সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: কাশ্মীর যেন আবার নতুন রূপ ফিরে পাচ্ছে! সন্ত্রাসের ছায়া কাটিয়ে এবার উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে এই উপত্যকা। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার কয়েক সপ্তাহ পর 26 জনের নিহতের রেশ কাটতে না কাটতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাশ্মীর সফর সেরকমই বার্তা দিল দেশবাসীকে।
আসলে এই সফরের মূল আকর্ষণ উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন। একটানা তিন দশকের অপক্ষার অবসান ঘটেছে। হ্যাঁ, সেই চ্যালেঞ্জিং এবং বিস্ময়কর রেল সংযোগ আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের অন্তর্গত চেনাব ব্রেলব্রিজ (Chenab Rail Bridge) এখনো বিশ্বের সবথেকে উঁচু রেলওয়ে ব্রিজ হিসেবেই দাড়িয়ে রয়েছে।
উন্নয়নের পাশাপাশি সন্ত্রাস বিরোধী বার্তা
প্রধানমন্ত্রীর এই কাশ্মীর সফর শুধুমাত্র উন্নয়নের জন্য নয়, বরং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা দিচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার পর দেশের 140 কোটি মানুষের সংহতি এবং ঐক্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবথেকে বড় শক্তি বলেই মন্তব্য করেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেই বার্তাকে এবার বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তিনি।
হ্যাঁ, উদ্বোধনের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর চেনাব রেল ব্রিজে পৌঁছন। জানিয়ে রাখি, রেইয়াসি জেলার কৌরি ও বাক্কালের মাঝখানে অবস্থিত এই ব্রিজটি প্রায় 359 মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আইফেল টাওয়ারের থেকেও এই ব্রিজটি প্রায় 35 মিটার বেশি উঁচু। আর এই ব্রিজ নির্মাণে খরচ হয়েছে 1486 কোটি টাকা। এমনকি এটি ভূমিকম্প, প্রবল হাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলানোর জন্যও প্রস্তুত।
চলছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
জানিয়ে রাখি, উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী চেনাব ব্রিজ থেকে ট্রেনে চড়ে কাটরাতে পৌঁছেছিলেন। আর সেখানে তিনি দুটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের শুভ উদ্বোধন করেন। একটি বারামুল্লা থেকে কাটরা এবং অপরটি কাটরা থেকে বারামুল্লা, যার পরিষেবা শুরু হবে আগামী 7 জুন থেকে এবং সপ্তাহে ছয় দিন চলবে বলে খবর।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মনে করছেন, এই দ্রুতগতির ট্রেন শুধুমাত্র যাত্রী পরিষেবা নয়, বরং কাশ্মীরের হস্তশিল্প ও পণ্য পরিবহনেও নয়া দিগন্ত খুলে দেবে। আর ইতিমধ্যেই চেরি রপ্তানির পরীক্ষামূলক চালানে সাফল্য এনেছে এই পরিষেবা।
তিন দশকের প্রকল্প আজ বাস্তবের পথে
জানিয়ে রাখি, এই প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল 1994 সালে। তবে প্রকৃত নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে 2002 সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে। দীর্ঘসূত্রতা কাটিয়ে কঠিন ভৌগোলিক পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জের কাজ থেমে গিয়েছে বহু বার। আজ পর্যন্ত 272 কিলোমিটার প্রকল্পের 209 কিলোমিটার অংশ চারটি ধাপে চালু হয়েছে বলে খবর।
- 2009 সালে কজিগুন্ড থেকে বারামুল্লা, 118 কিলোমিটার পর্যন্ত চালু হয়েছিল।
- 2013 সালে বনিহাল থেকে কজিগুন্ড, 18 কিলোমিটার পর্যন্ত চালু হয়েছিল।
- 2014 সালের উধমপুর থেকে কাটরা, 25 কিলোমিটার পর্যন্ত চালু হয়েছিল এবং
- 2024 সালে বনিহাল থেকে সঙ্গলদান, 48.1 কিলোমিটার চালু হয়েছে।
আর সবশেষে সঙ্গলদান থেকে রেইয়াসি, 46 কিলোমিটার পর্যন্ত 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ হয়।
আরও পড়ুনঃ কোনও বাংলাদেশী রেহাই পাবে না! অনুপ্রবেশ রুখতে বিরাট পদক্ষেপ লালবাজারের
থাকছে একাধিক সুরঙ্গ এবং চ্যালেঞ্জ
এই প্রকল্পের সবথেকে জটিল অংশটি ছিল কাটরা-বনিহাল অংশে। হ্যাঁ, 111 কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের প্রায় 87% অর্থাৎ 97.4 কিলোমিটারি ছিল সুরঙ্গ। আর এখানে রয়েছে 49টি ব্রিজ, যার মধ্যে চারটি প্রধান। সেগুলি হল – চেনাব, আঞ্জি, ব্রিজ 220 এবং ব্রিজ 224। আর দেশের সবথেকে বড় রেলসুড়ঙ্গটি T-50, যার দৈর্ঘ্য 12.77 কিলোমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখানে মোট 36টি সুরঙ্গ থাকছে, 943টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং 43,780 কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আর সবকটি সুরঙ্গ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী সিসিটিভি এবং ফায়ার সেফটি দিয়েই সাজানো হয়েছে বলে খবর।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |