চারার দাম ৫০ টাকা, বছরে আয় ৫ লক্ষ! তেজপাতার চাষেই ভাগ্য বদল বাংলার কৃষকদের

Published:

Bay Leaf Farming

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পায়েস বলুন কিংবা বিরিয়ানি, রান্নায় গন্ধ আনার জন্য তেজপাতার জুড়িমেলা ভার। তেজপাতা ছাড়া যেন রান্না অসম্পূর্ণ। আর সেই তেজপাতাই এবার উত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের কাছে সোনায় সোহাগা হয়ে উঠল। একসময় যে সমস্ত জমিতে ধান, গম বা সরষে ফলানো হত, এখন সেই জমিই সবুজ তেজপাতার গাছে (Bay Leaf Farming) ভরে উঠছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে গ্রামের মানুষজন।

এক কৃষকের সিদ্ধান্তে বদলে গেল গোটা গ্রামের ছবি

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের রায়গঞ্জ ব্লকের উত্তর লক্ষীপুর গ্রামের এক কৃষক সুকুমার বর্মন প্রথমবার সাহস করে ধান, গম ছেড়ে তেজপাতার চাষ করেন। ঝুঁকি নিয়ে শুরু করা সেই সিদ্ধান্ত আজ গ্রামের গর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি ৬৫০টি গাছ থেকে বছরে ৮০ থেকে ৯০ কুইন্টাল তেজপাতা উৎপাদন করেন। আর সেখান থেকে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তিনি বলেছেন, আগে এক বিঘা জমিতে ধান ফলিয়ে বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম করা যেত না। আর এখন সেই জমি আমাকে ১০ গুণ বেশি ইনকাম দিচ্ছে।

এদিকে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ, কালিগঞ্জ, ইসলামপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এই তেজপাতার চাষ। রাজ্যে এখন তেজপাতা ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসায় দাঁড়িয়েছে। আর এর পেছনে মহিলাদের অবদানও রয়েছে। কারণ পুরুষরা মূলত গাছ লাগানো ও সংগ্রহের কাজে যুক্ত থাকলেও পাতা আলাদা করা কিংবা শুকনো করার কাজ মহিলারাই করে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানিয়েছে, এখন এখানে প্রায় ৮০% কৃষক তেজপাতা চাষ করছেন আর ৬৪% মহিলার সক্রিয়ভাবেই সেই তেজপাতা আলাদা করা, শুকনো করার কাজে নিযুক্ত রয়েছে। তাদের দিনে ১০০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। আরও এক ব্যক্তি বলেছেন, আমি দিনে সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি পাতা ডাঁটা থেকে আলাদা করি। প্রতি কেজিতে ৩ টাকা মজুরি পাই। আর কাটার সময় হলে মজুরি বেড়ে ৪.৫ টাকা পর্যন্ত হয়। এখন এটাই আমার আত্মনির্ভরতার উৎস।

দিনের পর দিন বড় হচ্ছে এই চাষ

উত্তর দিনাজপুরের জেলার উদ্যান দপ্তরের আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ২৪০ হেক্টর জমিতে তেজপাতার চাষ হত, সেখানে ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৮ হেক্টর। উৎপাদনও প্রায় ৭৬৯ মেট্রিক টন বেড়ে ১০১৯ মেট্রিক টনে পৌঁছে গিয়েছে। তবে এটি বড় শিল্প হলেও এখনও পর্যন্ত অগোছালো। আনুষ্ঠানিক সেরকম কোনও রেকর্ড নেই। তবুও প্রায় ১০ হাজার মানুষ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত।

উল্লেখ্য, এই গাছ একবার বড় হলে ২৫ বছর পর্যন্ত উৎপাদন দেয়। একটি গাছ বছরে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা দেয়। আর এই চাষ করতে জল কম লাগে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। পাশাপাশি ছোট কৃষকদের কাছেও এই চাষ লাভজনক। কৃষক সুকুমার জানিয়েছেন, একটি চারা কিনতে ৫০ টাকা মতো খরচ হয়। আর দুই-তিন বছর যত্ন নিলেই গাছ ফলন দিতে শুরু করে। এখন গাছের ফাঁকে আলু আর কলাইয়ের চাষও করি। ফলে জমিও উর্বর হয়, আর ইনকামও বাড়ে।

আরও পড়ুনঃ শর্মার বদলে বচ্চন! এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে শোয়েবকে যোগ্য জবাব অভিষেকের

রপ্তানি ও দেশের বাজারে চাহিদা

প্রসঙ্গত, তেজপাতার পাতাগুলি গুণমান অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। আর সেগুলি হল A, B এবং C গ্রেড। A গ্রেডের পাতা উপসাগরীয় দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়। আর B এবং C গ্রেডের পাতা দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই যায়। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি থেকে শুরু করে হায়দ্রাবাদ, গুজরাট পর্যন্ত এখন এই পাতার চাহিদা ছড়িয়ে পড়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