প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে লকডাউন ঘোষণার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-য় খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-র অন্তর্ভুক্ত ৮০ কোটি পরিবারের জন্য মাথা পিছু ৫ কেজি করে চাল বা গম ও পরিবার পিছু ১ কেজি করে ডাল বিনামূল্যে অতিরিক্ত রেশন দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। যদিও সেই বছর প্রথমে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসের জন্য ঘোষণা হলেও পরে ৩০ জুন জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নভেম্বর পর্যন্ত এই সুরাহা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। যার ফলে বেশ সুবিধা পাচ্ছিল জনগণ।
বিনামূল্যে রেশন নিয়ে এবার বড় প্রশ্ন তুলল শীর্ষ আদালত
কিন্তু মহামারী চলে গিয়েছে ৪ বছর হতে চলল, কিন্তু এখনও রেশন সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর লোকসভা ভোটের আগে, মোদী সরকার এই বিষয়টিকে তাদের প্রচারেও সামিল করেছিল। বলা হয়েছিল দেশের ৮১ কোটি জনগণকে বিনামূল্যে বা ভর্তুকি দেওয়া মূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সুবিধাপ্রদানকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছিল যে আসলে মুখেই জনগণ্ডের সাহায্য কিন্তু আদালতে এর পিছনে রয়েছে আরও এক কারণ। সেটি হল নির্বাচনে জয়লাভ। তবে এইসব ছাড়াও এবার এই বিনামূল্যে রেশন নিয়ে গত সোমবার অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর, বড় প্রশ্ন তুলল শীর্ষ আদালত।
সূত্রের খবর, এদিন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চে উঠেছিল ২০২০ সালে কোভিড মহামারি চলাকালীন পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও দুর্দশার বিষয়ক একটি মামলার শুনানি। সেই সময় এক NGO-র পক্ষে থেকে ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। আদালতে তিনি জানান, সরকারের ‘ই-শ্রম পোর্টালে’ নিবন্ধিত সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করা দরকার। আর তখনই পাল্টা আদালত জানতে চায়, কতজনকে এখনও কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে রেশন দেন।
কতদিন চলবে ফ্রি রেশন? প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি
এদিন আদালতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি জানান, ৮১ কোটি মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন। সংখ্যাটা শুনে অবাক হয়ে যান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি মনমোহন। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘তার মানে শুধুমাত্র করদাতারাই বাদ পড়েছেন। কতদিন ধরে এই ফ্রিবি দেওয়া সম্ভব? কেন আমরা এই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ, কর্মসংস্থান এবং সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছি না?’ জবাবে তুষার মেহতা জানান, কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই শীর্ষ আদালত আগের নির্দেশগুলি দিয়েছিল যে সকল পরিযায়ী শ্রমিক যাতে কেন্দ্রের দেওয়া বিনামূল্যের রেশন পেতে পারে, তার জন্য সকলের জন্য রেশন কার্ড দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পাল্টা উত্তর দেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। তিনি বলেন, ‘এটাই সমস্যা। যে মুহূর্তে আমরা রাজ্যগুলিকে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদেকর কর্মীদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার নির্দেশ দিই, আর কাউকে এখানে দেখা যায় না।’ তাই তিনি গতকাল জানিয়েছেন যে পরিযায়ী শ্রমিকদের মামলার একটি বিশদ শুনানির প্রয়োজন। তাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৮ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।