India Hood Decode: ‘হিন্দু নিধনযজ্ঞ’- কেন শুরু হয়েছিল গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস?

Published on:

Updated on:

The Great Calcutta Killings

কলকাতায় একের পর এক হিন্দুদের করা হচ্ছে জবাই! বেআব্রু করে ধর্ষণ করা হচ্ছে হিন্দু মা-বোনেদের। ধর্ষিত মেয়েদের নগ্ন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাস্তায়। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি, লুট করা হচ্ছে দোকানপাট। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পুলিশ ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী! পিছন থেকে সমর্থন করছেন জ্যোতি বসু সহ অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতারা!

আর এই সমস্ত ঘটনার ওপর তৈরি ‘দ্যা বেঙ্গল ফাইলস’ ছবির প্রচার আঁটকে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বুকে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বক্তব্য – সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ বিষিয়ে তুলতে চাইছে এই ছবি।

কিন্তু, সত্যিই কি সাম্প্রদায়িক উস্কানি? নাকি কোনও এক সম্প্রদায়ের অন্ধকার অধ্যায় – দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস (The Great Calcutta Killings)? কীভাবে প্ল্যান করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার-হাজার হিন্দুদের? কীভাবে রক্ষাকর্তা হিসাবে উঠে এসেছিলেন গোপাল পাঁঠা? আজ এক এক করে আমরা আলোচনা করবো সমস্ত তথ্য।

আসলে কী এই ক্যালকাটা কিলিংস?

সালটা ১৯৪০, মুসলিমদের জন্য এক নতুন দেশ তৈরির ডাক দেন মহম্মদ আলী জিন্নাহ। করা হয় ভারত ভেঙে পাকিস্তান তৈরির পরিকল্পনা। কিন্তু, বার বার প্রত্যাখ্যান হতে থাকে সেই দাবী।

ইন্ডিয়াহুডের বিশেষ প্রতিবেদন

এরপর মরিয়া হয়ে ওঠেন জিন্নাহ। আলাদা মুসলিম দেশ তৈরির জন্য অহিংসা আন্দোলনের ডাক দেন তিনি। ঠিক ১৯৪৬ সালের ২৮শে জুলাই, তিনি সরাসরি প্রথমবার ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ঘোষণা করেন। ঠিক করা হয় ১৬ই আগস্ট দিনটিকে। আর এই দিনেই কলকাতায় শুরু হয় মুসলিমদের “ডাইরেক্ট অ্যাকশন”। কোথাও চলতে থাকে স্ট্রাইক, কোথাও চলতে থাকে অবরোধ, আবার কোথাও বা চলতে থাকে খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ। আর এটি ইতিহাসের পাতায় আজ দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস নামে পরিচিত।

কেন কলকাতায় হল ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে?

কিন্তু, ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-র জন্য কলকাতাকেই বেছে নেওয়া হল কেন? এর পিছনে রয়েছে এক বড় রহস্য। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯৪৬ সালে কিছু কিছু জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় প্রাদেশিক নির্বাচন। যার মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে মুসলিম লীগ। কলকাতার ২৫০টি সিটের মধ্যে ১১৫টি আসনে জয়লাভ করে মুসলিম লীগ। আর পশ্চিমবঙ্গের “প্রাইম মিনিস্টার” নির্বাচিত হন হুসেন সাহিদ সুরাবর্দি

স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা, যেখানে অবস্থিত ছিল দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অফিস। এছাড়াও কলকাতা ছিল সারা ভারতের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক গতিবিধির এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এমনকি ১৯ শতকে ভারতের নবজাগরণ এবং পুনর্গঠন শুরু হয় এখান থেকেই। দেশের বিচার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি সুপ্রিম কোর্টও ছিল এখানেই। একদিকে, কলকাতায় বড় বড় শিল্পের পাশাপাশি অবস্থিত ছিল মিলিটারি বেস, সরকারি অফিস এবং বেশ কিছু জনপ্রিয় শিক্ষাঙ্গন। অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাগুলিতে তেমন কোন বড় শিল্প যেমন ছিল না, আর অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল মূলত কৃষি নির্ভর। তাই উদ্দেশ্য ছিল কলকাতাকে নিয়েই পাকিস্তান গঠন করার।

কেন ১৬ই আগস্ট দিনটিকে ধার্য করা হল কেন?

