India Hood Decode: যে ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে না বাংলার মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

Published:

West Bengal
Follow

যদি বলি ঘোর সংকটে বাংলা, বিশ্বাস করবেন? হয়তো বলবেন – না। কিন্তু, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে, যা সত্যি চিন্তার বিষয় প্রতিটি বাঙালির জন্য। যে ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও।

আজ আমরা চাকরি চুরি, রেশন চুরি কিংবা SSC স্ক্যাম নিয়ে কথা বলবো না। আজ আমরা কথা বলবো এমন কিছু ঘটনা নিয়ে যা বাংলার ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ফেলে দিতে চলেছে।

কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে চলছে রাজনীতি, তো কখনও চলছে হিংসা!

কখনও দুর্গা পুজো নিয়ে হচ্ছে হেলাফেলা, তো কখনও OBC নিয়ে চলছে ছেলেখেলা!

প্রাইমারি, হাইস্কুলের পর এবার দুর্নীতি ঢুকে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়েও!

আজ India Hood ডিকোডে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য, এমন কিছু সত্য, যা চিন্তায় ফেলবে আপনাকে!

প্রথমেই আসবো, ২০২৫-এর স্পেশাল দুর্গাপুজো নিয়ে! কিন্তু, কেন স্পেশাল?

এবারের দুর্গোৎসবের আগে মানুষ যেমন দেখেছে এক রাতের বৃষ্টিতে নাকানি-চোবানি খাওয়া কলকাতাকে! তেমনই দুর্গোৎসব দেখিয়েছে বেশ কিছু নতুন ঘটনা, যা এর আগে বাংলাতে হয়নি!

দিনটা মহালয়ার আগের দিন। হাতিবাগান সর্বজনীন মাতৃ মন্দিরের উদ্বোধন করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ বৃষ্টি আসে, ছাতা থাকা সত্ত্বেও তা নিলেন না তিনি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সাদা কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকলেন, তবে ভঙ্গিটা সহজাত ঘোমটা নেওয়ার স্টাইল নয়, হিজাবের স্টাইলে।

এখানেই শেষ নয়। এবার ঘটনাস্থল – পশ্চিমবঙ্গের সাগরের চকফুলডুবি এলাকার একটি বারোয়ারি দুর্গোৎসব কমিটি। কিন্তু, সাগরের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় ওই পুজো। কিন্তু, হঠাৎ করে পুজো বন্ধ? কারণটা কী? কমিটির সদস্যদের মতে, রাজনৈতিক চাপে বন্ধ হয়েছে পুজো। দোষ? পুজোর থিম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’।

এরপর মহাঅষ্টমীর দিন। যেখানে বিভিন্ন দূর্গা পুজোর মণ্ডপে সাধারণত দেখা যায় অঞ্জলীর সময়সূচি, সেখানেই মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার মহেশপুর পঞ্চায়েত এলাকার পূর্ব শিবতলায় দুর্গা পুজোর মণ্ডপে দেখা গেল এক বিচিত্র ঘটনা। পুজো মণ্ডপে অঞ্জলীর বদলে দেওয়া রয়েছে আজানের সময় সূচি। তবে, এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালেও, শাসক দল খুবই সুন্দরভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যুক্তি দিয়েছেন। তাই আমাদের প্রশ্ন, তবে কি আগামী ঈদের দিনেও দুর্গাপুজোর সময়সূচী দেখা যাবে মসজিদের গায়ে?

এখানেও থামবেন না। এরপর দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে দেখা গেল তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বর্তমান বিধায়ক মদন মিত্রকে গান গাইতে, কিন্তু, সমস্ত গান ছেড়ে, তিনি গেয়ে উঠলেন,  “আমার হৃদয়ে কাবা, চোখে মদিনা”, আর পাশে দাঁড়িয়ে গানের তালে তালে হাততালি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার প্রশ্ন, তবে কি আসন্ন ঈদের উৎসবে মা দুর্গা, বা কালির গান গাইবেন রাজ্যের মন্ত্রীরা? নাহলে এক তরফা সম্প্রীতির ডাক কাদের জন্য?

এবার আসি, কীভাবে বাংলায় চলছে OBC নিয়ে ছেলেখেলা!

সমাজের পিছিয়ে পড়া অথচ SC/ST নন, এমন ব্যাক্তিদের যোগ্য সুবিধা দেওয়ার পদক্ষেপ নেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। সেই উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের সংরক্ষণ ব্যবস্থা। রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ বরাদ্দ করা হয় ৭ শতাংশ। তবে, এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক কোনও ভাগ ছিল না। রাজ্যের বিভিন্ন হিন্দু ও মুসলিম জাতি-গোষ্ঠী সহ মোট ৬৬টি সম্প্রদায়কে OBC তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৫৫টি অ-মুসলিম জাতি-গোষ্ঠী এবং বাকী ১১টি মুসলিম জাতি-গোষ্ঠী।

এরপর ২০০৬ সালের দিকে, Ranganath Mishra Commission একটি রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্টে দেখা যায়, মুসলিম সমাজের অনেক অংশ অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে আছে। সেই ভিত্তিতে ২০১০ সালের দিকে সংখ্যালঘু, মূলত মুসলমান সমাজের পিছিয়ে পড়া ব্যাক্তিদের শিক্ষা এবং চাকরিতে সংরক্ষণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি আলাদা শ্রেণি তৈরি করা হয়। ওই শ্রেণির নাম দেওয়া হয় ‘ওবিসি-এ’। এক কথায় মূলত মুসলিমদের জন্যই ‘ওবিসি-এ’। আর অন্যদিকে আর একটি শ্রেণীর নাম দেওয়া হয়, ‘ওবিসি-বি’ অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে কিছুটা এগিয়ে থাকা শ্রেণি। এই বিভাজন প্রশাসনিকভাবে কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ থেকে।

এরপর ২০১২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার “West Bengal Backward Classes Act, 2012” পাস করার পর থেকেই তৈরি হয় বিতর্ক। রাজ্যের হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়, নিয়ম না মেনে, সংবিধানের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো OBC সার্টিফিকেট বিলি করেছে তৃণমূল সরকার।

ফলত, দীর্ঘ ১২ বছরের শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ২২শে মে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের পরে তৈরি হওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। আদালতের ওই নির্দেশের ফলে অকেজো হয়ে যায় প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট।

এরপর এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। ২০২৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সংরক্ষণ ধর্ম ভিত্তিক হতে পারে না। কিন্তু, মামলা চললেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেয় আরও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য আপনার!

২০২৫ সালে, OBC-তে যোগ করা হয় ৭৬টি নতুন সম্প্রদায়। যার মধ্যে ৬৬টি মুসলিম সম্প্রদায়। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়। কিন্তু, রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা মাত্র ২৭ শতাংশ। আর ২০২৫ সালের ৩রা জুন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে OBC-র সংরক্ষণ বাড়িয়ে করা হয় ৭ থেকে ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ শতাংশ ABC-A দের জন্য এবং ১০ শতাংশ OBC-B দের জন্য। আপনাদের মনে করিয়ে দিই, আগে কিন্তু এই সংরক্ষণ ধর্ম ভিত্তিক ছিল না। কিন্তু,, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ধর্মের ভিত্তিতে এই ভাগ হচ্ছে না, তাহলে পরিসংখ্যান কী মিথ্যে বলছে?

এবার আসি বাল্যবিবাহ নিয়ে!

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও বাল্যবিবাহের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। তাও, আবার রামমোহন, বিদ্যাসাগরের বাংলাতে। স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম অর্থাৎ SRS-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার এখন পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, যে রাজ্যে কন্যাশ্রীর, রুপশ্রীর মতো প্রকল্প রয়েছে, সেই রাজ্যে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে করা মেয়েদের হার ৬.৩%।

এবার আপনাদের জানাবো পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের পতন নিয়ে!

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। রিপোর্ট বলছে ২০১২-১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬৩৯৩টি সংস্থা নথিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু, ২০২২-২৩ সালে, সেই সংখ্যা ৭.৮ শতাংশে কমে ৫৮৯৯-তে নেমেছে। অর্থাৎ অন্যান্য রাজ্যে দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে স্টার্টআপ, ছোট-খাটো কোম্পানির পরিমাণ, সেখানে আমাদের রাজ্যে ঘটনাটা উল্টো।

তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়েছে ৬৬৮৮টি কোম্পানি। এর মধ্যে আবার ১১০টি কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত রয়েছে। আর এই কোম্পানিগুলির মধ্যে বেশিরভাগ সংস্থাই চলে গিয়েছে মহারাষ্ট্রে ১৩০৮টি, আর দিল্লিতে ১২৭৭টি। এছাড়াও, ছত্তিসগড়ে গিয়েছে ৫১১টি, গুজরাতে ৪২৩টি, এবং হরিয়ানায় ১৬৪টি কোম্পানি। অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কোম্পানি যে কেবল বন্ধ হচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য রাজ্যে!

