বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারতের উওর-পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের বিকল্প পথ ছিল বাংলাদেশ। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর ওদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। তাছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস সহ বাংলাদেশের অন্যান্য উচ্চপদস্থরা প্রতিবেশীকে উদ্দেশ্য বানিয়ে একাধিক কু মন্তব্য ছুঁড়েছে, এহেন আবহে শান্তিতে নোবেলজয়ী সহ বাকিদের শিক্ষা দিতে পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য বিকল্প পথের রূপরেখা এক প্রকার চূড়ান্ত করে ফেলল কেন্দ্র (Government Of India)। বলে রাখি, এই যোগাযোগের ভরকেন্দ্র হচ্ছে কলকাতা।
বিকল্প পথ খুঁজে নিল ভারত
হাসিনা জামানায় ট্রানজিট রুট নিয়ে সমঝোতার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের আলোচনা এগোলেও শেষ পর্যন্ত গতি থমকে গিয়েছে। আর সেই আবহে এবার সমুদ্র ও মায়ানমারের সড়ক পথ ব্যবহার করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ রক্ষার বিকল্প রূপরেখা, একপ্রকার ঠিক করে ফেলেছে ভারত। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের এক শীর্ষকর্তা নাকি এই প্রকল্পের কথা স্বীকার করেছেন।
ওই প্রতিবেদন মারফত খবর, NHIDCL-র ওই কর্তা জানান, মেঘালয়ের শিলং থেকে অসমের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র শিলচর পর্যন্ত কমপক্ষে 167 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফোর লেনের জাতীয় সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা যাচ্ছে, ওই প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সড়ক প্রকল্পের ওই রাস্তা খুব সম্ভবত মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি পাঁচগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছবে। আর এই গোটা প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবে NHIDCL।
এক নজরে গোটা পরিকল্পনা
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সিট্টে বন্দর পর্যন্ত এই বিকল্প পথের সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। জানা যায়, সিট্টে বন্দর হয়ে সোজা বঙ্গোপসাগর ছেড়ে মায়ানমারের কালাদান নদীপথে সে দেশের পালেটয়া পর্যন্ত যাবে জলপথ। এছাড়াও শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে। একইভাবে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পরিকল্পনা রয়েছে আগামী দিনে জোরিনপুই থেকে লুংলেই হয়ে সোজা আইজল পর্যন্ত সংযুক্ত হওয়ার।
কালাদান প্রকল্প নিয়ে রয়েছে সংশয়
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মায়ানমারের সঙ্গে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টটি আগামী 2030 সালের মধ্যে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছে। কেননা, বর্তমানে মায়ানমারে চলছে গৃহযুদ্ধের আবহ। সেদেশের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলছে বিরোধ। মনে করা হচ্ছে, দিল্লি যে রাখাইন প্রদেশের জল এবং স্থলপথ ব্যবহার করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, তার 80 শতাংশই বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে।
অবশ্যই পড়ুন: আমন্ত্রণ করেও ইউনূসকে চরম অপমান ফ্রান্সের! বড় সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ
এছাড়াও রোহিঙ্গা মুসলিমদের অনেকেই সেখানে রয়েছেন। ফলত সবমিলিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প পথ খুঁজতে চাইলেও গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত মায়ানমার নিয়ে বর্তমানে চিন্তায় রয়েছে কেন্দ্র। বলা বাহুল্য, গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় 22,864 কোটি টাকার কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও একপ্রকার চূড়ান্তও প্রকার চূড়ান্ত করে ফেরে ভারত সরকার।