কিন্তু, কেন ঠিক করা হল ১৬ই আগস্টকে? রমজান মাসের ১৭ তারিখ, হজরত মহম্মদ এবং তাঁর ৩৩১ জন যোদ্ধা বদরের যুদ্ধে কুরেইশ জাতির ওপর আক্রমণ করে, এবং যুদ্ধ জিতে তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয় ইসলাম ধর্ম।

ঘটনা ক্রমে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট ছিল হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান মাসের সেই ১৭তম দিন। তাই এই দিনটাকেই মুসলীম লীগ বেছে নেয় ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে হিসাবে।

ঘটনা

এবার আসি, কীভাবে সুপরিকল্পিত উপায়ে প্ল্যান করা হয়েছিল “কলকাতাকে হিন্দু শূন্য করে তোলার।“ ১৯৪৬ সালের ১৩ই আগস্ট, মুসলিম মনোভাবকে আরও উস্কে দেওয়ার তাগিদে, মুসলিম লীগের তরফ থেকে একটি ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণায় বলা হয়, “সমস্ত মুসলিম ভাইদের মনে রাখতে হবে, রমজান মাসেই আল্লাহ জিহাদের অনুমতি দিয়েছিল। রমজানেই মুহম্মদ বদরের লড়াই জিতেছিল, মক্কায় জয়লাভ করেছিল। মুসলিম লীগের সৌভাগ্য যে এই পবিত্র মাসে আমরা এই কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি!”

শুধু তাই নয়, ওই ঘোষণায় আক্রমণের পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবং এই ধরনের লিফলেট তখন প্রতিনিয়ত মুসলিম লীগের তরফ থেকে কলকাতায় বসবাসরত মুসলিমদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন মুসলিম লীগের প্রকাশনায় মুসলিমদের বোঝানো হয়েছিল, যে জিহাদের জন্য তারা খোলাখুলিভাবে হিন্দুদের মারা শুরু করুক। আর, কলকাতাকে পাকিস্তান বানিয়ে দিক। এই হিংসার আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছিলেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র, সৈয়দ মুহম্মদ উসমান। যিনি বলেছিলেন, “কাফের! তোদের ধ্বংসের আর দেরী নেই! সার্বিক হত্যাকাণ্ড ঘটবেই।“

এই উদ্দেশ্যে সফল করতে এক বিরাট প্ল্যানিং করা হয়। কলকাতার ২৪টি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মধ্যে ২২টির দায়িত্ব দেওয়া হয় মুসলিম পুলিশ কমিশনারদের ওপর। পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশও সমস্ত মুসলিমদের সাথে আছে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম দোকানগুলোতে পাকিস্তান লিখে চিহ্নিত করা হয়, যাতে ভুল করে কোন মুসলিম দোকান লুট বা অ্যাটাক না হয়ে যায়।

এরপর ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট, শুক্রবার, কলকাতার বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজের পর উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা সফল করার উদ্দেশ্যে, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী সুরাবর্দি, ওই দিন ছুটির ঘোষণা করেন, এবং শহীদ মিনার থেকে সমস্ত হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করার ডাক দেন।

এরপর ১৬ই ও ১৭ই আগস্ট সারা কলকাতা জুড়ে চলতে থাকে দাঙ্গা। একের পর এক পড়তে থাকে হাজার হাজার হিন্দুদের লাশ, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হিন্দুদের বাড়ি, লুঠ হতে থাকে হিন্দুদের দোকানপাট। এক এক করে ধর্ষণে করে খুন করা হয় হিন্দু মেয়েদের। এমনকি ওই ধর্ষিত মেয়েদের নগ্ন করে তাদের বক্ষদেশ কেটে, বাঁশে চুল বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। হিন্দুদের দাবিয়ে রাখতে কলকাতার অলিগলি থেকে শুরু করে দাঙ্গা চালানো হয় স্কুল-কলেজেও। হুগলীর জলে ভাসতে থাকে মৃতদেহ।

ফ্রিডম অফ মিডনাইট বই অনুযায়ী, নির্মম হত্যাকাণ্ড শেষে লাশের স্তূপে পরিণত হয়েছিল কলকাতা। ১৬ই আগস্ট থেকে ১৯শে আগস্ট পর্যন্ত চলা ওই হত্যাকাণ্ডে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৬,০০০ লোক। কোন কোন রিপোর্টে এই সংখ্যা প্রায় ১২,০০০। এছাড়াও অনেক দেহ গঙ্গা, নালা, খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৫,০০০ এরও বেশি মানুষ ঘায়েল হয়েছিলেন ওই সময়ে।

