কি এই সিমলা চুক্তি, যা ভাঙল পাকিস্তান! ক্ষতি হবে ভারতের?

Published on:

Simla Agreement, India-Pakistan, Indus Water Treaty, Pahalgam Terrorist Attack, Pakistan, Terrorists, India-Pakistan Agreement Cancelled, Jammu And Kashmir,

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কাশ্মীরের মাটিতে বেছে বেছে অমুসলিম বলা ভাল হিন্দু পর্যটকদের হত্যা করেছে পাকিস্তানের কুখ্যাত জঙ্গিরা। দুর্বৃত্তদের এমন হত্যা লীলার পর ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতবাসী। মঙ্গলবার পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই মতোই তড়িঘড়ি সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন তিনি। আর দিল্লির মাটিতে পা রেখেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথে প্রয়োজনীয় বৈঠক সেরে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল সহ 3 সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠক শেষে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত।

এদিন সন্ধ্যাকালীন বৈঠক শেষ করেই পাকিস্তানের সাথে ঐতিহ্যের সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল করে দেয় দিল্লি। সেই সাথেই পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বন্ধ থেকে দিল্লিতে পাক দূতাবাসে নিষেধাজ্ঞা ও 1 মে তারিখের মধ্যে সকল পাকিস্তানিকে ভারত ছাড়ার কড়া বার্তা দিয়েছেন মোদি। ভারতের এমন অ্যাকশনের পর কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের। এরই মাঝে শোনা যাচ্ছে নতুন খবর। অনেকেই বলছিলেন, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে মোদি সরকারের এমন পদক্ষেপের পরিপেক্ষিতে সিমলা চুক্তি(Simla Agreement) বাতিল করতে পারে পাকিস্তান। এবার সেই বক্তব্যেই পড়ে গেল সিলমোহর। স্থগিত হয়ে গেল ভারত-পাক সিমলা চুক্তি। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। সিংহভাগেরই জিজ্ঞাস্য, পাকিস্তান সিমলা চুক্তি ভাঙায় কতটা ক্ষতি হবে ভারতের? নাকি নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারল পাকিস্তান? উত্তর মিলবে আজকের প্রতিবেদনে।

সিমলা চুক্তি আসলে কী?

1972 সালের 2 জুলাই প্রথমবারের জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে একটি পারস্পারিক উন্নতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মূলত সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি পাকিস্তানের করাচিতে স্বাক্ষরিত হলেও এই সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলায়। ফলত, সেই কারণেই এই চুক্তির নাম সিমলা চুক্তি। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও জনগণের উন্নয়ন অর্থাৎ কল্যাণের জন্য কাজ করা।

এই চুক্তিতে মূলত উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রথমত, দুই দেশ জাতিসংঘের সনদের নীতি অনুসরণ করে চলবে। দ্বিতীয়ত, কোনও সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনও পক্ষই স্থিতবস্তা পরিবর্তন করবে না। ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখবে। তৃতীয়ত, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে দুই দেশই একে অপরের আঞ্চলিক অখন্ডতা, সর্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এছাড়াও, পুরনো দ্বন্দ্ব মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পাশাপাশি ঘৃণ্য বাক্য একে অপরের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যাবে না।

সিমলা চুক্তি ভাঙল পাকিস্তান

কার্গিল যুদ্ধ থেকে শুরু করে, 26/11 মুম্বই সন্ত্রাসী হামলা, সংসদে বিস্ফোরণ, উড়ির সামরিক ঘাঁটিতে হামলা, পুলওয়ামায় সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা ও শেষমেষ পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার মাধ্যমে বহু আগেই দুই দেশের মধ্যে হওয়া সিমলা চুক্তি ভঙ্গ করেছে পাকিস্তান, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের প্রায় সকলেই।

তবে শোনা যাচ্ছে, একেবারে বিনা কারণে 26 জন হিন্দু পর্যটককে গুলি করে হত্যা করার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বড় পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকারকে সিমলা চুক্তি বাতিল করার উপদেশ দিয়েছিলেন অনেকেই! আর এরপরই ভারতের একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পাকিস্তান সিমলা চুক্তি সহ 5 নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কূটনৈতিকদের অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানকে সিমলা চুক্তি বাতিলের পথে হাঁটতে যাঁরা এক প্রকার বাধ্য করেছেন তাঁরা মূলত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চাইছেন।

অবশ্যই পড়ুন: আতঙ্কে পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী, মিডিয়ায় কাঁদো কাঁদো সুর সাইফুল্লার! ভাইরাল ভিডিও

সিমলা চুক্তি ভাঙার পর কতটা ক্ষতি হবে ভারতের?

অভিজ্ঞ কূটনৈতিক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ মহলের অধিকাংশেরই দাবি, পাকিস্তান নানান জঙ্গি হামলার মাধ্যমে বহু আগে সিমলা চুক্তি ভেঙে ফেলেছে। তবে ভারতের সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিলের পাল্টা জবাব হিসেবে পাক সরকার সিমলা চুক্তি বাতিল/ স্থগিতের যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল, তাতে খুব একটা সমস্যা হবে না ভারতের! বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাকিস্তানের এমন সিদ্ধান্ত, নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারার সমান হতে পারে।

সঙ্গে থাকুন ➥