংস্থা অ্যাপেল। সূত্র বলছে, বর্তমান বিশ্বে তৈরি প্রথম 5টি আইফোনের মধ্যে একটি অন্তত ভারতে তৈরি। জানিয়ে রাখি, গত মার্চ মাস পর্যন্ত ভারতে যে 2200 কোটি ডলারের আইফোন তৈরি হয়েছে তা মূলত কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা আইফোনের দাম।
এককথায় বলা যেতে পারে, ফোনগুলি সম্পূর্ণরূপে তৈরির পরই 2200 কোটির খরচ ঠিক করেছে সংস্থা। মূলত দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত ফক্সকনের বিশাল কারখানা ও টাটা গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে অ্যাপেলের বিরাট উৎপাদন আমেরিকান সংস্থাটিকে লাভের মুখ দেখিয়েছে। বলা বাহুল্য, সময়ের সাথে সাথে আমেরিকার সাথে শুল্কযুদ্ধ ও অ্যাপেল সংস্থার ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি চিনের উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে।
সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে ভারতে বিরাট বিনিয়োগ করতে পারে অ্যাপেল?
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, সেমিকন্ডাক্টার বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য উপাদান। সেমিকন্ডাক্টর মাইক্রোচিপের গুরুত্ব এতটাই যে অনেকেই একে একবিংশ শতাব্দীর নতুন তেল বলে অভিহিত করেন। বলে রাখা ভাল, আইফোনের ক্ষেত্রে অন্যতম অপরিহার্য উপাদান সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদনের জন্য খুব শীঘ্রই ভারতকে বেছে নিতে পারে অ্যাপেল।
কেন বলছি? বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী 2026 সারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সেমিকন্ডাক্টর চিপের প্রয়োজন পড়বে, আর সেই চাহিদা থেকেই আগামী দিনে বিপুল পরিমাণে সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরির জন্য খুব সম্ভবত ভারতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে আমেরিকার এই বহুজাতিক সংস্থা।
জানা যাচ্ছে, 2026 সালের মধ্যে অ্যাপেল তার 26 শতাংশ উৎপাদন ক্ষেত্র ভারতে স্থানান্তরিত করবে। আর সেই সূত্র ধরেই, অ্যাপেল স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যাবতীয় ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান এই চিপ তৈরির ক্ষেত্রে চিনের বদলে ভারতকে বেছে নিতে পারে।
ভারতে তৈরি ডিভাইসে কর আরোপ করে না আমেরিকা
চিনের সাথে কর আরোপ জনিত বিষয়টি ভারতের ক্ষেত্রে একেবারেই অন্যরকম। চিনের তুলনায় অ্যাপেলের ক্ষেত্রে ভারত অনেকটাই নিরাপদ। কারণ, ভারতে তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপর সাধারণত কোনও রকম কর চাপায় না, আমেরিকা। কাজেই বিশেষজ্ঞদের মতে, কর দেওয়ার ঝামেলা যেহেতু নেই, তাই নির্ঝঞ্ঝাটে আইফোন তৈরির অন্যতম ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভারত ছাড়া অ্যাপেলের কাছে আপাতত দ্বিতীয় কোনও বিকল্প সে অর্থে নেই।
চিনের বিকল্প হতে পারবে ভারত?
বর্তমান সময়ে অ্যাপেল যে হারে ভারতে ব্যবসা বাড়াচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমেরিকান আইফোন নির্মাতা সংস্থার অন্যতম প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র হয়ে উঠবে স্বদেশভূমি। বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাপেলের প্রায় সব মডেলই এখন ভারতে তৈরি হচ্ছে। তাছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকার সংস্থার উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর নজর রেখে পিএলআই স্কিমের আওতায় 2.7 বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকির সুবিধাও রেখেছে। কাজেই আগামী দিনে যাতে ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যাপেলের কোনও সমস্যা না হয়, সেই পরিবেশ তৈরির আপনার চেষ্টা করছে সরকার।
অবশ্যই পড়ুন: বিশ্বের সবথেকে ঘৃণিত দেশের তালিকায় ১ নম্বরে চিন, ভারতের অবস্থান জানলে লজ্জা পাবেন
উল্লেখ্য, গতবারের একটি সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসন্ন 2026 সালের মধ্যে ভারত যদি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের মূল ক্ষেত্র হয়ে ওঠে অর্থাৎ অ্যাপেল যদি তাদের সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরগুলির বেশিরভাগ অংশ ভারতে স্থানান্তর করে তবে আগামী দিনে কমপক্ষে 10 লক্ষ মেধাবী যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |