India Hood Decode: বাংলায় শুরু রাষ্ট্রপতি শাসনের কাউন্টডাউন!

Published:

President Rule In Bengal
Follow

২০২৫-এর শেষেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে পশ্চিমবঙ্গে (President Rule In Bengal)! ২০২৬-এর ভোটের আগেই এক অন্য রূপ দেখবে বাংলা! এমনই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন বিখ্যাত জ্যোতিষী, শর্মিষ্ঠা ধস। বহুদিন ধরেই বার বার এই ধরনের দাবি করে আসছে শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পালরা! এবার কী তাহলে সেই দিকেই যাচ্ছে রাজ্য?

পশ্চিমবঙ্গে SIR ঘোষণা হতেই বেজায় চটেছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। কখনও হুমকি দিচ্ছে BJP-কে, তো কখনও নির্বাচন কমিশনকেও! কখনও নিদান দিচ্ছে BJP-কে পুড়িয়ে মারার, আবার কখনও পোস্টে বেঁধে রাখার!

SIR-এ বাদ যেতে পারে প্রায় ১ কোটি ভুয়ো ভোটার! যদি তা হয়, তবে শুধু পায়ের তলার মাটি নয় গদিও হাতছাড়া হতে পারে তৃণমূল সরকারের! আর তার আঁচই হয়তো পেয়েছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। তাই তারা বারবার দিয়ে যাচ্ছে হুমকি!

তাহলে কি সত্যিই এক বড় হিংসার মুখে ঢলে পড়ছে বাংলা? ২০২১-এর মতো কি ফের বাংলায় জ্বলবে আগুন, ফাটবে বোমা? সত্যিই কি জারি হবে রাষ্ট্রপতি শাসন? কোন অঙ্কে ঘুরবে পশ্চিমবঙ্গের খেলা? আজ India Hood ডিকোডে পরিসংখ্যান ও প্রমাণ দিয়ে আমরা তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য যা চমকে দেবে আপনাকেও!

সময়টা ২০২৫-এর জুলাই। ABP News-এর এক সাক্ষাৎকারে এক ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী করে বসেন জ্যোতিষী শর্মিষ্ঠা ধস। এর আগেও তার বহু ভবিষ্যদ্বাণী বার বার সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ইলেকশন জিততে পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি চলতি বছরের শেষেই বঙ্গে জারি হতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন। সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে চলবে সবচেয়ে বেশি অরাজকতা। খারাপ সময় চলবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

তবে, ভবিষ্যদ্বাণী বাদ দিয়ে কিছু ফ্যাক্ট তুলে ধরা যাক! সালটা ২০২৪। সন্দেশখালির ঘটনায় National Commission for Scheduled Castes অর্থাৎ NCSC-র প্রধান অরুণ হালদার দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূকে একটি রিপোর্টে জানায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত। এমনকি জাতীয় মহিলা কমিশনও এই মর্মে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূকে রিপোর্ট দিয়ে NCSC-র আবেদনের সমর্থন জানায়।

অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল এমনকি বর্ষীয়ান অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীও এখনও পর্যন্ত রাজ্যে একাধিকবার দাবি করেছেন রাষ্ট্রপতি শাসনের!

এমনকি চলতি বছরে, ওয়াকফ আইন সংশোধন নিয়ে রাজ্যে যে হিংসা দেখা গিয়েছে, তাতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদের স্থানীয়রা। এবং তারাও এই ঘটনার পর রাজ্যে  রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তোলেন।

অর্থাৎ, ভাবুন তো – কোনও রাজ্যে বিরোধী দল যে শাসক দলের বিরোধিতা করবে এটাই কাম্য! কিন্তু রাজ্যের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নিরপেক্ষ সংস্থা প্রত্যেকেই দাবি তুলছে রাষ্ট্রপতি শাসনের! কেন এমন চরম পদক্ষেপের দাবি উঠছে বারবার?

কারণটা পরিষ্কার অনেকের কাছেই। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট হোক কিংবা বিধানসভা ভোট, কিংবা লোকসভা ভোট – সব ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ হিংসা এবং গুলি-বোমা চলে তা কারোরই আর অজানা নেই। ২০২১ সালের ভোটের পর বাংলায় বাড়ি ছাড়া হয়েছিল প্রায় ১৫,০০০ মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৫০ জনেরও বেশি। তাই SIR-এর রেজাল্টের পর যে এমন ঘটনা ঘটবে না, তা বলাটা এক প্রকার বোকামো ছাড়া আর কিছু নয়! আর তার আঁচ এখনই পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের কোথায়!

কী বলছে তৃণমূল নেতৃত্বরা?

যখন বিহারে SIR লাগু হয়েছিল, তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রতিবাদ করার হুমকি দিয়েছিলেন। বারণ করেছিলেন কোনও তথ্য না দিতে।

আর বাংলায় SIR ঘোষণা হতেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের উদ্দেশ্যে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি, সরকার কিন্তু বদলাবে। দেশ ছেড়ে পালাবেন না। যেখানে যাবেন খুঁড়ে নিয়ে আসবো।“ অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে আদেশ দেন, “বিজেপি আসলে বাবা-দাদুর জন্মের কাগজ দেখতে চাইবেন। না দিলে পোস্টে বেঁধে রাখবেন।“

একধাপ এগিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন ফিরহাদ হাকিম।

কথায় আছে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। এতক্ষণ যেখানে তৃণমূলের বড় বড় নেতারা এই সমস্ত কথা বলছেন, তখন কেনই বা বাদ থাকবেন চুনোপুঁটিরা। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক হুঁশিয়ারি দেন – “যদি কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যায়, আমরা কিন্তু প্রত্যেকটা বিজেপিকে ধরে ধরে আগুন জ্বালিয়ে দেবো। আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“

হুমকি দিতে ছাড়েনি CPIM-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম৷ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে জিনা হারাম করে দেবো।“

এছাড়াও, মন্তব্য করেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অরূপ বিশ্বাসরা। এমনকি কোথাও কোথাও মানুষকে দেখা গিয়েছে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদে নামতে। যাদের কাছে কোনও উত্তর নেই তারা কেন প্রতিবাদ করছে। অনেকে জানেই না কেন হচ্ছে SIR।

কিন্তু প্রশ্ন হল, তৃণমূল কেন এত ভয় পাচ্ছে SIR নিয়ে?

এর পিছনে রয়েছে একটি সহজ অঙ্ক। এবার সেটাই তুলে ধরবো আপনাদের কাছে।

হিসাব বলছে,

২০২৫ সালের ইলেক্ট্রোরাল রোলে নাম রয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লক্ষ ভোটার।

যার মধ্যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সাথে ম্যাচ করেছে মাত্র ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ ভোটার।

অর্থাৎ, গত ২৩ বছরে বেড়েছে ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ভোটার, যা ২০০২ সালের তুলনায় প্রায় ৯১ শতাংশ অর্থাৎ দ্বিগুণের সমান।

কিছু কিছু জেলা, যেমন কলকাতা, মেদিনীপুর, মালদা, আলিপুরদুয়ারে আগের থেকে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। অতিরিক্ত এই সমস্ত ভোটার যদি রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়, পায়ের তলা মাটি সরে যাবে না তো তৃনমূলের?

আলিপুরদুয়ারে নতুন ভোটার বেড়েছে ৫৩.৭৩ শতাংশ,

উত্তর কলকাতায় বেড়েছে ৫৫.৩৫ শতাংশ,

মালদায় বেড়েছে ৫৪.৪৯ শতাংশ,

পুরুলিয়ায় বেড়েছে ৬১.২৯ শতাংশ, এবং

মেদিনীপুরে বেড়েছে ৬২.৯৪ শতাংশ।

উদ্বেগ আরও বাড়বে যখন আপনি জানবেন আরও একটি পরিসংখ্যান।

NITI AYOG-এর রিপোর্ট বলছে, আমাদের রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বার্ষিক ০.৫ শতাংশ।

২০০১ সালের আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮.০২ কোটি।

আর Census of India জানাচ্ছে, ২০২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯.৯৮ কোটি।

অর্থাৎ, জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২ কোটি, কিন্তু ভোটার সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। এই সহজ অঙ্কের ব্যাখ্যা একজন বাচ্চা ছেলেও দিতে পারবে, তাই না?

জানলে অবাক হবেন, ২০০২ সালে যে SIR হয়েছিল, তাতে প্রথম খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৯ লক্ষ ভোটারের নাম। আর সেই সময় SIR-এর পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়, এবং দাবি তুলেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন করা হোক। যুক্তি ছিল – তৃণমূল জোটের থেকে বামফ্রন্ট সরকার এগিয়ে মাত্র ৩৬ লক্ষ ভোটে। সুতরাং, ৬৯ লক্ষ ভোটার বাদ পড়লে নির্বাচনকেই অবৈধ ঘোষণা করা উচিত। শেষ পর্যন্ত ওই সময় ২৪ লক্ষ ভোটারকে চূড়ান্ত তালিকায় বাদ দেওয়া হয়। তাহলে এখন SIR-এর বিরোধিতা করার মতো দ্বিচারিতা কেন করছে তৃণমূল?

এবার আপনাদের জানাবো কেন তৃণমূল এত ভয় পাচ্ছে SIR-কে!

২০১১ থেকে পশ্চিমবঙ্গে টানা রাজত্ব করে আসছে তৃণমূল।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ২১৫টি সিট পেয়ে জয়লাভ করে তৃণমূল। আর বিজেপি পায় ৭৭টি আসন।

কিন্তু, সংখ্যার দিক থেকে, তৃণমূল পায় প্রায় ২ কোটি ৮৯ লক্ষ ভোট,

আর বিজেপি পায় প্রায় ২ কোটি ২৯ লক্ষ ভোট। অর্থাৎ ফারাক ছিল মাত্র সাড়ে ৬০ লক্ষ ভোটের

অন্যদিকে ECI জানাচ্ছে, ২০২১ সালের নির্বাচনে মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রায় ৭০টি আসনে তৃণমূল জিতেছে ৫% ভোট ব্যবধানের কমে

এবার যদি আমরা ধরে নিই যে বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় ৭০ লক্ষ নাম বাদ যাবে, তাহলে কিন্তু ভোটার তালিকা থেকে মুছে যাবে প্রায় ১০ শতাংশ ভোট। যার ফলে ভোটের অঙ্কে দেখা যাবে এক বড় পরিবর্তন। ফলে বদলে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের খেলা।

SIR শুরু হতেই এক এক করে চারিদিকে ধরা পড়ছে বহু অনুপ্রবেশকারীদের নাম। বিহারে SIR লাগু হওয়ার পর থেকেই, ভয় পেয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকার বহু মানুষজন। গত ১লা জুন থেকে ৭ই আগস্ট পর্যন্ত ১০.০৪ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে।

এই আবেদনপত্রের মধ্যে মাত্র ৬.০৫ লাখ আবেদনপত্র গৃহীত হয়েছে।

বাকি ৪০.২৩ শতাংশ আবেদনপত্র ভুয়ো নথিপত্র থাকায় বাতিল করা হয়।

যার মধ্যে সবথেকে বেশি বাতিল করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুরের মতো বিভিন্ন এলাকা থেকে। অর্থাৎ এই সমস্ত এলাকা থেকে কেন এত ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছে সেটাও কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না আপনাদের কাছে।

মুর্শিদাবাদে বাতিল করা হয় ৫৬.৪৪ শতাংশ,

মালদায় বাতিল করা হয় ৪১.২৫ শতাংশ,

উত্তর দিনাজপুরে বাতিল করা হয় ৪৪.৮১ শতাংশ,

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাতিল করা হয় ৪৪.৬৮ শতাংশ,

কোচবিহারে বাতিল করা হয় ৪৪.৮৩ শতাংশ।

বাংলায় SIR ঘোষণার পরেই প্রকাশ্যে আসে দুই রাজ্যে ভোটার তালিকায় প্রশান্ত কিশোরের নাম। অর্থাৎ, বিহার এবং বাংলা – দুই রাজ্যেরই ভোটার প্রশান্ত কিশোর। বাংলায় যার ঠিকানা ভবানীপুরের ১২১ কালীঘাট রোডে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। অর্থাৎ SIR হলে এরম কত নাম যে উঠে আসবে তা আমার আপনার ধারণার বাইরে।

অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, সঠিকভাবে বাংলায় SIR সম্পন্ন হলে তা বড়সড় ভাঁটা ফেলবে তৃণমূলের ভোটে। যা নিশ্চিতরূপে প্রভাব ফেলবে ২৬-এর বিধানসভা ভোটে। তাই, আশঙ্কা করা হচ্ছে যদি SIR-এ ৭০-৮০ লক্ষ ভোটার গায়েব হয়ে যায়, তাহলে বাংলায় হিংসা কিংবা দাঙ্গা হওয়ার চান্স বেড়ে যাবে অনেকটাই! আর সেটা রুখতে গেলে হয়তো রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া আর কোনও বিকল্প হাতে থাকবে না কেন্দ্র সরকারের কাছে!

আপনার কী মনে হয় এখনই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োজন? জানাতে ভুলবেন না নিজের মতামত!

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join