কমিউনিস্ট মদত

শুনলে অবাক হবেন, এই ঘটনার জন্য মুসলিম লীগ যতটা দায়ী ততটা দায়ী কমিউনিস্ট পার্টি এবং তার তৎকালীন যুব নেতা জ্যোতি বসু, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলরা। কারণ, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তারা দুজনেই সমানভাবে দায়ী।

  • ১৬ই আগস্ট যে বনধ ঘোষণা করা হয় সারা বাংলায়, একমাত্র হিন্দু মহাসভা ছাড়া এটির প্রতিবাদ আর কেউ করেনি, উল্টে কমিউনিস্ট পার্টি একরকমভাবে এই বনধকে সমর্থন করে!
  • এই সময়কালে জ্যোতি বসু সহ বাংলার একাধিক কমিউনিস্ট নেতা হিন্দু-বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন।
  • এমনকি ১৬ই আগস্ট, জ্যোতি বসু, আরও দুই সিপিআই বিধায়কের সাথে মুসলিম লীগের সভায় এবং সুরাবর্দীর সাথে মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছিলেন, যেখানে হিন্দু বিরোধী বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল এবং দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল।
  • এই হত্যাকাণ্ডের আগে জ্যোতি বসু একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে ঘোষণা করেছিলেন যে, সিপিআই মুসলিম এলাকার ধর্মঘটকে সমর্থন করবে এবং যে সমস্ত হিন্দুরা এই ধর্মঘট মানবে না তাদের বিরোধিতা করবে। হিন্দুদের ক্ষতি করার বা দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য না থাকলে তিনি কেন এমন অবস্থান নেবেন? আর এই তথ্যগুলি আমরা বলছি না। এই সমস্ত তথ্যই রয়েছে শান্তনু সিংহের নোয়াখালী মনোগ্রাফ বইয়ে।
  • মুসলিম লীগের সম্পাদক এবং সুরাবর্দীর উত্থানের পেছনে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, হাশিম। যিনি নিজের স্মৃতিকথা “লেট আস গো টু দ্য ওয়ার”-এ উল্লেখ করেছেন যে ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে নিখিল চক্রবর্তী নামের একজন তরুণ কমিউনিস্ট অনেক সাহায্য করেছিলেন।
  • ‘ব্রাদার্স অ্যাগেনস্ট দ্যা রাজ’ বইতে এই সময়ে কমিউনিস্ট নেতাদের একাধিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে।
  • তবে, লালমোহন সেন নামের একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী ছিলেন, যিনি হিন্দুদের উপর আক্রমণকারী মুসলিম জনতাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন।

গোপাল পাঁঠা

এই ঘটনায় হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসাবে উঠে আসেন গোপাল পাঁঠা, তথা গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তাঁর জন্ম এক বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি বাস করতেন বৌবাজারের মলঙ্গা লেনে। পারিবারিক খাসির মাংসের দোকান চালানোর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন কুস্তিগীরও। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অনুসারী গোপাল ছিলেন ভারত জাতীয় বাহিনীর এক সদস্য, এবং জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে। ব্যবসার খাতিরে তাঁর একাধিক মুসলিম ক্রেতা ছিল, মুসলিমদের প্রতি তাঁর কোন ঘৃণা ছিল না।

কিন্তু সেইদিন নিরাপরাধ হিন্দু পুরুষ ও মহিলাদের ওপর নির্মম অত্যাচার দেখে তিনি চুপ থাকতে পারেননি। মুসলিমদের প্রতিহত করতে, তিনি হিন্দু সমাজকে জেগে ওঠার ডাক দেন। পাশাপাশি ভারত জাতীয় বাহিনীর সদস্য ও এলাকার সমস্ত হিন্দু যুবকদের একত্রিত করেন। তাঁর তৈরি সেই দলে শুধু বাঙালি হিন্দুরাই নয়, ছিল ওড়িয়া, নেপালি, পাঞ্জাবি, ও বিহারীরাও।

কিন্তু, এই লড়াইয়ে গোপাল মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু নিয়ম তৈরি করছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “অস্ত্রহীন মুসলমানকে হত্যা করবে না। উল্টে যদি সে নিরাপত্তা চায় তাকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।মুসলমান পশু”দের মত কোন মহিলা বা শিশুর গায়ে হাত দেবে না। কিন্তু অস্ত্রধারী মুসলমানকে ছাড়বেনা এবং একজন হিন্দু খুন হতে দেখলে ১০ জন মুসলমানকে খুন করবে।“

