প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সালটা ছিল ২০২০। সেই সময় করোনা মহামারি এতটাই ভয়ংকর আকার ধারন করেছিল যে বিশ্বে কত লক্ষ কোটি মানুষ মারা গিয়েছে তা হিসেবের বাইরে। সেই সময় রাজ্যের একাধিক জেলায় বা অঞ্চলে কনটেনমেন্ট জোন করে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে এই রোগ ছড়ানোর প্রবণতা খানিক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। আর এবার এই আবহে ফের মণিপুরের এক গ্রামকে কনটেনমেন্ট জোন করে দেওয়া হয়েছে। তবে কারণটা কোভিড ১৯ নয়, রোগটি হল জলাতঙ্ক।
মারা গিয়েছে ৩ জন
সূত্রের খবর, গত সপ্তাহ থেকে জলাতঙ্ক রোগের (Rabies Outbreak) ঘটনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। একের পর এক ঘটনার খবরে ছেয়ে যাচ্ছে শিরোনাম। জানা গিয়েছে জলাতঙ্ক রোগের প্রাদূর্ভাবে মণিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলার নিউ জোভেং গ্রামকে কনটেনমেন্ট জোন বা নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৭৪৯ জনকে কুকুর কামড়েছে। তার মধ্যে সরকারের দেওয়া রিপোর্টে জানা যাচ্ছে সেই রোগে ৩ জন মারাও গিয়েছেন। তাই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানকার গৃহপালিত কুকুর বিক্রি এবং তাদের নিয়ে এদিক-ওদিক যাতায়াত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে কেউ যদি প্রশাসনিক নির্দেশ লঙ্ঘন করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আসলে জলাতঙ্ক রোগ হল ব়্যাবিস ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাল সংক্রমণ। যেটি কিনা প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ভাইরাসটি সাধারণত একটি সংক্রমিত প্রাণীর লালার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি কুকুর ছাড়াও বিড়ালের মতো উষ্ণ রক্তের প্রাণীর কামড় থেকেও ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্তকারীরা, জল দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। প্রচণ্ড ঝিমুনি আসে, কখনও খুব উত্তেজিত হয়ে যান রোগী। উপসর্গ প্রকট হওয়ার এক মাসের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়।
৩৬ শতাংশ মৃত্যু ভারতে
জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের নিয়ম অনুযায়ী, কুকুরে কামড়ালে প্রথমে ১৫ মিনিট সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানটি কলের জলে ধুতে হয়। কামড়ের মাত্রা বেশি হলে এবং রক্তপাত ঘটলে ক্ষতস্থানে সেরাম অর্থাৎ ইমিউনো গ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন দেওয়া উচিত। পাশাপাশি প্রতিষেধক নিতেই হয়। কখন শুধু প্রতিষেধকই যথেষ্ট এবং কখন সেরামও প্রয়োজন তা নির্ভর করবে চিকিৎসকের বিবেচনার উপর। প্রতিষেধকের কার্যকারিতা শুরু হতে দু’সপ্তাহের মতো সময় লাগে। প্রতি বছর, জলাতঙ্ক বিশ্বব্যাপী ৬০,০০০ এরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। সব থেকে ভয়ের বিষয়, এর মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ মৃত্যু শুধুমাত্র ভারতেই হয়।
আরও পড়ুনঃ ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিশপ্ত দিন ৭ এপ্রিল! আজই কেরিয়ার শেষ হয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার ২ মহারথীর
এদিকে সেখানকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধরুন কুমার চুরাচাঁদপুর জেলার নিউ জোভেং গ্রামে গৃহপালিত পোষা কুকুরের প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই গ্রামটিতে পৌঁছেছে পশুচিকিৎসা বিভাগের এক্সপার্ট টিম। সেখানে সমস্ত পোষা এবং রাস্তার কুকুরদের টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের তরফে চলছে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তবে এই এই নিয়ন্ত্রণের জন্য যত সংখ্যক আক্রান্ত বা যত কুকুরকে টিকা দেওয়া দরকার, তত টিকাই হাতে নেই , মনে করছে জেলা পশুচিকিৎসা দফতরের একাংশ। যা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন।