শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ সামনেই রয়েছে দুর্গাপুজো। কিন্তু এই দুর্গাপুজোর আবহে বাংলার মানুষের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে দেওয়ার কাজ করল কেন্দ্রের মোদী সরকার। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। আসলে বাংলা ভাষাকে এবার ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিলো কেন্দ্র। শুনে চমকে গেলেন তো? কিন্তু এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চলছিল, তবে অবশেষে ২০২৪ সালের দুর্গাপুজোর সময় এসে সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান ঘটলো। পুজোর অবহে কেন্দ্রের এহেন সিদ্ধান্তে বেজায় খুশি বাংলার সাধারণ মানুষ। কেউ হয়তো ভাবতেও পারেনি যে এই সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে অনুমোদন দেবে।
বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি
এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষ বাংলা ভাষাকে সবথেকে মিষ্টি ভাষা বলে গণ্য করেন। এরপর এখন এই ভাষার মুকুটে নয়া পালক জুড়ল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বড় তথ্য দেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি জানান, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার আরও পাঁচটি ভারতীয় ভাষাকে মর্যাদাপূর্ণ ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। নতুন স্বীকৃত ভাষাগুলি হল মারাঠি, বাংলা, পালি, প্রাকৃত এবং অসমীয়া। অর্থাৎ এই পাঁচ ভাষায় এবার ধ্রুপদী ভাষার তকমা পেল।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এদিকে কেন্দ্র সিদ্ধান্তে খুশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নিজেই টুইট করে সে কথা সকলকে জানিয়েছেন। মমতা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ভারত সরকার একটি ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। অনেকদিন ধরে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে এই সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ বিপুল তথ্য জমা দিয়ে দাবি করছিলাম যাতে বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। কেন্দ্রীয় সরকার আজ সন্ধ্যায় আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। অন্য কয়েকটি রাজ্যের ভাষা আগে এই স্বীকৃতি পেলেও বাংলাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। ভালো লাগছে, আমাদের লড়াইয়ে অবশেষে বাংলা ভাষা এই অভিপ্রেত এবং ন্যায্য স্বীকৃতি পেল।’
কোন কোন সুবিধা পেতে পাবে বাংলা ভাষা?
এখন আপনার মনেও কি প্রশ্ন জাগছে যে কোন কোন সুবিধা পেতে পারে বাংলা ভাষা? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই লেখাটির উপর। ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর ভারত সরকার “ধ্রুপদী ভাষা” হিসাবে ভাষার একটি নতুন বিভাগ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার অধীনে তামিলকে একটি ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংস্কৃতের জন্য তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হয়েছে। বাংলার ক্ষেত্রেও এ ধরনের পদক্ষেপের সুযোগ থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ অপেক্ষার অবসান! পুজোর আগেই ছাত্রছাত্রীদের ট্যাবের জন্য ১০ হাজার টাকা দেবে রাজ্য সরকার
আগে প্রথম ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিল তামিল। তামিল ভাষার গবেষণা এবং বিস্তারের জন্য Central institute of classical Tamil গঠন করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে প্রাচীন তামিল সাহিত্যের অনুবাদ, গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। বাংলার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ করা হতে পারে। এই স্বীকৃতির ফলে অনেকে কর্মসংস্থান এবং আর্থিক লাভের সুবিধাও পাবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।