ঐতিহাসিক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “ওই সময়ে হিন্দু যুবকরা কোনও মুসলিম বৃদ্ধ, দুর্বল, বাচ্চা ও মহিলাদের কোনও ক্ষতি করেনি।“ তিনি আরও জানান, “গোপাল কোনোদিনই সাম্প্রদায়িক ছিল না। তবে, মুসলিম উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই লড়াই ছিল। পাশাপাশি তিনি বেঘর হওয়া উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে থাকার জন্য আশ্রয় এবং খাবার দিয়েছিলেন। তাদের ধর্মান্তর হওয়া থেকেও রক্ষা করেছিলেন।“

তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তা এসকে ভট্টাচার্য, গোপাল সম্পর্কে মন্তব্য করে জানান, “তিনি খুব সাহসী ছিলেন। তাঁকে দেখতে ভদ্রলোকের মতো হলেও, তিনি আদতে একজন অপরাধী ছিলেন। তবে তিনি গরীবদের সাহায্য করতে সর্বদা এগিয়ে আসতেন, এবং ওই দাঙ্গার সময়ে অনেক হিন্দুদের বাঁচিয়েছিলেন।“

১৯৯৭ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তিনি ওই দাঙ্গার বিষয়ে জানিয়েছিলেন, “আমি সেই সময়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি এবং মিলে গিয়ে কারোর থেকে ১০০০, আবার কারোর থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করেছিলাম। তারপর আমি ঘোষণা করেছিলাম, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে আমি তাঁকে ১০ টাকা দেবো, এবং যদি কেউ কাউকে আধমরা করে, তাঁকে ৫টাকা দেবো। এইভাবে আমরা বিদ্রোহ শুরু করেছিলাম।“

গোপাল ছাড়াও এই লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন যুগল চন্দ্র ঘোষ, এবং বসন্ত করের মতো ব্যাক্তিত্বরা। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৬ ও ১৭ই আগস্ট, যত হিন্দুদের মারা হয়েছিল তাঁর পরবর্তী ১০ দিন আরও বেশি মুসলিম মারা হয়েছিল।

এর তিন মাস পর, গান্ধীজী সারা কলকাতা ভ্রমণ করেন এবং অত্যাচারিত জায়গা ও নিপীড়িত মানুষদের সাথে দেখা করেন। এছাড়াও, তিনি গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্য্যায়কে হাতিয়ার ত্যাগ করার আমন্ত্রণ জানান, যা গোপাল প্রত্যাখ্যান করেন, এবং জানিয়ে দেন, “যে ছুরি, বন্দুক দিয়ে আমি আমার মা-বোন-ভাইদের রক্ষা করেছি, এই সমস্ত কোন হাতিয়ার আমি ত্যাগ করবো না।“ উল্টে তিনি গান্ধিজিকে জিজ্ঞাসা করেন, “১৬ আর ১৭ই আগস্ট আপনি কোথায় ছিলেন, যখন হিন্দুদের মারা হচ্ছিল?”

এর কয়েকদিন পরে ফের নোয়াখালিতে হিন্দু নিধন করে মুসলিমরা।

তবে, একাধিক সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপাল পাঁঠা হিসাবে ভাইরাল করা হচ্ছে গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে। অনেকের দাবী, যেহেতু তিনি কসাই ছিলেন এবং খাসীর মাংসের দোকান চালাতেন, তাই তাঁকে গোপাল পাঁঠা নাম দেওয়া হয়। কারণ বাংলায় ছাগল বা খাসীকে পাঁঠা বলা হয়। অন্যদিকে, একদল বলে তিনি পাঁঠার মত মুসলিম জবাই করেছিলেন বলে তাঁর নাম গোপাল পাঁঠা।

কিন্তু গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি এই সমস্ত ধারণা খণ্ডন করে জানিয়েছেন, আসলে তাঁর ডাকনাম ছিল গোপাল পাঠঠা। তাঁর বুকের পাটা, সাহস বোঝাতে তাঁকে ওই নাম দেওয়া হয়েছিল।

এরকম এক নয়, এক হাজার ঘটনা প্রবাহ রয়েছে! শোষিত কারা? নিজের কাছের লোক জিন্নাহকে সামলাতে না পেরে গোপালকে হাতিয়ার ত্যাগ করতে কেন বলেছিলেন গান্ধী? তৎকালীন সময়ে গোপাল পাঁঠা যে কাজ করেছিলেন তা কি সঠিক? আসল কসাই কে ছিলেন? হিন্দুদের ত্রাতা গোপাল নাকি মুসলিম লীগের সুরাবর্দী? কমেন্টবক্সে জানাতে ভুলবেন না আপনার নিজের মতামত।

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