পার্থ সারথি মান্না, কলকাতাঃ দীর্ঘদিন ধরে চাকরি খুঁজছেন, অথচ তেমন কিছুই পাচ্ছেন না? তাহলে অল্প কিছু পুঁজি দিয়ে নিজের ব্যবসা চালু করতেই পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনি নিজেই মালিক হবেন তেমনি মোটা আয় করার সুযোগও পাবেন। আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের বেশ কিছু কম বিনিয়োগে চালু করার মত ব্যবসার সম্পর্কে জানাবো। তাই প্রতিবেদনটি শেষ অবধি পড়ুন।
ব্যবসার আইডিয়া | Business Idea
বাজারে অনেক ধরণের ব্যবসা চালু রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কম পুঁজির প্রয়োজন তো কিছু ক্ষেত্রে বেশি। এছাড়া কিছু ব্যবসায় প্রথম মাস থেকে ভালো আয় হতে পারে তো কিছু ক্ষেত্রে কিছু মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে। নিচে ৫টি ব্যবসার সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানানো হল। এর মধ্যে আপনার পছন্দমত যে কোনো একটি শুরু করে প্রতিমাসে ৩০,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকা আয় করতে পারবেন।
১। ফটো ও ভিডিও গ্রাফির ব্যবসা (Photography & Videography Business)
আজকাল সকলেই চান নিজেদের বিশেষ মুহূর্তগুলোকে সুন্দরভাবে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে। তাই অনেকেই ফটোশুট বা ভিডিও শুট করেন। প্রি ওয়েডিং বা ওয়েডিং ভিডিও শুট তো আছেই, অন্নপ্রাশন থেকেই জন্মদিন বাড়ি এমনকি অনেকেই মডেলিংয়ের জন্যও ফটো বা ভিডিও শুট করে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি একটা ভালো DSLR ক্যামেরা আর মোটামুটি ভালো একটা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ থাকে তাহলেই হবে। একজন ক্লায়েন্ট পেলেই তার থেকে অনায়াসে ফটোগ্রাফির জন্য ২০০০-৫০০০ টাকা ও ভিডিওগ্রাফির ক্ষেত্রে ২৫,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
কিভাবে শুরু করবেন এই ব্যবসা?
যেমনটা আগেই বলেছি এই ব্যবসা শুরুর জন্য আপনার কাছে একটা ভালো ক্যামেরা থাকা খুবই প্রয়োজন। এছাড়া একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপও লাগবে। যদি দুটির কোনো একটি না থাকে তাহলে লোন নিয়ে কিনে নিতে পারেন তারপর কাজের থেকে যা টাকা আসবে সেই থেকেই EMI শোধ করে নিতে পারবে। এরপর আপনাকে নিজের কাজের জন্য কিছু অ্যাড বা প্রমোশনাল ব্যানার ডিজাইন করে নিতে হবে। সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে ও প্রয়োজনে ছোটখাটো অ্যাড চালাতে হবে। তাহলেই ক্লাইন্টের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
কত টাকা আয় হতে পারে?
আপনি যদি ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির ব্যবসা শুরু করেন তাহলে প্রতিমাসে আপনার আয় হয়তো নির্দিষ্ট থাকবে না। তবে একটা ভালো ক্লায়েন্ট পেলেই গোটা মাসের খরচ উঠে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় ৩০,০০০ টাকা হবেই। তবে বিয়ের মরশুমে আপনার আয় দ্বিগুণ তিনগুন অর্থাৎ প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা হবেই।
২। পেপার ব্যাগ তৈরির ব্যবসা | Paper Bag Making Business Idea
বর্তমানে পরিবেশ সম্পর্কে কম বেশি সকলেই সচেতন। সরকারের তরফ থেকেও প্লাস্টিক বর্জন করে পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্র ও প্যাকেজিং ব্যবহারের জন্য প্রচার করা হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকের ব্যাগ বা থলের পরিবর্তে কাগজের ব্যাগের ব্যবহার বেড়েছে অনেকটাই। তাই আপনি অল্প পুঁজিতে পেপার ব্যাগ তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এতে করে প্রতিমাসে খুব সহজেই ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা আয় করতে পারবেন।
কিভাবে শুরু করবেন পেপার ব্যাগের ব্যবসা?
এই ব্যবসা শুরুর জন্য সবার আগে আপনার একটা ঘুরে প্রয়োজন হবে। যেখানে কিছু মেশিন ও তৈরী হওয়া ব্যাগ রাখতে হবে। তারপর কলকাতার বড়বাজার এলাকা থেকে পেপার কাটিং মেশিং কিনে আনতে হবে। শুরুতে কিছুটা কষ্ট করে কাজ করতে হবে কারণ অটোমেটিক পেপার ব্যাগ তৈরির মেশিনের খরচ অনেকটাই। তার বদলে কাটিং মেশিনে কাটিং করার পর হাতে করেই আঠা লাগিয়ে ব্যাগ তৈরী করে নিন আর দোকানে বিক্রি করুন।
কত টাকা আয় হতে পারে?
এই ব্যবসায় আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা বা নিম্নসীমা নেই। আজকাল প্রায় সমস্ত দোকানেই কাগজের ব্যাগ ব্যবহার চালু হয়ে গিয়েছে। তাই আপনি যদি নিজের এলাকার ৫০-১০০ টা দোকানে সারা মাসের কাগজের ব্যাগের কন্ট্রাক্ট নিয়ে নিতে পারেন তাহলেই নিশ্চিন্তে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
৩। টিভিন সার্ভিসের ব্যবসা | Tiffin Service Business
এই ব্যবসাটি হল সবচেয়ে সহজ একটি ব্যবসা যেটা ঘর থেকেই যে কেউ শুরু করতে পারবে। আপনি যদি ভালো রান্না করতে জানেন তাহলেই কেল্লা ফতে। অনলাইনে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে বা জনবহুল একালায় ব্যানার লাগিয়ে নিতে পারলেই লোকে নিজে থেকে যোগাযোগ করবে। আর যদি খাবারের মান ভালো হয় তাহলে লোকের মুখে মুখেই নাম ছড়িয়ে পড়বে।
কিভাবে শুরু করবেন টিফিনের ব্যবসা?
প্রাথমিকভাবে বাড়ি থেকেই এই ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। তাই আলাদা করে বাসনপত্র কেনার প্রয়োজন হবে না। তবে শুরুতে কিছু পুঁজি লাগবে কারণ একটা গ্যাস সিলিন্ডার ও কিছু প্যাকেজিংয়ের মেটিরিয়াল লাগবে। এক্ষেত্রে ৫০০০ – ৬০০০ টাকা বিনিয়োগই যথেষ্ট।
কত টাকা আয় করা সম্ভব?
যে কোনো খাবারের ব্যবসাতেই কম বিনিয়োগে মোটা টাকা লাভ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। সকাল, দুপুর ও রাত্রি তিন বেলার খাবার যদি বিক্রি করেন থালে প্রতিদিন কম করে ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব। সেই হিসাবে মাসের ৪৫,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা উপার্জন করা সম্ভব বাড়ি থেকেই।
৪। আচার তৈরির ব্যবসা | Aachar Business
আপনি যদি একজন মহিলা হন আর ভালো রান্না করতে পারেন বা বলা ভালো আচার বানাতে পারেন তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা ব্যবসা হতে পারে আচারের ব্যবসা। বাড়ি থেকেই এই কাজ শুরু করা যেতে পারে। অনলাইন ও অফলাইন উভয়ভাবেই বিক্রি করতেও পারবেন এই প্রোডাক্ট। আর একবার ব্যবসা ঠিক মত দাঁড়িয়ে গেলেই প্রতিমাসে ৩০,০০০ থেকে ৫ ০,০০০ টাকা আয় নিশ্চিত।
কিভাবে শুরু করবেন আচারের ব্যবসা?
এই ব্যবসার জন্য আলাদা করে তেমন কিছুই প্রয়োজন নেই। আপনি বাড়ি থেকেই আচার তৈরির কাজ শুরু করতে পারেন। ছোট ছোট ব্যাচে আচার বানান, তারপর সেগুলোকে বাজার থেকে কিনে আনা প্লাস্টিক বা কাঁচের জারে প্যাক করে নিন। পাকিং হয়ে যাওয়র পর লেবেলিং করে নিলেই আচার বিক্রির জন্য তৈরী। এরপর সেগুলোকে মার্কেটিংয়ের পালা। অফলাইনে মুদিখানার দোকানে গিয়ে অল্প অল্প করে শিশি দিয়ে আসুন, আচার যদি ভালো হয় তাহলে রিপিট অর্ডার আসবেই।
একইসাথে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের আচারের ছবি শেয়ার করুন। অনলাইন থেকে অর্ডার এলে সেগুলোকে পার্সেলের মাধ্যমে ডেলিভারি করুন। এরপর কাস্টমার রিভিউ গুলো ফের সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করুন তাহলেই দেখবেন বিক্রি আরও বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ মাত্র ১০ হাজার বিনিয়োগ, আয় হবে লাখে! রইল সামান্য পরিশ্রমেই দারুণ ব্যবসার সন্ধান
কত টাকা আয় সম্ভব?
আপনি যদি আচারের ব্যবসা শুরু করেন তাহলে প্রতিকেজিতে অনায়াসে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। এখেতে আপনি যদি রোজ ১০ কেজি আচারও তৈরী করে বিক্রি করতে পারেন তাহলেই প্রতিমাসে ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
৫। চায়ের দোকান | Tea Stall Business
শুনতে অবাক লাগলেও একটা চায়ের দোকান থেকেই প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল দোকানটিকে একটি জনবহুল এলাকা যেমন অফিস পাড়া বা ব্যস্ত বাজার এলাকার মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া চায়ের সাথে বিস্কুট, সিগারেট ইত্যাদি দ্রব্যও রাখতে পারেন।
কিভাবে শুরু করবেন চায়ের দোকান?
আপনি যদি চায়ের দোকান খুলতে চান তাহলে সবার আগে একটা ভালো লোকেশনে দোকান খুঁজতে হবে। এরপর চা তৈরির জন্য কিছু সরঞ্জাম ও সিলিন্ডার সহ গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে। সব মিলিয়ে মোট ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া বিস্কুট, কেক ও সিগারেটের মত কিছু জিনিস তোলার জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে। তাহলেই আপনি চায়ের স্টল খুলে ফেলতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ অল্প বিনিয়োগের মোটা আয়, রইল বাড়ি থেকেই শুরু করার মত তিনটি লাভজনক ব্যবসার খুঁটিনাটি
কত টাকা আয় করা সম্ভব?
একটা চায়ের দোকান যদি ঠিকমত লোকেশনে খোলা যায় তাহলে প্রতিদিন কম করে ৫০০-৭০০ কাপ চা বিক্রি করে ফেলা যায়। এক্ষেত্রে ১ টাকা করেও যদি লাভ ধরেন তাহলে শুধুমাত্র চা বিক্রি করেই ৭০০ টাকা। এরপর বিস্কুট, কেক ও সিগারেটের মত জিনিস বিক্রি করে আরও ৩০০ – ৫০০ টাকা আয় করা যেতে পারে। ফলে সব মিলিয়ে মোট ১৫০০ টাকা প্রতিদিন অর্থাৎ মাসে ৪৫,০০০ টাকা পর্যন্ত যায় করা সম্ভব।