বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সম্প্রতি আই লাভ মহম্মদ (I Love Muhammad) আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশ! যোগীরাজ্য ছাড়াও তালিকায় নাম ওঠে উত্তরাখান্ড এবং তেলেঙ্গানারও। বিশেষত, উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, বরেলি, কৌশাম্বি, লখনউ, মহারাজগঞ্জ সহ তেলেঙ্গানার, হায়দারাবাদ ও উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে আন্দোলনে পা বাড়িয়েছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়েরভুক্ত মানুষজন।
জানা যায়, আন্দোলন চলাকালীন বেশ কিছু জায়গায় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি শুরু করেন তারা। যেই আন্দোলনের আঁচ গিয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। এবার তা নিয়েই মহারাষ্ট্রের আই লাভ মহম্মদ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন এক ব্যক্তি (Man Threatens Yogi Adityanath)।
হুমকি দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ
মানি কন্ট্রোলের রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বীডে অনুষ্ঠিত আই লাভ মহম্মদ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এক ব্যক্তি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নাম করেই জোরালো হুমকি দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, যোগী আদিত্যনাথের যদি সাহস থাকে তাহলে তিনি এখানে আসুক। আমি তাকে হত্যা করব!
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে সর্বসমক্ষে হত্যার হুমকি দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম আসফাক নিসার শেখ। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলা। তারই ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। জানা যায়, শুধু আসফাকই নন, মহারাষ্ট্রের বীডে আয়োজিত আই লাভ মহম্মদ অনুষ্ঠানের আয়োজক রফিক তাম্বোলির বিরুদ্ধেও দায়ের হয়েছে মামলা।
ঠিক কী ঘটেছিল?
গত 5 সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জানা যায়, এদিন যোগী রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন একটি ধর্মীয় মিছিলে আই লাভ মহম্মদ সাইনবোর্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তা জানতে পেরেই হিন্দুদের তরফে প্রতিবাদ জানানো হলে বেঁধে যায় দ্বন্দ্ব।
রিপোর্ট অনুযায়ী, কানপুরে আই লাভ মহম্মদ সাইনবোর্ড ঘিরে তৈরি হওয়া বিবাদে মধ্যস্থতা করতে আসলে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এরপরই দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কানপুর পুলিশের ডিসিপি দীনেশ ত্রিপাঠি জানিয়েছিলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ধর্মীয় মিছিল পুরনো নিয়ম মেনেই করতে হয়। সেখানে নতুন ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কিন্তু সেদিন ওই মিছিলের বেশ কয়েকজন যেখানে সাইনবোর্ড থাকে সেটিকে সেই স্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই নিয়েই তৈরি হয় বিরোধ।
ওই পুলিশকর্তার দাবি, আই লাভ মহম্মদ সাইনবোর্ড নিয়ে কোনও মামলা দায়ের হয়নি। শুধুমাত্র হিন্দু ও মুসলিম দুপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছে। একদিকে কানপুরের মুসলিম পক্ষ অভিযোগ করে, হিন্দু ধর্মালম্বীরা তাদের পোস্টার ছিড়ে দিয়েছে। একই দাবি তোলা হয় হিন্দুদের তরফেও। শেষ পর্যন্ত দুপক্ষের অভিযোগ শুনেই মীমাংসা করেছিল পুলিশ। পরবর্তীতে, 9 সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে 20 জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। জানা গিয়েছে, রাওয়াতপুর থানায় দায়ের করা ওই মামলায় 15 জন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতির নাম রয়েছে।
অবশ্যই পড়ুন: যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন শেহবাজ, বললেন, ‘আপনি শান্তিপ্রিয়!’
প্রসঙ্গত, কানপুর ও উন্নাওয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পর অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয় যোগীরাজ্যে। পরবর্তীতে উত্তর প্রদেশের মহারাজগঞ্জে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। যদিও সেই খবর পেতেই তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিবাদ মিছিল বের হওয়ার আগেই তা রুখে দেয় পুলিশ। একই সাথে আইন বিরোধী কাজ করার কারণে 60 জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সাথে গ্রেফতারও হয়েছেন বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত।