বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কথায় আছে, শিক্ষক আসলে ভগবানের রূপ। তাঁর ছত্রছায়ায় জীবনের আসল পথ দেখতে পান পড়ুয়ারা। কাজেই শিক্ষক স্বয়ং ভগবান হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের কাছে মন্দির! এমন ধ্যান ধারণা আজও রয়েছে বহু পড়ুয়ার মনে। কিন্তু সেই মন্দির অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি কোনও পড়ুয়ার মৃত্যুর কারন হয়ে ওঠে? তখন কি তাকে আর মন্দিরের মর্যাদা দেওয়া যায়? না-কি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মন্দিরে কর্মরত কর্মীদের ওই আসনে বসানো চলে?
কেন এমন প্রসঙ্গ? জানা যাচ্ছে, ফি দিতে দেরি হওয়ায় দেশের এক বেসরকারি স্কুলে নাবালককে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে পরবর্তীতে শিশুটির মা স্কুলে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে পৌঁছলে খুলে দেওয়া হয় বন্ধ দরজা। তবে দরজা খুলতেই সব শেষ! ক্লাসরুমে প্রবেশ করতেই ছেলের মরদেহ খুঁজে পান মা। এরপরই সন্তানহারা জন্মদাত্রীর আর্ত চিৎকার ও কান্নার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা স্কুল চত্বর। তারপর?
স্কুল ফি দিতে দেরি হওয়ায় নাবালকের প্রাণ নিল কর্তৃপক্ষ
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিহারের (Bihar) মনিপুরায় মুরলিগঞ্জ থানা এলাকার রামপুর পঞ্চায়েতের 13 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাকেশ কুমার। তাঁরই সন্তান আনন্দ কুমার। বয়স একেবারে সামান্য। ওই এলাকারই এক বেসরকারি স্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্র সে। জানা যায়, স্কুলেরই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল ছোট্ট আনন্দ। আর সেখানেই তাঁকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হল।
স্কুল ফি না দিতে পারায় নাকি প্রায়শই ছোট্ট আনন্দকে কথা শোনাতেন কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আনন্দর মৃত্যুর আগে দাদা উজ্জ্বল নাকি বাড়িতে জানিয়েছিল ভাইকে বেশ কয়েকদিন ধরে ক্লাসে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন আনন্দর মা।
শিশুটির মা জানিয়েছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওই বেসরকারি স্কুলটির ডিরেক্টর নাকি জানায়, আনন্দর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে প্রথমে বকেয়া ফি মেটাতে হবে। শুধু তাই নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে নাকি এও বলা হয়, বকেয়া টাকা না মেটালে নাকি ছেলের সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে না। এরপরই আনন্দর মাকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ফি জমা করতে বলে কর্তৃপক্ষ। এদিকে আনন্দকে স্কুলকক্ষে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে খবর।
সূত্র বলছে, পরবর্তীতে আনন্দর মা স্কুলে বকেয়া ফি নিয়ে পৌঁছলে খুলে দেয়া হয় বন্ধ কক্ষের দরজা। পরে ঘরে ঢুকতেই ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করেন গর্ভধারিনী। ছেলের মৃত্যুতে অঝরে কাঁদতে থাকেন তিনি। শুরু হয় আর্ত চিৎকার। তবে তা শুনেও নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেননি।
অবশ্যই পড়ুন: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেই অভিষেক চার ক্রিকেটারের! বিরাট কাণ্ড ঘটাতে চলেছে ভারত
স্কুল বন্ধ করে চম্পট দিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রথমদিকে শিশুটির মৃতদেহ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, হাসপাতাল থেকে পরবর্তীতে দেহটি বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকার কর্মকাণ্ড জানতেই ওই বেসরকারি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে স্থানীয়দের একাংশ জানিয়েছেন, স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর আগেই শিশু মৃত্যুর খবর পেতেই ওই বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।












