প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর বাংলাদেশে কোটা প্রত্যাহারের আন্দোলনকে ঘিরে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যার জেরে বাধ্য হয়েই গত আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রীর গদি ছাড়তে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। এবং তৈরি হয়েছিল নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু তাতেও নানা জায়গায় বিক্ষোভ এবং আন্দোলন এর যত থেকেই গিয়েছিলাম তার উপর ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে জটিলতা কিছুতেই কাটছে না। গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিদ্যুৎ বিল করছে আদানি। বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে চাপও দিচ্ছে। এবার সেই বকেয়া না মেটানো বড় পদক্ষেপ নিল গৌতম আদানি।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে চিঠি!
ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের প্রতিনিধি ও যৌথ সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম.আর. কৃষ্ণ রাও এই বিষয়ে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০.০৩ মিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি দেয়নি। শুধু তাই নয় ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া এখনও পর্যন্ত মেটানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সময়মতো এলসি না দেওয়া এবং বকেয়া পরিমাণ পরিশোধ না করার ফলে পাওয়ার পচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় ‘মেটেরিয়াল ডিফল্ট’ ঘটেছে, যার ফলে আদানি পাওয়ারের সরবরাহ বজায় রাখতে বাঁধা পড়ছে।
সেই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের বকেয়া ও এলসির অভাবে সেখানকার কয়লা সরবরাহকারী এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রাক্টরদের জন্য কাজের মূলধন দেওয়া হচ্ছে না, ঋণদাতারাও আর সহায়তা করছে না। তাই আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এই ডিফল্টগুলো সমাধানের করতে হবে নইলে ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু গতকাল অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আদানির বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। তাই এবার আদানি এক বড় উদ্যোগ নিতে বাধ্য হল।
বকেয়া না মেটানোয় বন্ধ হল একটি পাওয়ার ইউনিট
জানা গিয়েছে এবার ঝাড়খণ্ডে গোড্ডায় অবস্থিত বাংলাদেশের দুটি পাওয়ার ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হল। এছাড়াও বাংলাদেশে ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেই ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেই ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত। যার ফলে বেশ মুশকিলে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষেরা।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্থানীয় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো, যেমন ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট এস আলম-সমর্থিত বানসখালী প্ল্যান্ট এবং ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগের রামপাল প্ল্যান্ট, বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ১০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের।