India Hood Decode: মহুয়া না অভিষেক, কার জন্য ডুবল কল্যাণ

Published on:

Updated on:

Kalyan Banerjee

এক সময় যিনি ছিলেন মমতা ব্যাণার্জির একনিষ্ঠ সঙ্গী, একবার বিধানসভা, এবং চারবার লোকসভা নির্বাচন জিতে যিনি দেখিয়েছিলেন নিজের কেরামতি, আজ সেই কল্যাণ ব্যাণার্জি (Kalyan Banerjee) তৃনমূলে কোণঠাসা। হঠাৎ করেই ছেড়ে দিলেন তৃণমূলের সম্মানীয় পদ।

কিন্তু কী এমন হল যার জন্য আজ পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন তৃণমূলের সাংসদ! এত বিশ্বস্ত সৈন্যের ইস্তফা কেন এত সহজে মেনে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কারণ কি মহুয়া, নাকি নিজের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? কীভাবেই বা শুরু হল এই বিবাদ? আজ সেই তথ্য ডিকোড করবে India Hood।

ঘটনাটা কী?

৪ঠা আগস্ট  দুপুরবেলায়, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক পদ থেকে হঠাৎ করেই ইস্তফা দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রায় বছর তিনেক আগে এই পদ থেকে কল্যাণকে ইস্তফা দিতে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বকুনি খেয়েছিলেন আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার! আর, বর্তমানে, কল্যাণের সেই পদের ইস্তফা গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই ভাবছেন এই ইস্তফার কারণ মহুয়া মৈত্র। কিন্তু এর বীজ বপন রয়েছে সেই ২০২২ সাল থেকে।

দ্বন্দের সূত্রপাত

সালটা ২০২২-এর জানুয়ারি মাস। রাজ্যে তখন প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ২০,০০০ মানুষ। সেই আবহে দু’মাসের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচী অর্থাৎ পুরভোট না করার সিদ্ধান্ত নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিষেকের এই ‘ব্যক্তিগত মত’-এর বিরোধিতা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি খোঁটা দিয়ে জানান, ‘‘বর্ষবরণের দিনে ডায়মন্ড হারবারে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। মুম্বইয়ের গায়ককে এনে জলসা হয়েছিল। সেখানে কি সংক্রমণের সম্ভাবনা ছিল না?’’

ইন্ডিয়াহুডের বিশেষ প্রতিবেদন

এই আক্রমণের পর থেকেই আগুন আর নেভার নাম নেয়নি। তা বাড়তে থাকে সময়ের কালচক্রে।

কারণ তার পরেই কল্যাণের মতামতের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই রয়েছেন অভিষেক, তার মন্তব্য আমাদের চুপ করে শোনা উচিত।’’

এরপর পাল্টা জবাব দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে নেতা বলে মানি না। অভিষেক যদি ত্রিপুরা আর গোয়া জিতিয়ে দেখাতে পারেন, তাহলে ওঁকে নেতা বলে মেনে নেব।’’

এর পাল্টা অভিষেক বলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, অভিষেক আগে জিতে আসুক, তার পর মানব। আমায় তখনও মানতে হবে না। তৃণমূলের কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে শক্ত শিরদাঁড়ার প্রমাণ দেখান, তাহলেই হবে।’’

এরপরেই রিষড়া সহ একাধিক জায়গায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে একাধিক পোস্টার নজরে আসে। কে বা কারা এই পোস্টার মেরেছেন, তা নিয়ে কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, কারা এর পিছনে রয়েছে তা নিয়ে পাওয়া যায় বেশ কিছু ইঙ্গিত। কারণ এই নিয়ে রিষড়ার বাসিন্দা আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সরাসরি কল্যাণকে লোকসভার চিফ হুইপ পদ থেকে পদত্যাগ করার কথাও বলেন। এই নিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সরিষায় ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান এলাকার কিছু মানুষ। তাঁদের দাবি, অভিষেককে অপমান করেছেন কল্যাণ। এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ছবি টুইট করেন, যাতে লেখা ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’, সাথে দেন #withAB।

এছাড়া ওই মাসেই শ্রীরামপুরে একটি ভরা সভায় কল্যাণ আরও বলেন, ‘‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিতে বিশ্বাস করি। তৃণমূলের, তৃণমূল স্তরের কর্মী থেকে আমরা সকলে মিলে কাজ করি।’’

এরপর এই বিতর্কে অভিষেক ব্যাণার্জি জানান, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, তা ভুল নয়। আমারও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমিও আর কাউকেই নেতা বলে মানি না।’’ উল্টে কল্যাণের এই বিরোধিতাকে ইতিবাচক রূপ দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কল্যাণ কিছু বলেছেন মানেই প্রমাণিত হয় দলে গণতন্ত্র রয়েছে।’’‌

তবে, অভিষেকের এই মন্তব্যের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেয়নি কল্যাণ।

ফের নতুন বিতর্কঃ

এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের নতুন বিতর্কের জন্ম দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুরভোটের আগে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতির আওয়াজ তোলেন অভিষেক । যা আঁটকে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দলের অন্দরের অনেকেই এই নীতির যেমন সমর্থন করেন, অনেকেই আবার দ্বন্দ প্রকাশ করেন।

এই নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘দলে এক ব্যক্তি এক পদ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যাঁরা এই নীতির প্রচার করছে, তাঁরা আসলে দলের বিরুদ্ধে বলছে। দলবিরোধী কাজ করছে।’’

আইপ্যাক নিয়ে বিরোধিতা

উনিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিপর্যয়ের পর আই-প্যাককে কলকাতায় এনেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই আই-প্যাকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন কল্যাণ। তিনি বলেন, এত নির্দল প্রার্থী হওয়ার জন্য আইপ্যাক-ই দায়ী। নাম না করে এক নেতাকে পালিশ করে দেওয়ার হুঙ্কারও দেন তিনি। অনেকেই এই হুঙ্কার অভিষেকের বিরুদ্ধে বলে মনে করেন।

নির্বাচনী প্রচারে দূরত্ব

সালটা ২০২৪। একাধিক ছোট বড় সমস্যা পেরিয়ে, ফের বড়সড় দ্বন্দ প্রকাশ্যে আসে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। শ্রীরামপুরের লোকসভা প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোড়া সভা করলেও, একবারও আসেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া, আরও দুই প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়ের নির্বাচনী প্রচারেও দেখা যায়নি অভিষেককে, এটা কোয়েন্সিডেন্স হলেও, এটা নিয়ে একাধিক বিতর্ক রয়েছে।

নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ

দলের নবীন নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক ক্ষেত্রেই বয়সকে রাজনীতির মাপকাঠি করে এসেছেন। তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘‘বয়স একটা ফ্যাক্টর। পঁয়ষট্টির পরে অনেক কিছুই করা যায় না!’’ যার পর কল্যাণ, অভিষেকের নাম না করে বলেন, ‘৭৮ বছর বয়সেও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হচ্ছে ট্রাম্প’, আবার তার প্রত্যুত্তরে অভিষেক বলেন, ‘বাইডেন-এর বয়স ৮১, কিন্তু আমাদের সমাজে এই অংশের সংখ্যা কত?’ অন্যদিকে সৌগত রায় বলেন, ‘‘মনের বয়সটাই আসল।’’

চলতি বছরে মহিলা বিদ্বেষী হিসাবে নাম জড়ায় তাঁর

দিনটা ২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল, দিল্লির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে যান তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। সেখানে এক মহিলা সাংসদের নাম না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে যেতে বলা হয়, যা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ। ওই মহিলার ব্যবহারে মেজাজ হারান কল্যাণ, ব্যবহার করেন অপশব্দ। যার পরেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে সেখানে কর্তব্যরত বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের কাছে কল্যাণকে গ্রেফতার করার আবেদন করেন ওই মহিলা সাংসদ। যা দেখে কল্যাণ আরও রগে বলেন, ‘‘ আমায় বলছে জেলে ঢোকাবে? আমি ৪০ বছর ধরে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে এই জায়গায় এসেছি। আর কেউ কেউ তো কংগ্রেস নেতার বান্ধবীর পরিচয় নিয়ে রাজনীতিতে এসেছে! তাঁদের কাছে শিখতে হবে?’’ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’র সদস্য হয়ে প্রথমে কংগ্রেসে, এবং তার পরে তৃণমূলে আসেন মহুয়া।

এরপর ৮ই এপ্রিল, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে তৃণমূল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একাধিক স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। যেখানে কল্যাণ নামের এক ব্যাক্তিকে দেখা গিয়েছে একজন মহিলাকে ‘ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি’ বলতে। যার পর এই দ্বন্দ আরও প্রকাশ্যে চলে আসে।

