বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: রাশিয়ার তেল নিয়ে বরাবরই আপত্তি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সেই একই কারণে ভারতের উপর চেপেছে 50 শতাংশ শুল্ক। এহেন আবহে, রাশিয়ার তৈলবাহী জাহাজকে ফিরিয়ে দিল আদানি বন্দর। জানা যাচ্ছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মাঝে আদানি বন্দর (Indian Mundra Port) রুশ জাহাজটিকে ভিড়তে না দেওয়ায় এবার 10 লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল নিয়ে সেটি গতিপথ পরিবর্তন করেছে।
কেন রুশ তেলবাহী জাহাজটিকে ফিরিয়ে দিল আদানি বন্দর?
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজ নোবেল ওয়াকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে বড় কারণ রয়েছে। জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং ব্রিটেনের চোখে ঠিক নয় অর্থাৎ কালো তালিকাভুক্ত জাহাজগুলিকে নিজেদের বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদানি গ্রুপ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভারতে আদানির মোট 14টি বন্দরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
এমতাবস্থায়, গতকাল 10 লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল নিয়ে রাশিয়ার নোবেল ওয়াকার জাহাজটি ওই বন্দরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেটিকে অনুমতি দেওয়ার বদলে ফিরিয়ে দেয় আদানিরা। আপাতত যা খবর, প্রথম বন্দর থেকে প্রত্যাখ্যান পাওয়ার পর ওই জাহাজটি গতিপথ বদলে মুন্দ্রা বন্দরকে পাশ কাটিয়ে গুজরাতের ভাদিনা বন্দরের দিকে রওনা হয়েছিল।
বলা বাহুল্য, গৌতম আদানির মুন্দ্রা বন্দর এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম প্রধান তেল আমদানি কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন থেকে শুরু করে HPCL মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড নিয়মিতভাবে এই বন্দর থেকেই তেল আমদানি করে থাকে। যদিও গত সপ্তাহে আদানি গ্রুপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং ব্রিটেনের কাল তালিকাভুক্ত বেশ কিছু নিষিদ্ধ জাহাজকে দেশের 14টি বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বলে রাখি, রাশিয়ার নোবেল ওয়াকার নামক জাহাজটিও সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। তবে শুধু ওই এক জাহাজ নয়, আদানির সিদ্ধান্তের খপ্পরে পড়েছে স্পার্টান নামক আরেক নিষিদ্ধ সুয়েজম্যাস্ক ট্যাঙ্কারও।
অবশ্যই পড়ুন: ভারতীয় নৌসেনা পাবে ২০০-র বেশি মেক ইন ইন্ডিয়া যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন!
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে বহুবার গরমে গরমে ভারতকে বুঝিয়েছে, আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়া। কিন্তু তাতে মোম গলেনি। আমেরিকা সহ NATO দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার পরও অধিক ছাড়ে বন্ধু রাশিয়া থেকে তেল কিনে গিয়েছে ভারত। তাতে যেমন সরকারি অর্থ সাশ্রয় হয়েছে তেমনই চাঙ্গা হয়েছে অর্থনীতি। ঠিক সেই আবহে না পেরে ভারতের উপর দুই ধাপে 50 শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাতেও পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসেনি নয়া দিল্লি। আর এরপরই মঙ্গলবার আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসেছে ভারত। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে, আদানির বন্দর থেকে রুশ জাহাজ ফিরে চলে যাওয়া প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তকেও!