প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দেখতে দেখতে চোখের নিমেষে কেটে গেল পাঁচটা দিন। তাই দশমী আসতেই বিষাদের সুর ভেসে আসে চারিদিক থেকে। তাই এক কথায় বলা যায়, এই দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) আসলে বাঙালির ইমোশন। তবে একটা কথা মানতেই হবে কলকাতা ও বাংলার দুর্গাপুজো এখন কেবল ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি এক বিশাল অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে। দিন যত এগোচ্ছে দুর্গাপুজো শুধু প্রতিমা বা প্যান্ডেল নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। পাশাপাশি এই পুজোকে কেন্দ্র করে নানা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে থাকে। চলতি বছরেও রাজ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
ব্যাপক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি রাজ্যে!
সম্প্রতি এক রিপোর্টে দাবি করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সমীক্ষা করে দেখেছে যে, দুর্গাপুজো পশ্চিমবঙ্গের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ২.৬ শতাংশ জুড়ে রেখেছে। ২০২৫ সালে পুজোয় মোট অর্থনৈতিক লেনদেনের বাজারমূল্য ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দুর্গাপুজোর সবচেয়ে বড় দিক হল, আয়ের বণ্টন। উৎসবকেন্দ্রিক আয় সরাসরি পৌঁছয় সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের কাছে। প্রতিমাশিল্পী, ঢাকি, প্যান্ডেল মিস্ত্রি, আলোকসজ্জার শ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মী– হাজার হাজার মানুষের অস্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি হয়। বড় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি হকার, ছোট দোকান, মিষ্টির দোকান, এমনকী চায়ের স্টলও আয়ও বাড়িয়ে নিতে পারে। এমতাবস্থায় এ বছর বাংলায় পুজোর অর্থনীতির বহর ৪৬ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা অর্থনীতির দিক দিয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে বাণিজ্য মহল।
বিদেশেও চাহিদা বেড়েছে মা দুর্গার আরাধনার
বাঙালি-জীবন দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাঁচে-মরে। জীবনযাত্রার প্রতি স্তরে এই শারদ উৎসব এমন ভাবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে যে, তার অর্থনীতির বহর কিংবা বৃদ্ধির হার হিসাব করা কঠিন। বর্তমানে দুর্গাপুজো কেবল কলকাতার নয়, বিশ্বের বাঙালিদের উৎসব। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও বা দুবাইয়ে প্রবাসী বাঙালিরা পুজো আয়োজন করে। অনেক সময় কলকাতার মণ্ডপের সঙ্গে ডিজিটাল লাইভ সংযোগ রাখে। এর ফলে দুর্গাপুজো এক গ্লোবাল কালচারাল নেটওয়ার্কে রূপ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের চাহিদা ১২,০৫০ মেগাওয়াট ছুঁয়েছে, যেখানে গত বছর উৎসবে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৯,৯১২.৭১ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: ‘পহেলগাঁও শিখিয়েছে কে বন্ধু আর কে শত্রু!’ দশমীতে RSS-র অনুষ্ঠানে বললেন মোহন ভাগবত
ব্যবসায় বিপুল লাভ বৃদ্ধি
অন্যদিকে, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সমীক্ষা অনুযায়ী গত বারের তুলনায় চলতি বছর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বিক্রির পরিমাণ। চটি বছর সোনার গয়না বিক্রি প্রায় ২৫%, জুতা ২০%, পোশাক ২২% এবং খাদ্য ও পানীয় বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে ২০২১ সালে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে কলকাতার দুর্গাপুজো এখন এক আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান। এর ফলে হোটেল, বিমান সংস্থা এবং স্থানীয় পরিবহণের ব্যবসাও বিপুল লাভবান হয়। তাই সব মিলিয়ে বলা যায়, দুর্গাপুজো এখন আর উৎসব নয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এক চালক। যা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে আর্থিক প্রভাব ফেলে।