এর মধ্যেই দমদমের সাংসদ সৌগত, ওই মহিলা সাংসদের পক্ষে মন্তব্য করে বলেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কিন্তু নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে, যা ওই মহিলা সাংসদকে অসম্মানিত করেছে। এটা ঠিক নয়।’’

এরপর ৮ই এপ্রিল, নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে কল্যাণ বলেন, ‘‘সৌগত রায়ের কোনও ক্যারেক্টার আছে নাকি? নারদার টাকা নিয়েছিল, মনে নেই? নারদার চোর আর এর-তার থেকে গিফ্‌ট-নেওয়া সব দু’নম্বরিগুলো এক জায়গায় হয়েছে। দু’নম্বরিদের এক জায়গায় হতে বেশি সময় লাগে না।’’

এক সময় বিদেশী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার নিয়ে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন মহুয়া। তাই সরাসরি না বললেও গিফট নেওয়া বলতে মহুয়াকেই যে ইঙ্গিত করেছেন কল্যাণ তা প্রকাশ পেয়েছে। তবে, সেই গিফট নেওয়ার সময়ে জখন মহুয়াকে বিরোধী থেকে শুরু করে মিডিয়া কাটা-ছেঁড়া করছে, তখন তাঁকে সমর্থন করে আওয়াজ তুলেছিলেন কল্যাণ নিজেই।

কসবা কাণ্ড

এরপর ২০২৫ সালের ২৭শে জুন, কসবা ল কলেজের ঘটনা নিয়ে যখন প্রত্যেকেই ছি ছি করছেন, তৃণমূল দলের তরফ থেকেও সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। দল দেখা হবে না।‘

ঠিক তখনই উল্টো মন্তব্য কর বসেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘সহপাঠী যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করেন, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে? পুলিশের পক্ষে কলেজের ভিতরে গিয়ে সহপাঠীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।“ এই মন্তব্যই যেন কল্যাণের সাথে তৃণমূলের সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার কাজ করে। অনেকেই কল্যাণের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে।

তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়, ‘‘এই ধরনের বক্তব্য ব্যক্তিগত। কোনও ভাবেই তা দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না।’’

এরপরেই তৃণমূলের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ২৮শে জুন নিজের এক্স হ্যান্ডলে পাল্টা পোস্ট করে শ্রীরামপুরের সাংসদ লেখেন, ‘‘হাজার বার বলবো। আমি তৃণমূলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি। এই মুহূর্তে সুশীল বিবৃতি দিয়ে কোনও পরিবর্তন হবে না। বরং অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে এখনই কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’

এরপর, এই আগুনে ঘি পড়ে, যখন মহুয়া মৈত্র কারোর নাম না করে তৃণমূলের এই পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘‘ভারতে নারীবিদ্বেষ, দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন” ।

এরপরেই ফের আক্রমণাত্বক সুরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেড় মাসের হানিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি ওঁর আমার পিছনে লাগা শুরু হল? আমি সব নারীকে সম্মান করি, কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি। আপনি এক মহিলার ৪০ বছরের বিবাহিত জীবন নষ্ট করে, তাঁকে কষ্ট দিয়ে সেই পুরুষকে বিয়ে করেছেন। আমি নারীবিদ্বেষী? মহুয়া নিজের কেন্দ্রে অন্য কোনও মহিলা নেত্রীকে ‘উঠতে’ দেন না। কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে দিদি আমাকে প্রচারে যেতে বলেছিলেন। উনি আইপ্যাককে বলে আমার যাওয়া আটকে দেন। এত কিসের ভয়?’’

মহুয়া-কল্যাণ সংঘাত প্রকাশ্যে!

এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানে কল্যাণকে বলতে শোনা যায় ”অসভ্য মহিলা MP-কে সহ্য করব না..সুন্দরী মহিলা বলে এই নয় আর ইংরেজি ফটফটফটফটফট করে করতে পারে বলে, এই নয় যে পুরুষকে অসম্মান করতে পারে তাঁরা।’

গত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলনেত্রী দিপ্সীতা ধরকে নিয়ে কল্যাণের নানা মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি, একটি সাক্ষাৎকারে কল্যাণের সেই আচরণ এবং মন্তব্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘শূকরশাবকের সঙ্গে কখনও লড়াই করতে নেই। সে চাইবে লড়াই করতে। কিন্তু আপনি করলে নোংরাটা আপনার গায়েও লাগবে।’’ এর পরেই মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘নারীবিদ্বেষী, হতাশাগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা সব দলেই রয়েছেন। সংসদেও তার প্রতিফলন রয়েছে।’’

পদত্যাগ

এরপর ৪ঠা আগস্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাংসদদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ঠিকমতো সমন্বয় হচ্ছে না। যা শুনে কল্যাণ মনে করেন, দিদি তাঁর দিকেই আঙুল তুলছেন। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগেই সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে দেখে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ওঠেন, “আজ দিনটাই জলে গেল রে।“ যা সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এরপর ভার্চুয়াল বৈঠকের পর দলের চিফ হুইপ অর্থাৎ মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দেন কল্যাণ। সাথে মিডিয়ায় বলেন, “আগেই বলেছিলাম দিনটা খারাপ যাবে।“ এর পাশাপাশি তিনি জানান, “মমতা তাঁর প্রতি ‘অবিচার’ করলেন ‘‘মহিলাকেন্দ্রিক দলে মহিলাদেরই প্রাধান্য। পুরুষদের কোনও গুরুত্ব নেই।’’

এরপরেই রাজ্য রাজনীতিতে আসে বড় বদল। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় নাম ঘোষণা করা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই ঘোষণা করেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একদিকে নবীন নেতা অভিষেকের দলনেতা হওয়ার ঘোষণা, অন্যদিকে ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতার তিরস্কার পরিষ্কার করে দিচ্ছে, ঠিক কী কারণে ইস্তফা দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পদত্যাগের পর সোমবার এক্স পোস্টে মহুয়া সম্পর্কে কল্যাণ লেখেন, ‘‘সম্প্রতি একটি পডকাস্টে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য শুনেছি। যেখানে তিনি সহ-সাংসদকে ‘শূকরশাবক’ বলেছেন। যা শুধু অবমাননাকর নয়, সাধারণ নাগরিক রীতির পরিপন্থী।’’

এরপর ৫ই আগস্ট, গৃহীত হয় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ। ওই দিনই লোকসভার নবনিযুক্ত তৃণমূল দলনেতা অভিষেক ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের বিভিন্ন স্তরের চার হাজার নেতা, জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও যোগ দেননি সাংসদ কল্যাণ। কল্যাণ দিনের শেষে বলেন, ‘‘ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’

তবে, এখানেই থেমে যায়নি কল্যাণ, পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার পর দলকে যেন চ্যালেঞ্জ জানায় সে। ৬ই আগস্ট, সংসদের ধর্নায় গরহাজির থেকে কটাক্ষ করেন কল্যাণ। বলেন, ‘’যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আমার চেয়েও জোরে বলার লোক আছে। সবাইকে শুভেচ্ছা। আমার চেয়েও ভালো কাজ করবে। প্রমাণ করবে আমি অযোগ্য।“

এছাড়াও, তিনি বলেন, “লোকসভায় থাকেন কতজন? কাকলি ঘোষ দস্তিদার থাকে না, পার্থ ভৌমিক থাকে না, অরূপ চক্রবর্তী থাকে না, বাঁকুড়ার এমপি থাকে না, কেউ নাটক করছে, কেউ থিয়েটার করছে, কেউ লোকসভায় আছে। কেউ একটা কথা পর্যন্ত বলে না। দক্ষিণ কলকাতার এমপি মালা রায় একদিন আসেন, মমতা দি জানেন কীভাবে লোকসভা চালাতে হয়? দল যদি সব জানে, দল স্টেপ নেয় না কেন? মমতা দি সবার দোষ দেখতে পারে, আমার দোষ দেখতে পারে না। আমি সব থেকে বেশি কাজ করেছি, স্লোগান দিয়েছি বলে আমি ইন এফেক্টিভ। ভালো ইংলিশ বলে, দামী শাড়ি পড়ে, তাঁরা সবথেকে বেশি এফেক্টিভ এখন। ভালো কাজের দাম পাওয়া যায় না। যারা সমালোচনা করে, মমতাদিকে গালাগাল দেয়, দিদি তাদেরকে সম্মানিত করে।”

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