বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি 1 দশক পেরিয়েছে। তবে দেশবাসীর মনে আশ্বাস যুগিয়ে 2025 সালেও পূরণ হয়নি সেই দাবি। হ্যাঁ, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি আমজনতার পকেটে জোরালো কোপ বসিয়েছে। কোপ পড়েছ সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের পেটেও। পরিসংখ্যান বলছে নরেন্দ্র জামানায় একদিকে সীমানা ছাড়িয়েছে দারিদ্রতা, অন্যদিকে দেশের রাঘববোয়ালরা ক্রমশ ফুলেঁফেপে উঠেছেন।
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে গাড়ি-বাড়ি সবকিছুর দাম। তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা যাই হোক না কেন ভাটা পড়েনি টাকার কুবেরদের ঋণ মুকুবে। আর সেই সূত্র ধরেই দীর্ঘ 10 বছরেরও বেশি সময়ের বিজেপি রাজত্বে সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি প্রায় 14 লক্ষ কোটি টাকা খুইয়েছে। রাইট টু ইনফরমেশন বা তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের ভিত্তিতে এই তথ্য সামনে এনেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
বিরাট তথ্য সামনে আনল RBI
তথ্যের অধিকার আইন বা RTI অ্যাক্ট প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত-সমর্থ্য প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মী প্রফুল্ল পি সরদার। মূলত দেশের উচ্চবিত্তদের ঋণ মুকুবের অভিযোগ সামনে এনে তথ্যের অধিকার আইনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সহযোগে অভিযোগ দায়ের করেন এই নাগরিক আন্দোলন কর্মী। এবার সেইসব প্রশ্নের ভিত্তিতে আরটিআইয়ের জবাব জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুনঃ পেনশন মিলবে ১ লক্ষ! সরকারের NPS স্কিমে সামান্য বিনিয়োগেই অবসর জীবন হবে সুখকর
তথ্যের অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি জানিয়েছে, 2014 সালের 1 এপ্রিল থেকে 30 সেপ্টেম্বর, 2024 সাল পর্যন্ত গত 10 বছরে মোট 16 লক্ষ 61 হাজার 310 কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক গুলির খাতা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, 16 লক্ষ কোটিরও বেশি মূল্যের অনাদায়ী ঋণের মধ্যে মাত্র 2 লক্ষ 69 হাজার 795 কোটি টাকা উদ্ধার করা গেছে। এর অর্থ মোট অঙ্ক থেকে মাত্র 16 শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে ব্যাঙ্কগুলি। বাকি 13 লক্ষ 91 হাজার 512 কোটি টাকা এখনও অনাদায়ী হয়ে রয়েছে। এই বিরাট পরিমাণ অর্থ ফিরে পাওয়ার আশাও একপ্রকার হারাতে বসেছে আর্থিক সংস্থাগুলি।
এক নজরে দেখে নিন গোটা হিসেব..
রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট ব্যবহার করে পাওয়া তথ্য মারফত খবর, গত 10 বছরের বিজেপি জামানায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিই সবচেয়ে বেশি ঋণ রাইট অফ করেছে। জানা গিয়েছে, প্রায় 12 লক্ষ 8 হাজার 621 কোটি টাকা হিসেবের খাতা থেকে একেবারে মুছে ফেলা হয়েছে। সরকারি ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাঙ্ক গুলির কমপক্ষে 4 লক্ষ 46 হাজার 669 কোটি অনাদায়ী অর্থ এখন আর হিসেবের খাতায় নেই। সেই সাথে আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ প্রায় 6 হাজার 20 কোটি টাকা।
আরও পড়ুনঃ এবার অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিলবে ৫ লক্ষ, বড় ঘোষণা রাজ্য সরকারের
মুকুব হওয়া অর্থের বেশিরভাগই কর্পোরেট লোন
RBI-র তরফে প্রকাশ্যে আসা তথ্য অনুযায়ী, মুকুব হওয়া মোট অনাদায়ী অর্থের বেশিরভাগ অংশই কর্পোরেট লোন। পরিমাণটা এতটাই যে, সেই অর্থ দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলির বার্ষিক উন্নয়ন সম্ভব। সূত্র বলছে, চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী প্রত্যক্ষ কর বাবদ 16 লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয়, এর প্রায় সমপরিমাণ অর্থই গত দশ বছরের বিজেপি জামানায় খুইয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। বলা বাহুল্য, বিজেপি সরকার ছাড়াও ইউপিএ সরকারের শাসনকালে দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ছিল 2 লক্ষ কোটি টাকা।
কেন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ রাইট অফ করেছে ব্যাঙ্কগুলি?
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিবারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনাদায়ী ঋণের অর্থ হিসেবের খাতা থেকে মুছে ফেলেছে ব্যাঙ্কগুলি। কাজেই প্রশ্ন ওঠে, সরকার বারংবার বেহাত হওয়া অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া চালানোর প্রতিশ্রুতি সত্বেও কেন এই বিপুল পরিমাণ ঋণ রাইট অফ করল ব্যাঙ্কগুলি? হিসেব বলছে, মূলত একটি বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শিটে পারফর্মিং অ্যাসেট বা অনুৎপাদক সম্পদ কম দেখানোর জন্যই ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ রাইট অফ করেছে ব্যাঙ্ক।