তথ্য বলছে এবার রাজ্য ছেড়ে যাওয়া সংস্থার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কারণ, রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থা আনতে ২০০১-০২ অর্থবর্ষে বাম আমলে (‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনসেনটিভ স্কিম অ্যান্ড অবলিগেশন ইন দি নেচার অফ গ্র্যান্ট অ্যান্ড ইনসেনটিভ বিল’ স্ক্রিনে দেখাবে নামটা) একটি  ইনসেনটিভ স্কিমের  বিল আনা হয়। আর এই বিলের অধীনে রাজ্যে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন শিল্পকে দেওয়া হত আর্থিক সুবিধা। কিন্তু, তৃণমূল সরকার চলতি বছরের মার্চ মাসে ওই সমস্ত ইনসেনটিভ বাতিল করে দেয়। যার ফলে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোর্টে পিটিশন ফাইল করেছে একাধিক সংস্থা। তাঁদের দাবি, বহু প্রতিষ্ঠান এই হিসাব ধরেই রাজ্যে বিনিয়োগ করেছে। হঠাৎ করে এমন সুযোগ সুবিধা প্রত্যাহার করলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

এবার আসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে!

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, MAKAUT বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উঠে এসেছে প্রায় ৮৩৭ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ।

  • এর মধ্যে ৩৪২ কোটি টাকার কোনও হিসেব নেই।
  • ১২৮ কোটি টাকা খরচের কোনও শংসাপত্র জমা দেওয়া হয়নি।
  • ৯৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত ক্রয় করা হয়েছে।
  • ২১৪ কোটি টাকা কাজ শেষ না করেই অগ্রিম নেওয়া হয়েছে।
  • ৫৮ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ভুয়ো ও নকল ডকুমেন্টের মাধ্যমে।

অভিযোগ করা হয়েছে সরকারি তহবিল অপব্যবহারের। দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। এমনকি রাজ্যের করা অডিটে দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন, অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। টেন্ডার ছাড়াই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। বেআইনি ভাবে কর্মী নিয়োগের অভিযোগে দায়ের হয়েছিল মামলা। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বাবুন ব্যানার্জি প্রতি মাসে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ লাখ টাকা বেতন পান স্পোর্টস কন্সালটেন্ট হিসাবে।

সবশেষে আসি, উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ নিয়ে!

গত ৪ঠা অক্টোবর গুরুতর দুর্যোগের কবলে পড়ে উত্তরবঙ্গের বেশি কিছু জায়গা। ধ্বসে যায় রাস্তা-বাড়ি, এমনকি সেতুও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কারোর হাতে থাকে না, কিন্তু এটা নিয়েও যে রাজনীতি করা যায় সেটা দেখল সারা বাংলা। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গা যখন দুর্যোগের কবলে, তখন কলকাতায় কার্নিভালে ব্যস্ত ছিলেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। সেই জায়গায় যখন সেখানে পরিস্থিতির পরিদর্শনে যান বিরোধী দলের দুই নেতা, যাদের মধ্যে একজন আবার MLA, তাদের উপর করা হল নির্মম হামলা। আর জানা গিয়েছে সেই হামলা করেছে তৃণমূলের লোকজন। আর এই নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও রাজনীতি শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি বলেন, রাজ্যের এই বন্যা পরিস্থিতি নাকি “ম্যান মেড”। তাই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটা আপনারাই বিচার করুন।

অর্থাৎ, আজ আমরা আপনাদের সামনে যে তথ্যগুলি তুলে ধরলাম সেগুলি বাংলার মেইন স্ট্রিম মিডিয়া থেকে প্রায় গায়েব হয়ে গিয়েছে। যদি আপনাদের মনে হয় এই সমস্ত তথ্য সবার জানা উচিত, তবে অবশ্যই শেয়ার করুন।

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join